ডাঃ সালিম জৈদীর ৬টি সহজ উপায়ে পেটের চর্বি কমানোর টিপস

🎧 Listen in Audio
0:00

বর্তমানের দ্রুতগতিসম্পন্ন জীবনযাত্রা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেয়ারে বসে কাজ করা, বাইরের খাবার এবং ঘুমের অভাব – এই সব মিলেমিশে আমাদের শরীরে চর্বি জমে। পেট বের হয়ে আসা, কোমর মোটা হওয়া এবং ক্রমাগত ক্লান্তি বোধ করা আজকাল সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। কিন্তু যদি আপনিও চান আপনার পেট ভেতরে যাক এবং শরীর আবার ফিট দেখাক, তাহলে ডাঃ সালিম জৈদীর এই ৬টি সহজ এবং কার্যকরী উপায় আপনার জন্য খুবই কার্যকর হতে পারে।

১. দিনের শুরু করুন গরম পানি এবং লেবু দিয়ে

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে গরম পানি পান করা শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করার একটি অত্যন্ত সহজ এবং কার্যকরী উপায়। যদি আপনি এই পানিতে অর্ধেক লেবু এবং এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে নেন, তাহলে এর প্রভাব আরও বেড়ে যায়। এই মিশ্রণ আপনার পেটে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং পাচনতন্ত্রকে সক্রিয় করে।

এই পানীয়টি প্রতিদিন সকালে পান করলে মেটাবলিজম ত্বরান্বিত হয়, ফলে শরীর বেশি ক্যালোরি পোড়ায়। ধীরে ধীরে পেটের চর্বিও কমতে শুরু করে। যদি আপনি এটি নিয়মিত অনুসরণ করেন, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই পেট হালকা এবং শরীর কিছুটা ফিট বোধ করতে শুরু করবেন। এটি একটি সহজ অভ্যাস যা কোনো পরিশ্রম ছাড়াই ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২. উচ্চ প্রোটিন এবং ফাইবারযুক্ত নাশতা করুন

যদি আপনি ওজন কমাতে চান, তাহলে সকালের নাশতা কখনোই মিস করবেন না। ডাক্তারের মতে, সকালের সময় আমাদের শরীর শক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত থাকে, তাই এই সময় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। নাশতায় আপনি ডিম, দই, ওটস, দালিয়া বা তাজা ফল যেমন উচ্চ প্রোটিন এবং ফাইবারযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। এই খাবারগুলো পেটকে দীর্ঘ সময় ধরে ভরা রাখে, ফলে বারবার ক্ষুধা লাগে না এবং আপনি অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। এছাড়াও এই খাবারগুলো সারাদিন শরীরকে সক্রিয় এবং শক্তিশালী রাখে।

৩. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন

যদি আপনি জিমে যেতে না পারেন, তাহলে প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট দ্রুতগতিতে হাঁটাও খুবই উপকারী হতে পারে। এটি একটি সহজ এবং কার্যকরী উপায় যার মাধ্যমে আপনি ওজন কমাতে পারেন। এতে আপনার শরীর সক্রিয় থাকে এবং আপনি বেশি ক্যালোরি পোড়াতে পারেন।

ডাক্তারের মতে, প্রতিদিন হাঁটার ফলে মেটাবলিজম ত্বরান্বিত হয়, ফলে শরীর নিজেই চর্বি গলানো শুরু করে। এছাড়াও হাঁটার ফলে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত হয় এবং শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আপনি সারাদিন সতেজ বোধ করেন।

৪. ফ্যাট বার্নিং খাবার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন

কিছু খাবার আছে যা শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই ত্বরান্বিত করে। যেমন –

  • গ্রিন টি
  • আদা
  • দারুচিনি
  • আমলা
  • জিরা পানি

এইগুলিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাট-কাটার উপাদান রয়েছে যা শরীরকে ডিটক্স করে এবং মেটাবলিজমকে বৃদ্ধি করে। সকালে গ্রিন টি বা জিরা পানি এবং দিনে যেকোনো সময় আমলা রস বা আদা চা পান করলে শরীরের চর্বি দ্রুত কমে।

৫. খাবারের সঠিক সময় এবং ব্যবধান রাখুন

ওজন কমাতে খাবারের সঠিক সময় এবং ব্যবধান বুঝে নেওয়া খুবই জরুরি। ডাঃ সালিম জৈদী বলেন, দিনে তিনটি বড় মিল খাওয়ার পরিবর্তে ৪ থেকে ৫টি ছোট ছোট মিল খাওয়া উত্তম। সকালের নাশতা পুরোপুরি এবং ভারী হওয়া উচিত, দুপুরের খাবার সুষম এবং পুষ্টিকর হওয়া উচিত, যখন রাতের খাবার হালকা এবং তাড়াতাড়ি খাওয়া উচিত, যেমন সন্ধ্যা ৭ থেকে ৮ টার মধ্যে।

খাবারের মধ্যে তিন ঘন্টার বেশি ব্যবধান রাখবেন না, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকলে শরীর চর্বি জমাতে শুরু করে। এই কারণে মিলের মধ্যে সুষম ব্যবধান রাখা জরুরি যাতে শরীরকে ক্রমাগত শক্তি পাওয়া যায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।

৬. পর্যাপ্ত ঘুম নিন এবং স্ট্রেস কন্ট্রোল করুন

আজকের দ্রুতগতি এবং চাপময় জীবনে ভালো ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এই দুটোই ওজন বৃদ্ধির বড় কারণ হতে পারে। যখন ঘুম কম হয়, তখন শরীরের হরমোন নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে ক্ষুধা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর বেশি চর্বি জমাতে শুরু করে।

ডাঃ সালিম জৈদী জানান, প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুম ঘুমানো জরুরি যাতে শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এর সাথে সাথে যোগ, ধ্যান বা হালকা সঙ্গীত শোনাও চাপ কমাতে সাহায্য করে। যখন মন শান্ত থাকে, তখন শরীরও সুস্থ এবং হালকা বোধ করে, যার ফলে ওজন কম করা সহজ হয়।

ডাঃ সালিম জৈদীর বর্ণিত এই ৬টি টিপস একেবারেই সহজ এবং প্রতিদিনের জীবনে সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এতে কোনো ব্যয়বহুল ওষুধ নেই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রমের ব্যায়ামও নেই। এগুলি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক এবং শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

Leave a comment