ইরানের প্রাক্তন শাহের পুত্র রেজা পাহলভি খামেনেয়ীকে অপসারণ এবং গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ইসরাইলি আক্রমণকে পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের দাবি জানিয়েছেন।
ইরান: ইরানের রাজনীতিতে এই সময় আবার একটা ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। এই আন্দোলন কোনও বর্তমান নেতার বক্তব্য থেকে নয়, বরং ইরানের প্রাক্তন সম্রাট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র রেজা শাহ পাহলভির কণ্ঠস্বর থেকে উঠেছে। রেজা শাহ পাহলভি, যিনি গত কয়েক দশক ধরে আমেরিকায় নির্বাসনে বসবাস করছেন, এখন খোলাখুলিভাবে বর্তমান ইসলামিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে এখন ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তনের প্রয়োজন এবং "আমাদের সময় এসেছে।"
এই বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইসরাইল এবং ইরানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইরানের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। রেজা পাহলভির এই আহ্বান কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং দীর্ঘ সংগ্রামের পরিণতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইসলামী বিপ্লব থেকে ক্ষমতা পরিবর্তন
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হয় যা সমগ্র দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই বিপ্লবের প্রধান লক্ষ্য ছিল শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পশ্চিমা সমর্থিত রাজতন্ত্রের অবসান ঘটানো এবং একটি ইসলামী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। শাহকে দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যেতে হয় এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনীকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ঘোষণা করা হয়।
পরে ১৯৮৯ সালে খোমেনীর মৃত্যুর পর আলী খামেনেয়ীকে তার উত্তরাধিকারী করা হয়, যদিও তিনি সেই সময় গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ ছিলেন না। সংবিধানে পরিবর্তন করে তাকে সর্বোচ্চ নেতা করা হয়। আজও খামেনেয়ী ইরানের ক্ষমতায় আছেন এবং তার শাসন প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে।
রেজা শাহ পাহলভি: নির্বাসিত জীবন থেকে নেতৃত্বের দিকে
রেজা শাহ পাহলভি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইরানে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনের জন্য বহু বছর ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন। তিনি "ইরানের জাতীয় পরিষদ" নামক একটি বিরোধী সংগঠন গঠন করেছেন, যার লক্ষ্য ইসলামী গণতন্ত্রের অবসান ঘটানো এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তার মতে, ইরানকে এমন একটি রাজনৈতিক কাঠামোর প্রয়োজন যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলি শক্তিশালী হবে এবং সাধারণ নাগরিকদের স্বাধীনতা পাবে।
বর্তমানে তিনি আমেরিকায় বসবাস করে ইরানে পরিবর্তনের আওয়াজ তুলছেন এবং নিয়মিতভাবে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, নীতি নির্ধারক এবং গণমাধ্যমের সাথে যোগাযোগ করছেন। তার এই অবস্থান আমেরিকা এবং ইসরাইলের মতো দেশগুলির ইরান বিরোধী নীতির সাথেও মিলে যায়।
ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের উপর অবস্থান
সম্প্রতি ইসরাইল যখন ইরানের উপর আক্রমণ করেছে, তখন রেজা শাহ পাহলভি বিবিসির সাথে আলাপচারিতায় স্পষ্ট করেছেন যে এই যুদ্ধ ইরানের শাসনের, জনতার নয়। তিনি বলেছেন যে ইসরাইলের আক্রমণের উদ্দেশ্য ইরানী নাগরিকদের ক্ষতি করা নয়, বরং বর্তমান শাসনকে দুর্বল করা ছিল যাতে দেশে পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি করা যায়।
আমেরিকার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক
রেজা পাহলভির নীতি আমেরিকার স্বার্থের সাথে মিলে যায়। তিনি আমেরিকান সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যে ইরানের ইসলামী শাসনের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত এবং সেখানকার নাগরিকদের সমর্থন দেওয়া উচিত। তার মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আর নিষ্ক্রিয় থাকা উচিত নয়, বরং ইরানে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপনের জন্য সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করা উচিত।
গণতন্ত্রের জন্য ৪০ বছরের সংগ্রাম
রেজা শাহ পাহলভি বলেন, গত ৪০ বছর ধরে তিনি কেবলমাত্র একটি উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আসছেন—ইরানে গণতন্ত্রের প্রত্যাবর্তন। তার মতে, বর্তমান শাসন নাগরিকদের স্বাধীনতা, সম্মান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না, বরং তাদেরকে একটি যন্ত্রের মতো ব্যবহার করে। তিনি নাগরিকদের কাছে আবেদন করেন যে তারা এই শাসনের সাথে সহযোগিতা করা বন্ধ করুক এবং দেশের মুক্তির দিকে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিক।