শীতের মৌসুম শুধুমাত্র গরম কাপড় নিয়ে আসে না, বরং শরীরকে উষ্ণ ও পুষ্ট রাখার জন্য বিশেষ খাবারেরও প্রয়োজন হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাজরা খিচুড়ি একটি এমন খাবার যা শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, স্বাস্থ্যকরও বটে। এটি বিশেষ করে উত্তর ভারতে জনপ্রিয় এবং গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত মানুষ এটি বেশ উৎসাহের সাথে খায়।
বাজরা, যাকে ইংরেজিতে Pearl Millet বলা হয়, আয়রন, ফাইবার এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে মুঙ ডাল হজমে হালকা এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ। যখন এই দুটিকে মিশিয়ে খিচুড়ি তৈরি করা হয়, তখন এটি শুধুমাত্র পুষ্টিকরই হয় না, বরং শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণও রাখে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ (২-৩ জনের জন্য)
- ১/২ কাপ বাজরা (Whole Bajra) – ৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখা
- ১/২ কাপ পীত মুঙ ডাল – ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করা
- ২ কাপ পানি – খিচুড়ি রান্নার জন্য
- লবণ – স্বাদমতো
- ১ টেবিল চামচ দেশি ঘি – স্বাদ ও পুষ্টির জন্য
- ১ চা চামচ জিরা
- ১/২ চা চামচ হিং
- ১/৪ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো
তৈরির সহজ পদ্ধতি
১. শস্য রান্না করা
প্রথমে একটি প্রেশার কুকার নিন। তাতে ভিজিয়ে রাখা বাজরা, মুঙ ডাল, লবণ এবং দুই কাপ পানি দিন। এবার ঢাকনা দিয়ে মাঝারি আঁচে ৪ সিটি আসা পর্যন্ত রান্না করুন। এতে বাজরা ও ডাল উভয়ই ভালোভাবে সিদ্ধ হবে। সিটি বের হয়ে গেলে কুকার ঠান্ডা হতে দিন এবং তারপর ঢাকনা খুলুন।
২. তেড়কা তৈরি করা
একটি গভীর নন-স্টিক প্যানে দেশি ঘি গরম করুন। তাতে প্রথমে জিরা দিন এবং জিরা ফোড়ন দেওয়ার পর হিং এবং হলুদ দিন। ১০-১৫ সেকেন্ড এই মিশ্রণটি হালকা ভেজে নিন যাতে মশলার সুগন্ধ ভালোভাবে বের হয়।
৩. খিচুড়িকে চূড়ান্ত আকার দেওয়া
এবার তেড়কায় রান্না করা বাজরা-ডালের মিশ্রণটি দিন। সবকিছু ভালো করে মিশিয়ে মাঝারি আঁচে ২-৩ মিনিট রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন যাতে খিচুড়ি তলায় লেগে না যায়। এই সময় প্রয়োজন অনুযায়ী একটু পানিও মেশাতে পারেন যদি আপনি একটু পাতলা খিচুড়ি পছন্দ করেন।
বাজরা খিচুড়ির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা
- পাচনে সহায়ক – বাজরা এবং মুঙ ডাল উভয়ই উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক – কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবারের কারণে এই খিচুড়ি ওজন কমাতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্যও আদর্শ।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক – বাজরা কম গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্সযুক্ত শস্য, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
- শরীরকে উষ্ণ রাখে – বিশেষ করে শীতকালে বাজরা শরীরে উষ্ণতা বজায় রাখে।
- হাড়ের জন্য উপকারী – বাজরায় ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে যা হাড়কে শক্তিশালী করে।
বিশেষ টিপস
- বাজরা রান্নার আগে ভালো করে ভিজিয়ে নেওয়া জরুরি যাতে তা দ্রুত এবং ভালোভাবে সিদ্ধ হয়।
- আপনি যদি বেশি স্বাদ চান, তাহলে তেড়কায় রসুন এবং আদার পেস্টও দিতে পারেন।
- গাজর, মটর বা বিনসের মতো সবজি মিশিয়ে এটিকে আরও পুষ্টিকর করা যায়।
বাজরা খিচুড়ি শুধুমাত্র একটি সাধারণ রেসিপি নয়, বরং ভারতীয় খাবারের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং পুষ্টিকর থালা। এটি শীতকালে শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ এবং শক্তিশালী করে। যখনই কিছু স্বাস্থ্যকর এবং হালকা খাওয়ার ইচ্ছা হয়, তখন এই খিচুড়িটি অবশ্যই চেষ্টা করুন। এর স্বাদ, স্বাস্থ্য এবং ভারসাম্য আপনাকে শুধুমাত্র পেট থেকে নয়, মনের থেকেও সন্তুষ্ট করবে।