যদি আপনিও নিজের বাড়তে থাকা ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, তাহলে বাবা রামদেবের যোগ টিপসগুলি অনুসরণ করার এটাই সঠিক সময়। ক্রিসমাসের ছুটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই যখন নতুন বছর আসে, তখন মানুষ তাদের জীবনকে আরও ভালো করার জন্য নতুন প্রতিজ্ঞা করে। এই প্রতিজ্ঞাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হল নিজেদের জীবনযাত্রার উন্নতি করা এবং শরীরকে ফিট রাখা, কারণ শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের সরাসরি সম্পর্ক শরীরের সুস্থতার সাথে।
সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বাইরে থেকে রোগা দেখালে, অর্থাৎ শরীরে ফ্যাট না থাকলে, তা আপনার ফিট থাকার লক্ষণ নাও হতে পারে। আজকাল শুধুমাত্র বিএমআই (Body Mass Index) দেখেই স্বাস্থ্য ভালো আছে কিনা তা বলা যায় না। "থিন আউটসাইড এন্ড ফ্যাট ইনসাইড" এর পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় ধোঁকা হতে পারে, কারণ এর থেকে হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, বিপি, আর্থ্রাইটিস এবং ক্যান্সারের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিএমআই সঠিক নির্দেশক না হয়, তাহলে শরীরে ফ্যাট আছে কিনা তা কীভাবে জানা যাবে? এর জন্য ওয়েস্ট টু হিপ রেশিও এবং বিআরআই এর মতো পরীক্ষা করা যেতে পারে, কিন্তু এগুলো একটু জটিল। আরেকটি উপায় হল বিসিএ (Body Composition Analysis), যা শরীরের মাংসপেশি ও হাড়ের তুলনায় শরীরের ফ্যাটের শতাংশ পরিমাপ করে। এই পরীক্ষা একটি মেশিনের সাহায্যে করা হয়, যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার শরীরে কোথায় ফ্যাট জমা আছে।
তাই এই নতুন বছরে বিসিএ পরীক্ষা করিয়ে জেনে নিন আপনার শরীরে ফ্যাট জমা আছে কিনা, আর যদি থাকেও, তাহলে ঘাবড়াবেন না। বাবা রামদেবের যোগ পদ্ধতির মাধ্যমে আপনি সহজেই এই ফ্যাট কমাতে পারবেন, যার ফলে আপনার শরীর সুস্থ ও ফিট থাকবে।
ওয়েস্ট টু হিপ রেশিও
• কোমরের মাপ নিন।
• হিপের মাপ নিন।
• কোমরের মাপকে হিপের মাপ দিয়ে ভাগ করুন।
যদি এই অনুপাত ০.৯-এর কম হয়, তাহলে আপনার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক আছে এবং হৃদরোগের কোনো বড় ঝুঁকি নেই। কিন্তু যদি এই অনুপাত ১-এর বেশি হয়, তাহলে এটি হৃদরোগের জন্য সতর্কবার্তা হতে পারে এবং আপনার অবিলম্বে এর দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।
বডি রাউন্ড ইন্ডেক্স
বিএমআই-এর সাথে সাথে এখন কোমর এবং হিপসের মাপ নেওয়াও ততটাই জরুরি হয়ে পড়েছে, যাতে আপনি পেটের চর্বি এবং শরীরের ভেতরের ফ্যাটের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারেন। এর জন্য বিআরআই (বডি রেশিও ইন্ডেক্স) একটি কার্যকর উপায়, যার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আপনার শরীরে ফ্যাটের মাত্রা কত।
• বিআরআই ৫-এর কম - এই অনুপাত যদি ৫-এর কম হয়, তাহলে আপনার শরীর সুস্থ ও ফিট আছে।
• বিআরআই ৫-এর বেশি - এটি একটি ইঙ্গিত যে আপনার পেটে ফ্যাট বাড়ছে, এবং আপনার নিজের খাদ্যতালিকা এবং জীবনযাত্রার দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
• বিআরআই ৭-এর বেশি - যদি এই অনুপাত ৭-এর বেশি হয়, তাহলে এটি একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হতে পারে, এবং আপনার অবিলম্বে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
বডি কম্পোজিশন অ্যানালাইসিস
• বিসিএ পরীক্ষায় মাংসপেশি ও হাড়ের মূল্যায়ন: শরীরে মাংসপেশি ও হাড়ের অনুপাত পরীক্ষা করা হয়।
• ফ্যাটের শতাংশের গভীরে পরীক্ষা: শরীরে ফ্যাটের শতাংশ বিশ্লেষণ করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হতে পারে।
লাইফস্টাইল কীভাবে পরিবর্তন করবেন
• ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন: সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য ওজন বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। এর জন্য সুষম খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার দিকে মনোযোগ দিন।
• ধূমপান ত্যাগ করুন: তামাক এবং ধূমপান থেকে দূরে থাকুন, এটি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
• সময়মতো ঘুমান: নিয়মিত সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন, এটি শরীর ও মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে।
• ৮ ঘণ্টার ঘুম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টার গভীর ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং শরীরকে পুনরুদ্ধার করার সময় দেয়।
• বিপি এবং সুগার পরীক্ষা করান: উচ্চ রক্তচাপ এবং সুগারের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করালে আপনি যেকোনো সমস্যা সময় থাকতে জানতে পারবেন এবং তার প্রতিকার করতে পারবেন।
• ওয়ার্কআউট করুন: শারীরিক ব্যায়ামকে নিজের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করুন, এতে শরীর সুস্থ থাকবে এবং মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
• মেডিটেশন করুন: মানসিক শান্তি এবং চাপ মুক্তির জন্য প্রতিদিন মেডিটেশন করুন, এটি আপনাকে মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
স্থূলতার কারণ
• খারাপ জীবনযাত্রা: রাত জেগে থাকা, ভাজাভুজি খাবার খাওয়া এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। এর ফলে ওজন বাড়তে পারে এবং গুরুতর রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
• ফাস্টফুড খাওয়া: বেশি ফাস্টফুড খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হতে পারে, যার ফলে স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
• কার্বোনেটেড ড্রিংক: চিনি এবং কেমিক্যাল যুক্ত কার্বোনেটেড ড্রিংক বেশি খেলে স্থূলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
• মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ শুধু মানসিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করে না, বরং এটি শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ।
• ওয়ার্কআউটের অভাব: শারীরিক ব্যায়ামের অভাবে মাংসপেশি এবং হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে, যার ফলে শরীরের ওজন বাড়ে এবং ফিটনেস কমে যায়।
• ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি বা শরীরে তরলের অভাবের কারণ হতে পারে, যার ফলে স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।
• ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, যার ফলে মানসিক ক্লান্তি, ওজন বৃদ্ধি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
স্থূলতা কমবে, অব্যর্থ উপায়
• সকালে লেবু-জল পান করুন: সকালের এই সহজ উপায়টি আপনার শরীরকে ডিটক্স করতে সাহায্য করে, যার ফলে মেটাবলিজম উন্নত হয় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
• লাউ-এর স্যুপ বা জুস পান করুন: লাউ-এর স্যুপ বা জুস পেটকে হালকা রাখে এবং শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• খাবার আগে স্যালাড খান: স্যালাড খেলে পেট তাড়াতাড়ি ভরে যায়, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার সম্ভাবনা কমে এবং ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
• রাতে রুটি-ভাত খাওয়া এড়িয়ে চলুন: রাতে রুটি এবং ভাত খেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে পারে।
• রাতের খাবার ৭টার আগে খান: দেরি করে রাতের খাবার খেলে ফ্যাট জমা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। রাতের খাবার ৭টার আগে খেলে শরীর হজম করার জন্য যথেষ্ট সময় পায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
• খাবার খাওয়ার ১ ঘণ্টা পর জল পান করুন: খাবার খাওয়ার সাথে সাথেই জল পান করলে হজম প্রক্রিয়ায় বাধা আসতে পারে। ১ ঘণ্টা পর জল পান করলে হজমের উন্নতি হয় এবং শরীরে শোষণ ভালো হয়।
মহিলারা থাকবেন ফিট, বদলান কিছু অভ্যাস
• বাসি খাবার খাবেন না: বাসি খাবার খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে এবং এটি শরীরের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। টাটকা এবং তৈরি করা খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
• ব্রেকফাস্ট অবশ্যই করুন: সকালে সময়মতো ব্রেকফাস্ট করলে শরীর সারাদিনের জন্য শক্তি ও সতেজতা পায়। এটি মেটাবলিজমকে বাড়ায় এবং খিদে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• দুপুরে বিশ্রাম করুন: দিনের মাঝে বিশ্রাম করলে শরীর শক্তি পায় এবং মানসিক অবস্থার সতেজতা আসে, যা সারাদিনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
• অসুস্থতাকে এড়িয়ে যাবেন না: শরীরে কোনো ধরনের অস্বস্তি বা অসুস্থতার লক্ষণ দেখা গেলে তা এড়িয়ে যাবেন না। সময়মতো চিকিৎসা করালে গুরুতর সমস্যা থেকে বাঁচা যেতে পারে।
• নিজেরও খেয়াল রাখুন: অন্যের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও ততটাই জরুরি। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য নিজের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠবেন কিভাবে
• নিজের টাইম টেবিল তৈরি করুন
• ঘুমানোর সময় নির্দিষ্ট করুন
• নিজেকে চ্যালেঞ্জ করুন
• রাতে জল পান করে ঘুমান
ওজন হবে কন্ট্রোল, জীবনে আনুন পরিবর্তন
• লিফটের বদলে সিঁড়ি দিয়ে উঠুন
• বারবার কফি-চা পান করবেন না
• খিদে পেলে প্রথমে জল পান করুন
• খাওয়া ও ঘুমের মাঝে ৩ ঘণ্টার ব্যবধান রাখুন
স্থূলতা কমান, ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করুন
• আদা-লেবুর চা পান করুন
• আদা ফ্যাট কন্ট্রোল করে
স্থূলতা কমান, ত্রিফলা ব্যবহার করুন
• রাতে ঘুমানোর আগে এক চামচ ত্রিফলা গরম জলের সাথে পান করুন।
• ত্রিফলা হজম ক্ষমতা বাড়ায়
• ওজন কমায়
স্থূলতা কমান, দারচিনি ব্যবহার করুন
• ৩-৬ গ্রাম দারচিনি নিন
• ২০০ গ্রাম জলে ফোটান
• ১ চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন
```