গ্রীষ্মকালে বিয়ার পান: উপকারী নাকি ক্ষতিকারক?

🎧 Listen in Audio
0:00

গ্রীষ্মকাল আসামাত্রই ঠান্ডা ঠান্ডা পানীয়ের ইচ্ছে হয়। এমন সময় অনেকেই গরম থেকে কিছুটা আরাম পেতে বিয়ারের আশ্রয় নেন। ঠান্ডা বিয়ার পান করা অনেকেরই প্রিয় অভ্যাস, কিন্তু জানেন কি গ্রীষ্মে বিয়ার পান করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী অথবা ক্ষতিকারক হতে পারে? অনেকেই ভাবেন যে ঠান্ডা বিয়ার পান করলে শরীর শীতল হবে এবং গরমের কারণে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কিন্তু এটা কি সত্যি?

বিয়ার পান করলে কি হয়?

বিয়ারে অ্যালকোহল থাকে যা শরীরকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। অ্যালকোহল একটি ডিহাইড্রেন্ট (dehydrant), অর্থাৎ এটি শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। তাই বিয়ার পান করলে শরীরে পানির অভাব হতে পারে, যাকে ডিহাইড্রেশন বলে। ডিহাইড্রেশন হলে শরীরে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গ্রীষ্মে যখন শরীরকে বেশি পানির প্রয়োজন হয়, তখন বিয়ার পান করা তার ঠিক উল্টো কাজ করে। যদিও লোকেরা ভাবে যে বিয়ারে তাদের তৃষ্ণা নিবারণ হবে এবং শরীর হাইড্রেট থাকবে, কিন্তু আসলে বিয়ার শরীর থেকে পানি বের করে দিয়ে তাকে আরও বেশি দুর্বল করে তুলতে পারে।

গ্রীষ্মে বিয়ার পান করার ক্ষতি

  1. ডিহাইড্রেশনের সমস্যা: বিয়ারে অ্যালকোহল থাকার কারণে প্রস্রাব বৃদ্ধি পায়, ফলে শরীর বেশি পানি হারায়। গ্রীষ্মে যেখানে শরীরকে তরল পদার্থের প্রয়োজন হয়, সেখানে বিয়ার পান করা শরীরের পানির অভাবকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
  2. শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি: বিয়ার এবং অন্যান্য অ্যালকোহলিক পানীয় শরীরের রক্তবাহী নালীকে প্রসারিত করে, যার ফলে প্রথমদিকে শীতলতা অনুভূত হয়। কিন্তু পরে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে গরম বেশি অনুভূত হয়।
  3. স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব: অধিক পরিমাণে বিয়ার পান করলে লিভার, কিডনি এবং হৃৎপিণ্ডের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে গ্রীষ্মে যদি বেশি বিয়ার পান করা হয় তাহলে এটি আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।
  4. পাচনতন্ত্রের সমস্যা: বিয়ারে কার্বনেটেড উপাদানও থাকে, যা কখনও কখনও পেটে গ্যাস এবং অপচের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গ্রীষ্মে পাচনতন্ত্র ইতোমধ্যেই দুর্বল থাকে, এমন অবস্থায় বিয়ার পান করা এর দুষ্প্রভাব বাড়াতে পারে।
  5. শক্তির অভাব এবং ক্লান্তি: ডিহাইড্রেশন এবং শরীরে পুষ্টির অভাবের ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা হতে পারে। বিয়ারের কারণে শরীরের প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, যার ফলে শরীরে শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে।

বিয়ার পান করার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন?

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলেন যে গ্রীষ্মে বিয়ার পান করা আপনার শরীরের জন্য সঠিক বিকল্প নয়। বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি, যাদের রক্তচাপ অথবা ডায়াবেটিসের মতো রোগ আছে তাদের এড়িয়ে চলা উচিত। বিশেষজ্ঞরা জানান যে অ্যালকোহলের কারণে শরীরের পানি দ্রুত বেরিয়ে যায় এবং এর ফলে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা গুরুতর হতে পারে।

তারা বলেন যে গ্রীষ্মে শরীরকে হাইড্রেট রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা। এছাড়াও নারকেলের পানি, লেবুর পানি এবং অন্যান্য হাইড্রেটিং পানীয়কে অগ্রাধিকার দিন। বিয়ার অথবা অন্যান্য অ্যালকোহলিক পানীয় কম পরিমাণে এবং সীমিত সময়ের জন্যই সেবন করুন।

বিয়ার পান করার সময় লক্ষণীয় বিষয়াবলী

  • পরিমাণের দিকে নজর দিন: যদি আপনি বিয়ার পান করতে চান তাহলে তার পরিমাণ কম রাখুন। অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা ক্ষতিকারক হতে পারে।
  • খালি পেটে পান করবেন না: খালি পেটে বিয়ার পান করলে মদ্যপানের প্রভাব বেশি হয় এবং ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
  • পানির সাথে পান করুন: বিয়ারের সাথে পানিও পান করতে থাকুন যাতে শরীরে পানির অভাব না হয়।
  • বিয়ার পান করার পরে বিশ্রাম নিন: অধিক রোদে এবং গরমে বিয়ার পান করার পরে শরীরকে বিশ্রাম দেওয়া জরুরি।
  • স্বাস্থ্য পরীক্ষা: যদি আপনার কোনও পুরোনো রোগ থাকে তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরি।

গ্রীষ্মে বিয়ারের বদলে কি পান করা উচিত?

গ্রীষ্মে শীতলতা পাওয়ার জন্য বিয়ারের বদলে এই বিকল্পগুলি ভালো:

  1. পানি: সবচেয়ে ভালো এবং জরুরি পানীয়। প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করা উচিত।
  2. নারকেলের পানি: প্রাকৃতিকভাবে হাইড্রেটিং এবং ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ।
  3. লেবুর পানি: ভিটামিন সি এবং পানির চমৎকার মিশ্রণ।
  4. আইসড টি: বেশি চিনির ব্যবহার ছাড়া আইসড টি পান করা যেতে পারে।
  5. ফল এবং সবজির রস: তাজাভাবের সাথে পুষ্টিও পাওয়া যায়।
  6. ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়: যা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।

গ্রীষ্মে ঠান্ডা বিয়ার পান করা সুস্বাদু লাগে এবং কিছুক্ষণের জন্য তাজাভাবও দেয়, কিন্তু স্বাস্থ্যের দিক থেকে এটি ক্ষতিকারক হতে পারে। বিয়ারে থাকা অ্যালকোহল আপনার শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে এবং গরমের সাথে লড়াই করতে বাধা দেয়। তাই গ্রীষ্মে বিয়ার পান করার পরিবর্তে যথেষ্ট পরিমাণে পানি, নারকেলের পানি, লেবুর পানি ইত্যাদি হাইড্রেটিং পানীয় সেবন করুন। যদি তবুও বিয়ার পান করতে হয়, তাহলে সাবধানতার সাথে এবং সীমিত পরিমাণেই নিন। আপনার শরীরের কথা শুনুন এবং তাকে সঠিক পুষ্টি এবং পানি দিন যাতে আপনি গ্রীষ্মে সুস্থ ও সজীব থাকতে পারেন।

Leave a comment