ঘরে বানানো রসগোল্লা: একটি পুরোপুরি নির্দেশিকা

🎧 Listen in Audio
0:00

রসগোল্লা: ঐতিহ্যবাহী বাঙালি মিষ্টান্নের জীবন্ত উদাহরণ

ভারতে মিষ্টান্নের এক অনন্য গুরুত্ব রয়েছে, আর বাঙালি মিষ্টান্নের কথা বললে সবার আগে রসগোল্লার নামই উঠে আসে। রসগোল্লা হলো একটি নরম, স্পঞ্জি এবং রসালো মিষ্টান্ন যা ছেনা (ফেটানো দুধ) দিয়ে তৈরি হয় এবং হালকা চিনি-জলে ডুবিয়ে রাখা হয়। এই মিষ্টান্নটি বাংলা ও ওড়িশায় অত্যন্ত জনপ্রিয়, তবে আজকাল এটি সমগ্র ভারতেই পছন্দের। যদি আপনিও ঘরে বানিয়ে খেতে চান বিশুদ্ধ ও সুস্বাদু রসগোল্লা, তাহলে এই সহজ ও বিস্তারিত রেসিপিটি অবশ্যই অনুসরণ করুন।

রসগোল্লা বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী

ছেনা বানানোর জন্য:

  • ১ লিটার ফুল ক্রিম দুধ
  • ২ টেবিল চামচ লেবুর রস অথবা ভিনিগার
  • ১ কাপ ঠান্ডা পানি
  • ১টি পরিষ্কার মলমলের কাপড় অথবা সুতির কাপড়

চিনি-জল বানানোর জন্য:

  • ২ কাপ চিনি
  • ৪ কাপ পানি
  • ১/২ চা চামচ ইলাইচি গুঁড়ো
  • ২-৩টি কেসরের পাপড়ি (ঐচ্ছিক)

রসগোল্লা বানানোর প্রণালী

ছেনা (পনির) তৈরি করা

  1. একটি পুরু তলায় বড় পাত্রে দুধ মাঝারি আঁচে ফুটতে দিন।
  2. দুধ ফুটতে শুরু করলে ধীরে ধীরে লেবুর রস দিন এবং ক্রমাগত নাড়তে থাকুন।
  3. দুধ ফেটে পানি আলাদা হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন এবং ১ কাপ ঠান্ডা পানি দিন, যাতে ছেনা বেশি শক্ত না হয়।
  4. এবার ছেনা মলমলের কাপড়ে ছেঁকে নিন এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন, যাতে লেবুর টকটকে ভাব দূর হয়।
  5. কাপড়টি টেনে বেঁধে ছেনার সব পানি ঝেড়ে ফেলুন।
  6. এটি ৩০ মিনিট কোনো ভারী জিনিসের নিচে রেখে দিন যাতে বাকি পানি পুরোপুরি বেরিয়ে যায়।
  7. ছেনা একটি প্লেটে বের করে নরম ও মসৃণ হওয়া পর্যন্ত ৫-৭ মিনিট হাতে ভালো করে মেখে নিন।
  8. এবার ছেনার ছোট ছোট গোল গোল বল তৈরি করুন। খেয়াল রাখবেন বলগুলো পুরোপুরি মসৃণ ও ফাটা ছাড়া হতে হবে।
  9. সব রসগোল্লা তৈরি হয়ে গেলে একটি পরিষ্কার প্লেটে রেখে দিন।

চিনি-জল তৈরি করা রসগোল্লাগুলিকে পাকানো

  1. একটি বড় প্যানে ৪ কাপ পানি ও ২ কাপ চিনি দিয়ে মাঝারি আঁচে ফুটতে দিন।
  2. চিনি পুরোপুরি গলে গেলে তাতে ইলাইচি গুঁড়ো ও কেসর দিন।
  3. এবার তৈরি রসগোল্লাগুলো ধীরে ধীরে চিনি-জলে দিন এবং প্যানটি ঢেকে ১৫-২০ মিনিট মাঝারি আঁচে পাকতে দিন।
  4. এই সময় প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ঢাকনা সরিয়ে রসগোল্লাগুলো ধীরে ধীরে নাড়ুন, যাতে সেগুলো চিনি-জলে ভালোভাবে ফুলে উঠতে পারে।
  5. রসগোল্লাগুলো আকারে দ্বিগুণ হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিন এবং প্যানটি ঠান্ডা হতে দিন।

রসগোল্লাগুলিকে ঠান্ডা করা পরিবেশন করা

  1. রসগোল্লাগুলিকে ২-৩ ঘন্টা চিনি-জলে রেখে দিন, যাতে সেগুলো পুরোপুরি মিষ্টি ও রসালো হয়।
  2. এবার সেগুলো ফ্রিজে ঠান্ডা করুন এবং ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।
  3. চাইলে উপর থেকে অল্প পরিমাণে গোলাপজল ছিটিয়ে এবং কেসর দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।

রসগোল্লা বানানোর টিপস গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী

ছেনা ভালো করে মেখে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রসগোল্লা নরম ও স্পঞ্জি হয়।
 চিনি-জল হালকা ও যথেষ্ট পরিমাণে রাখতে হবে, যাতে রসগোল্লাগুলো পুরোপুরি ডুবে থাকে।
 পাকানোর সময় ঢাকনা দিলে বাষ্প তৈরি হয়, যার ফলে রসগোল্লাগুলো ভালোভাবে ফুলে ওঠে।
সবচেয়ে ভালো রসগোল্লা হলো সেটি যা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই গলে যায় এবং রসে ভরা থাকে।

রসগোল্লা শুধুমাত্র একটি মিষ্টান্ন নয়, বরং ভারতীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রতিটি বিশেষ অনুষ্ঠানে তৈরি হয় এবং এটি খাওয়া একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। যদি আপনি ঘরে বানিয়ে খেতে চান একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু ভারতীয় মিষ্টান্ন, তাহলে রসগোল্লা থেকে ভালো কিছু হতে পারে না।

তাহলে আর দেরি কিসের? এই রেসিপিটি চেষ্টা করে দেখুন এবং আপনার পরিবারের সাথে রসগোল্লার মিষ্টতার আনন্দ উপভোগ করুন!

Leave a comment