ভারতীয় রান্নাঘরে ডালের এক বিশেষ স্থান আছে। ছোলা হোক বা মসুর, মুগ হোক বা অড়হর—প্রতিটি ডালের স্বাদ, পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব আলাদা। কিন্তু এক ধরণের ডাল আছে যা সুস্বাদু হওয়ার সাথে সাথে ঔষধি গুণেও ভরপুর—কুলথি ডাল। সাধারণত গ্রামীণ অঞ্চলে জনপ্রিয় এই ডাল এখন শহুরে রান্নাঘরেও স্থান করে নিচ্ছে। বিশেষ করে যখন এটি মশলাদার ভাবে রান্না করা হয়, তখন এটি স্বাদে পুষ্টিকর হওয়ার পাশাপাশি শরীরকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
প্রয়োজনীয় উপকরণ (৪ জনের জন্য)
- কুলথি ডাল – ২৫০ গ্রাম
- পেঁয়াজ – ২ (বারিক করে কাটা)
- টমেটো – ১ (বারিক করে কাটা)
- কাঁচা মরিচ – ২ (বারিক করে কাটা)
- রসুন – ৩-৪ কোয়া (কাটা)
- জিরা – ১ চা-চামচ
- হলুদ গুঁড়ো – ১ চা-চামচ
- লাল মরিচ গুঁড়ো – ১ চা-চামচ
- চাট মশলা – ১ চা-চামচ
- গরম মশলা – ১ চা-চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- তেল – প্রয়োজনমতো
- ধনেপাতা – ½ কাপ (বারিক করে কাটা)
প্রণালী
১. ডাল প্রস্তুতকরণ
প্রথমে কুলথি ডাল ভালো করে পরিষ্কার করুন। এই ডাল শক্ত এবং মোটা হয়, তাই এর মধ্যে ছোট ছোট পাথর বা মাটির কণা থাকতে পারে। ভালো করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে ও ধুয়ে একটি পাত্রে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে ডাল নরম হবে এবং দ্রুত সিদ্ধ হবে।
২. ডাল সিদ্ধ করা
একটি প্রেশার কুকারে ভিজিয়ে রাখা ডাল দিন। এতে অর্ধ চা-চামচ হলুদ এবং স্বাদমতো লবণ মেশান। তারপর ৩-৪ টি সিটি দিন যাতে ডাল ভালো করে সিদ্ধ হয়। কুকারের প্রেশার বের হয়ে গেলে, হালকা হাতে ডালটি ফেটিয়ে নিন।
৩. তেল তৈরি
এখন একটি গভীর কড়াইতে তেল গরম করুন। প্রথমে জিরা দিন এবং ফোড়ন দিন। তারপর বারিক করে কাটা রসুন, কাঁচা মরিচ দিন এবং হালকা বাদামী রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। তারপর কাটা পেঁয়াজ দিন এবং হালকা বাদামী রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
৪. মশলা ভাজা
এখন এতে টমেটো দিন এবং ভালো করে নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। তারপর হলুদ, লাল মরিচ এবং সামান্য লবণ দিন। এই মশলাগুলি কম আঁচে তেল ছেড়ে যাওয়া পর্যন্ত ভাজুন। এই প্রক্রিয়া ডালে স্বাদের আসল রঙ যোগ করে।
৫. ডাল এবং তেল মিশ্রণ
এখন এই তৈরি তেলে সিদ্ধ কুলথি ডাল দিন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ মশলার সাথে মাঝারি আঁচে ভাজুন। তারপর প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে পছন্দমতো ঘন বা পাতলা ডাল তৈরি করুন।
উত্তপ্ত করে তারপর গরম মশলা, চাট মশলা এবং তাজা কাটা ধনেপাতা দিন। আরও একবার হালকা উত্তপ্ত হলে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
স্বাস্থ্যগত সুবিধা
- কিডনির জন্য উপকারী: কুলথি ডাল আয়ুর্বেদে মূত্র সংক্রান্ত রোগে উপকারী বলে মনে করা হয়।
- পাচনে সহায়ক: এতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে, যা পাচন ক্রিয়াকে ঠিক রাখে।
- গ্রীষ্মে উপকারী: এই ডাল শরীরকে ভেতর থেকে গরম রাখে, বিশেষ করে ঠান্ডা मौसमে।
- প্রোটিনে সমৃদ্ধ: শাকাহারীদের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রোটিনের উৎস।
বিশেষ টিপস
- মশলাদার তেল তৈরির সময় কম আঁচে ভাজুন যাতে মশলাগুলি পোড়ে না।
- ডাল একবার অবশ্যই ফেটে নিন, এতে তার টেক্সচার ময়দার মতো হয়।
- চাট মশলা একটি টুইস্টের মতো কাজ করে, যা এই রেসিপিকে অন্যান্য ডাল থেকে আলাদা করে।
কুলথি মশলা ডাল কেবলমাত্র ঐতিহ্যবাহী স্বাদ ধরে রাখে না, বরং আধুনিক মশলার সাথে একটি নতুন পরিচয়ও তৈরি করে। এটি এমন একটি রেসিপি যা সপ্তাহে একবার অবশ্যই তৈরি করা উচিত, যাতে স্বাদ ও স্বাস্থ্য দুটোই একসাথে পাওয়া যায়।