২০২৫ সালের কৈলাস মানসরোবর যাত্রা আবারও ভক্তদের জন্য আশা ও বিশ্বাসের নতুন আলো নিয়ে আসছে। করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সাল থেকে এই যাত্রা স্থগিত ছিল এবং গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ ছিল, কিন্তু ২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে এই যাত্রা পুনরায় শুরু হচ্ছে, যা ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
Kailash Mansarovar Yatra 2025: পাঁচ বছরের দীর্ঘ বিরতির পর আবারও কৈলাস মানসরোবর যাত্রা শুরু হতে চলেছে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে এই পবিত্র যাত্রা আরম্ভ হবে এবং ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এই যাত্রা কেবল ধর্মীয় নয়, বরং একটি গভীর আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা, যা প্রতি বছর হাজার হাজার শিবভক্ত ও সাধককে তার দিব্য আকর্ষণে আকর্ষিত করে। এইবার যাত্রা কিছু নতুন ব্যবস্থা, পরিবর্তিত রুট এবং বিশেষ প্রস্তুতির সাথে হবে।
কেন বিশেষ কৈলাস মানসরোবর যাত্রা?
কৈলাস পর্বতকে ভগবান শিবের বাসস্থান বলে মনে করা হয়। এই পর্বত তিব্বতে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র স্থানগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বাস করা হয় যে, স্বয়ং ভগবান শিব এখানে সাক্ষাৎ বাস করেন এবং মানসরোবর হ্রদের জল অমৃতের সমান। এই হ্রদে স্নান এবং পর্বতের প্রদক্ষিণ করলে জীবনের সকল পাপ ধ্বংস হয় এবং মোক্ষ লাভ হয়।
ইতিহাসে লিপিবদ্ধ ভক্তির ঐতিহ্য
- কৈলাস মানসরোবরের যাত্রা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং বোন ধর্মে অত্যন্ত ভক্তি ও আস্থার সাথে জড়িত।
- হিন্দু ধর্মে এটিকে শিবের বাসস্থান বলা হয়।
- বৌদ্ধ ধর্মে এটিকে মৈত্রেয় বুদ্ধ এবং ডেমচকের স্থান বলে মনে করা হয়।
- জৈন ধর্মে এটি প্রথম তীর্থঙ্কর ঋষভদেবের তপস্যালী ছিল।
- আর বোন ধর্মে এটি 'শ্রীপর্বত' হিসেবে পূজিত।
গত পাঁচ বছর ধরে কেন যাত্রা বন্ধ ছিল?
২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে এই যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। চীন কর্তৃক তিব্বত সীমান্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভারতেও নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে যাত্রা বন্ধ রাখার ফলে ভক্তদের পাঁচ বছর এই অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও এই যাত্রা আয়োজন করা হচ্ছে।
- এইবার কী আছে নতুন? - পরিবর্তিত রুট ও ব্যবস্থা
- এইবারের যাত্রায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো যাত্রার রুট।
- আগে এই যাত্রা কাঠগোদাম-আলমোড়া-ধারচুলা-লিপুলেখ পাসের পথ দিয়ে হতো, কিন্তু এখন এটি টনকপুর-চম্পাবত রুট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
- যাত্রার পরিচালনা: এই যাত্রার দায়িত্ব কুমাউ মণ্ডল উন্নয়ন নিগম (KMVN)-কে দেওয়া হয়েছে।
- শুরু: যাত্রার শুরু দিল্লি থেকে হবে, যেখানে যাত্রীদের মেডিকেল পরীক্ষা এবং পাসপোর্ট-যাচাই করা হবে।
- বাসস্থান ও সুযোগ-সুবিধা: পথে সুবিধাজনক বাসস্থান, স্বাস্থ্য সেবা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কীভাবে যাত্রা হয়?
- কৈলাস মানসরোবর যাত্রা শারীরিক ও মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। এতে প্রায় ১৫-২০ দিন সময় লাগে।
- যাত্রীরা লিপুলেখ পাস পার হয়ে তিব্বতে প্রবেশ করেন।
- এরপর মানসরোবর হ্রদের দর্শন এবং কৈলাস পর্বতের প্রদক্ষিণ করা হয়।
- যাত্রার বেশিরভাগ অংশ পাদযাত্রী বা খচ্চরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মধ্যে উৎসাহ
- এই যাত্রা কেবল ভারত নয়, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং আমেরিকা সহ অনেক দেশের ভক্তরা করেন। এদের সবার জন্য এটি একটি আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ।
- কৈলাস যাত্রা কেবলমাত্র একটি তীর্থ নয়, বরং আত্মচিন্তন ও ঈশ্বরের সাথে সাক্ষাতের পথ।
- বিশ্বাস করা হয় যে কৈলাস পর্বতের একটি প্রদক্ষিণ করলে ১০০ জন্মের পাপ ধ্বংস হয়।
- মানসরোবরে স্নান করলে পুণ্য লাভ এবং রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: যাত্রার আগে জেনে নিন
- পাসপোর্ট থাকা জরুরী, কারণ যাত্রা তিব্বত (চীন) হয়ে যায়।
- সুস্থ ও ফিট থাকা অপরিহার্য - বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগীদের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
- পূর্ব অনুমতি ও নিবন্ধন জরুরী। আবেদন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে করা যাবে।
- যাত্রাকালীন বিশেষ সতর্কতা: ঠান্ডা, অক্সিজেনের অভাব এবং উচ্চতা সম্পর্কিত সমস্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি জরুরি।
৩০ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হতে যাওয়া কৈলাস মানসরোবর যাত্রা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় যাত্রা নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথ। পাঁচ বছর পর আবার খোলা এই 'স্বর্গের পথে' অংশগ্রহণ করা তাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হবে যারা বছরের পর বছর ধরে এই দিনের অপেক্ষা করেছেন।