গ্রীষ্মকাল নিয়ে আসে ঘাম, ক্লান্তি, ডিহাইড্রেশন এবং পেটের সমস্যা। এ সময় সবাই ঠান্ডা এবং তৃপ্তিদায়ক জিনিস খুঁজে থাকে। কিন্তু কি আপনি জানেন যে কিছু পানীয় গ্রীষ্মে পান করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে? এই পানীয়গুলো শরীরকে অস্থায়ী ত্রাণ দিলেও, ভেতরে ভেতরে আমাদের স্বাস্থ্যকে নষ্ট করতে পারে।
গ্রীষ্মে শুধু ঠান্ডা হওয়াই পানীয়কে উপকারী করে তোলে না, বরং এর উপাদান (ingredients), তাদের প্রভাব এবং শরীরের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা জরুরি। আসুন জেনে নিই এমন ৫টি সাধারণ পানীয় সম্পর্কে যা এই মৌসুমে পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
চা এবং কফি – ক্যাফেইন ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে
গ্রীষ্মে বেশিরভাগ মানুষের দিন শুরু হয় চা বা কফি দিয়ে। কিন্তু এই অভ্যাসই শরীরে পানির অভাবের কারণ হতে পারে। চা এবং কফিতে থাকা ক্যাফেইন একটি ডাইউরেটিক (diuretic), যা শরীর থেকে দ্রুত পানি বের করে দেয়।
কি ক্ষতি হতে পারে?
- ডিহাইড্রেশনের সমস্যা
- অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
- মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি
- ঘুমের ব্যাঘাত
কি করবেন?
দিনে এক বা দুই কাপের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন, এবং তারপর পানি বা হার্বাল ড্রিঙ্ক পান করুন।
মদ – শরীরকে গরম করে, মনকে নিস্তেজ করে
গ্রীষ্মকালে মদ পান করা একটি বিপজ্জনক বিকল্প হতে পারে। মদ শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং সাথে সাথে ডিহাইড্রেশন বাড়ায়। এটি শুধুমাত্র আপনার মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে না, বরং শরীরকে অত্যন্ত ক্লান্তও করে তোলে।
ক্ষতি
- ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং মাথাব্যথা
- শরীরে পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব
- অত্যধিক ঘাম
- প্রখর তাপে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি
বিকল্প
মদের পরিবর্তে নারকেলের পানি, বেলের শরবত, লেবুর পানি বা তাজা ফলের রস পান করুন।
কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস – মিষ্টি বিষ শরীরের জন্য
গ্রীষ্মে যখন গলা শুকিয়ে যায়, তখন অনেকেই কোল্ড ড্রিঙ্কস বা সোডার মতো পানীয়ের দিকে ছুটে যায়। কিন্তু এই পানীয়গুলো অবিলম্বে ত্রাণ দিলেও, এতে থাকা চিনি এবং ক্যাফেইন শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
কি হয় প্রভাব?
- অতিরিক্ত চিনির ফলে মোটা হওয়া এবং রক্তে চিনির মাত্রা বৃদ্ধি
- পেটে গ্যাস এবং অপচের সমস্যা
- হাড়ের দুর্বলতা
- ত্বকের রঙের উপর প্রভাব
উত্তম বিকল্প
শিমের পানি, পুদিনার পানি বা লেবু পুদিনার পানি।
এনার্জি ড্রিঙ্কস – শক্তির নামে ক্ষতি
বাজারে পাওয়া এনার্জি ড্রিঙ্কসে উচ্চ ক্যাফেইন, চিনি এবং সংশ্লেষিত উপাদান থাকে যা শরীরকে অল্প সময়ের জন্য শক্তি দিলেও, পরে ক্লান্তি এবং चिड़चिड़ापन বাড়িয়ে দেয়।
ক্ষতি
- ঘুমের ব্যাঘাত
- হৃৎস্পন্দনের বৃদ্ধি
- রক্তচাপ বৃদ্ধি
- পেট খারাপ হওয়া
কি করবেন?
এই ধরণের পানীয় থেকে দূরত্ব বজায় রেখে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস যেমন ছাছ, নারকেলের পানি এবং ফলের শেক গ্রহণ করুন।
অত্যন্ত ঠান্ডা বা বরফের পানি – তাজাভাবের চক্করে হজমে ক্ষতি
গ্রীষ্মে ঠান্ডা পানির ইচ্ছা সবারই থাকে। কিন্তু অত্যন্ত ঠান্ডা পানি বা বরফের পানীয় শরীরের তাপমাত্রাকে একদম কমিয়ে দেয়, যার ফলে পেটের পেশীগুলো সংকুচিত হয় এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়।
কি হতে পারে প্রভাব?
- গলা ব্যথা বা সর্দি-কাশি
- অপচ বা গ্যাস
- মেটাবলিজম ধীর হওয়া
- ক্লান্তি এবং নিস্তেজতা
প্রতিরোধ
সাধারণ তাপমাত্রার পানি পান করুন, বিশেষ করে খাওয়ার পরপর ঠান্ডা পানি পান করবেন না।
গ্রীষ্মে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী পানীয়
যখন ক্ষতিকারক পানীয়ের কথা হচ্ছে, তখন এটাও জানা জরুরি যে কোন পানীয় গ্রীষ্মে আপনার শরীরের জন্য বরদান হতে পারে:
- নারকেলের পানি: ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ এবং স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডা ভাব দেয়।
- লেবুর পানি: ভিটামিন সি এবং খনিজ পদার্থের ভালো উৎস, ক্লান্তি দূর করে।
- ছাছ (মট্ঠা): হজমের জন্য উপকারী এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখে।
- ফল-সবজির রস: তরমুজ, শিম, বেল, কমলালেবু ইত্যাদি মৌসুমি ফলের রস শরীরকে পুষ্টি দেয়।
- জিরা বা মৌরির পানি: হজমে সাহায্য করে এবং গরম থেকে ত্রাণ দেয়।
গ্রীষ্মকালে শুধু শরীরকে ঠান্ডা রাখাই যথেষ্ট নয়, বরং এটাও জরুরি যে আপনি যা পান করছেন, তা আপনার শরীরের ভেতরে গিয়ে কি প্রভাব ফেলছে। চা, কফি, মদ, কোল্ড ড্রিঙ্কস এবং এনার্জি ড্রিঙ্কসের মতো পানীয় এই মৌসুমে শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং আপনার স্বাস্থ্যকে নষ্ট করতে পারে।