স্টমক ক্যান্সার: প্রাথমিক সনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের উপায়

🎧 Listen in Audio
0:00

স্টমক ক্যান্সার (Gastric Cancer) একটি ভয়াবহ রোগ, যা প্রায়শই কোনো প্রাথমিক লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এর সনাক্তকরণ দেরী হলে চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি সঠিক সময়ে স্ক্রিনিং করা যায়, তাহলে এই রোগ থেকে প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। এই লেখাটি আপনাকে স্টমক ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি এবং স্ক্রিনিঙের গুরুত্ব সম্পর্কে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করবে।

স্টমক ক্যান্সার কি এবং কেন এটি এতটা ভয়াবহ?

স্টমক ক্যান্সার, যাকে চিকিৎসা ভাষায় গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার বলা হয়, পেটের অভ্যন্তরীণ আস্তরণে (lining) শুরু হয়। এটি একটি ধীর গতিতে বর্ধনশীল ক্যান্সার, যা অনেক সময় বছরের পর বছর লক্ষণ ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। যখন এর লক্ষণ স্পষ্ট হয়, তখন তা গুরুতর অবস্থায় পৌঁছে যেতে পারে। এটাই কারণ যে সময়মতো সনাক্ত না হলে চিকিৎসায় অসুবিধা হয়।

স্টমক ক্যান্সারের দেরিতে দেখা দেওয়া লক্ষণ

এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ অন্যান্য সাধারণ পেটের সমস্যার মতোই হয়, যার ফলে প্রায়শই মানুষ বিভ্রান্ত হয়। কিন্তু যদি নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলি ক্রমাগত থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরী:

  • বারবার ক্ষুধা না লাগা বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
  • পেটের উপরের অংশে ব্যথা, ভারীভাব বা অস্বস্তি
  • অনেক কম খাওয়ার পরেও পেট ভরে যাওয়া
  • ছাতিতে জ্বালা, অপচের সমস্যা
  • মলে রক্তপাত বা গাঢ় রঙের মল
  • রক্তশূন্যতা (এনিমিয়া)
  • ত্বক ও চোখে হলুদাভাব (যদি ক্যান্সার লিভারে ছড়িয়ে পড়ে)

কাদের ক্ষেত্রে স্টমক ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি?

কিছু মানুষ এই রোগের High-Risk Group-এর অন্তর্ভুক্ত, যাদের অধিক সতর্ক থাকার প্রয়োজন। যেমন:

  • যাদের পরিবারে আগে কেউ স্টমক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন
  • যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান করেন
  • H. pylori নামক ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা
  • স্থূলতায় আক্রান্ত বা শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিরা
  • এই সকল ব্যক্তিকে চিকিৎসকের পরামর্শে সময় সময় স্ক্রিনিং করানো উচিত।

এন্ডোস্কোপি: সময়মতো সনাক্তকরণের কার্যকরী উপায়

স্টমক ক্যান্সার সনাক্তকরণের জন্য এন্ডোস্কোপি (Gastrocopy) সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে চিকিৎসক পেটের অভ্যন্তরীণ অংশ সরাসরি দেখতে পারেন এবং কোনো ধরণের অস্বাভাবিকতা দ্রুত সনাক্ত করতে পারেন। জাপান ও কোরিয়ার মতো দেশে স্টমক ক্যান্সারের ঘটনা বেশি হয়, তাই সেখানে ৫০ বছর বয়সের পর প্রতি ২-৩ বছর অন্তর এন্ডোস্কোপি করা হয়। এর ফলে সেখানে মৃত্যুহারও কমেছে।

ভারতে স্ক্রিনিং এবং সচেতনতা কেন জরুরী?

ভারতে স্টমক ক্যান্সারের জন্য কোনো বৃহৎ জাতীয় স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম নেই। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি উচ্চ ঝুঁকির দলে থাকা ব্যক্তিদের সময়মতো এন্ডোস্কোপিক পরীক্ষা করা যায়, তাহলে মৃত্যুহার ৩০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তাই ভারতেও মানুষকে এই রোগ সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়োজন।

স্টমক ক্যান্সার প্রতিরোধে সময়মতো পরীক্ষার ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এর সনাক্তকরণে বিলম্ব। যদি সঠিক সময়ে স্ক্রিনিং করা যায়, তাহলে শুধুমাত্র রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা সম্ভব নয়, জীবনও রক্ষা করা যায়। সচেতনতা হলো প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায়।

Leave a comment