রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যদি আপনি টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) এর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। GI হল এমন একটি মাপকাঠি, যা নির্দেশ করে যে কোনো বিশেষ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রার ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, কম GI যুক্ত খাবারগুলির স্কোর 55 বা তার কম হয়, যেখানে উচ্চ GI যুক্ত খাবারগুলির স্কোর 70 বা তার বেশি হয়।
তাই, উচ্চ GI যুক্ত খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিত এবং কম GI যুক্ত খাবারগুলিকে আপনার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এই ধরনের খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখুন
জিআই (গ্লাইসেমিক ইনডেক্স) জানায় যে, কোনো বিশেষ খাবার খেলে শরীরে শর্করার মাত্রার ওপর কতটা প্রভাব পড়বে, কিন্তু এটা গল্পের শুধুমাত্র অর্ধেক অংশ। আসলে, এখানে গ্লাইসেমিক লোড (GL) এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। GL, জিআই-এর সাথে খাবারের অংশের আকার বিবেচনা করে জানায় যে, কোনো খাবারের শরীরে কতটা প্রভাব পড়বে। GL নির্ধারণ করার জন্য, জিআই-কে 100 দিয়ে ভাগ করে, সেই খাবারের মোট কার্বোহাইড্রেটের গ্রাম দিয়ে গুণ করা হয়। এই পদ্ধতিতে জানা যায় যে, কোন খাবারের রক্তের শর্করার ওপর বেশি প্রভাব পড়বে, তা সেটির GI মাত্রা যাই হোক না কেন।
শর্করার মাত্রা বজায় রাখার জন্য কী খাবেন
রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে আপনার খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। আপনি যদি আমিষ খাবার খান তবে মাছ খান, কারণ এতে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভালো ফ্যাট থাকে, যা শরীরের অনেক রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এছাড়াও, এমন খাবারগুলি এড়িয়ে চলুন, যা হজমের সময় দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। সাধারণ কার্বোহাইড্রেট এবং স্টার্চ (কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট) হজম হওয়ার পরে রক্তে গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয়, যা শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
আপনার জন্য সেরা খাবার
• তাজা ফল: শর্করার মাত্রা কমাতে আপনি এমন ফল বেছে নিন যাতে চিনির পরিমাণ কম থাকে, যেমন - কিউই, মৌসুমি, আনারস, চেরি এবং বেরি। তবে, কলা, চিকু, পাকা আম এবং তুঁতের মতো ফলগুলিতে চিনি বেশি থাকে, তাই এগুলি কম পরিমাণে খান।
• সবজি: সবুজ শাকসবজি এবং শিম জাতীয় সবজি খান। এগুলি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চমৎকার খাদ্য বিকল্প, কারণ এতে চিনির পরিমাণ কম এবং ফাইবার বেশি থাকে।
• গোটা শস্য: গোটা শস্য যেমন - অঙ্কুরিত দানা, বাজরা, কালো ছোলা এবং ভাজা ছোলা খান। এগুলি আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় ফাইবার এবং প্রোটিন সরবরাহ করে এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
• দুধ: দুধ পান করুন, তবে খেয়াল রাখবেন যে এতে যেন অতিরিক্ত চিনি যোগ না করা হয়, কারণ দুধে প্রাকৃতিক চিনি (ল্যাকটোজ) থাকে, যা ডায়াবেটিসের জন্য নিরাপদ।
• শুকনো ফল: প্রতিদিন শুকনো ফল, বিশেষ করে বাদাম এবং আখরোট খান। রাতে বাদাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খোসা ছাড়িয়ে খান। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন
• স্মুদি এবং ফ্রুট শেক: প্যাকেজড স্মুদি এবং ফ্রুট শেকগুলিতে অতিরিক্ত চিনি এবং অ্যাডিটিভ থাকে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলি কম পরিমাণে খান।
• কোল্ড ড্রিঙ্ক: কোল্ড ড্রিঙ্কে চিনি এবং ক্যালোরির পরিমাণ বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো আপনার খাদ্যতালিকা থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দিন।
• টিনজাত খাবার: টিনজাত খাবারে চিনি এবং লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
• প্যাকেটে পাওয়া ফ্রাই এবং চিপস: ফ্রাই এবং চিপসে ট্রান্স ফ্যাট, চিনি এবং লবণের মাত্রা খুব বেশি থাকে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।