প্রত্যেকের জীবনেই কিছু কিছু স্বাদ আছে যা শুধু জিভ নয়, মনকেও ছুঁয়ে যায়। দাদি-নানির হাতে তৈরি গরম গরম মিষ্টি চিনি পরোটা ঠিক এমনই একটি স্বাদ। সেই মিষ্টি সুগন্ধ, কড়কড়ে কিনারা এবং মাঝখানে গলে যাওয়া চিনির স্তরগুলি সব মিলিয়ে আমাদের শৈশবের গলিতে নিয়ে যায়। আজকের দ্রুতগতির জীবনেও এই সহজ রেসিপি দিয়ে আপনি সেই মিষ্টি অনুভূতি আবার পেতে পারেন।
এই লেখায় আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ঐতিহ্যগত পদ্ধতিতে তৈরি চিনি পরোটার একেবারে সহজ রেসিপি, যেখানে কোনো ঝামেলা নেই, না কোনো ব্যয়বহুল উপকরণের প্রয়োজন। বিশেষ কথা হল, আপনি এটি নাস্তা, লাঞ্চ অথবা হালকা ক্ষুধায় বাচ্চাদের টিফিনের জন্যও বানাতে পারেন। আসুন জেনে নেই, কীভাবে মিনিটের মধ্যেই তৈরি হবে এই সুস্বাদু চিনি পরোটা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- গমের আটা - ১ কাপ
- পানি - প্রয়োজনমতো
- চিনি - ২-৩ টেবিল চামচ (স্বাদের অনুযায়ী)
- দেশি ঘি - ভাজার জন্য
- ইলাইচি গুঁড়ো (ঐচ্ছিক) - ১/৪ চা চামচ
প্রণালী: এভাবে তৈরি করুন মিষ্টি ও কড়কড়ে চিনি পরোটা
- প্রথমে আটা গুঁথুন: একটি গভীর পাত্রে গমের আটা নিন এবং ধীরে ধীরে পানি মিশিয়ে নরম ও মসৃণ আটা গুঁথে নিন। আটাকে প্রায় ১০ মিনিটের জন্য ঢেকে রাখুন যাতে তা ভালোভাবে সেট হয়।
- লুচি তৈরি করুন: এবার আটার একটি মাঝারি আকারের লুচি নিন এবং তা বেলন দিয়ে রুটির মতো বেলুন, তবে কিছুটা মোটা রাখুন। খেয়াল রাখুন যাতে কিনারা খুব পাতলা না হয়, নাহলে চিনি বেরিয়ে যেতে পারে।
- পূরণ দিন: বেলে রুটির মাঝখানে ১-২ চা চামচ চিনি ভর্তি করুন। আপনি চাইলে তাতে একটু ইলাইচি গুঁড়োও মেশাতে পারেন। এতে পরোটার স্বাদ আরও সুগন্ধিত ও আকর্ষণীয় হবে।
- পরোটা বন্ধ করুন: এবার চারদিক থেকে রুটি উঠিয়ে মাঝখানে জোড়া দিন এবং হালকা হাতে চেপে দিন যাতে পূরণ ভালোভাবে ঢাকা থাকে। আবার বেলন দিয়ে হালকা হাতে বেলুন। খেয়াল রাখুন যাতে চিনি বেরিয়ে না যায়।
- পরোটা ভাজুন: তাওয়া গরম করুন এবং তার উপর পরোটা রাখুন। মাঝারি আঁচে একদিক হালকা বাদামি রঙের হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। তারপর উল্টে দিন এবং উপরে ঘি লাগান। অন্যদিকেও ঘি লাগিয়ে দুইদিক সোনালী বাদামি ও কড়কড়ে হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- গরম গরম পরিবেশন করুন: তৈরি পরোটা প্লেটে তুলে অবিলম্বে পরিবেশন করুন। এই পরোটা একা একাই সুস্বাদু লাগে, তবে আপনি চাইলে এটি দই, সাদা মাখন অথবা আচারের সাথেও পরিবেশন করতে পারেন।
সুझाव ও টিপস
- আপনি যদি চিনির বদলে গুড় ব্যবহার করতে চান তবে হালকা গলানো গুড়ও ভর্তি করতে পারেন। এতে একটি আলাদা দেশীয় স্বাদ পাওয়া যাবে।
- ছোটো বাচ্চাদের জন্য পরোটাতে কিশমিশ অথবা বারিক কাটা বাদামও ভর্তি করতে পারেন।
- এই পরোটা সবচেয়ে ভালো গরম গরমই লাগে কারণ ঠান্ডা হয়ে গেলে চিনি শক্ত হয়ে যায়।
চিনি পরোটা শুধু একটি রেসিপি নয়, বরং সেই সময়ের স্মৃতি যখন আমরা স্কুল থেকে ফিরে দাদি-নানির কাছে বলে মিষ্টি পরোটা বানাতাম। আজ যখন আমরা নিজেরাই রান্নাঘর সামলাই, তখন এই স্বাদ আমাদের পুরোনো গলিতে নিয়ে যায়। আপনি যদি আপনার বাচ্চাদের সেই স্বাদ চখানোর ইচ্ছা করেন, অথবা নিজের স্মৃতি জীবন্ত রাখতে চান, তাহলে এই পরোটা বানানো ভুলবেন না। এর সুগন্ধ, স্বাদ ও সরলতা সবার মুখে হাসি ফোটাতে পারবে।