দেশে আবারও করোনা ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটেছে। বেশ কিছু রাজ্যে ধীরে ধীরে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে স্বাস্থ্য বিভাগ আবারও সতর্ক অবস্থানে চলে এসেছে। ২০২০ এবং ২০২১ সালের স্মৃতি আবারও তাজা হয়ে উঠেছে যখন এই ভাইরাসটি দেশকে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত করেছিল। তবে এবার পরিস্থিতি আগের মতো গুরুতর নয়, তবুও ঝুঁকিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।
কোন কোন রাজ্যে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে?
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ২৫০-এর বেশি সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছে। কেরালার সংখ্যা সর্বাধিক ৯৫, তারপর তামিলনাড়ুতে ৬৬ এবং মহারাষ্ট্রে ৫৬ জন রোগীর সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে।
এছাড়াও দিল্লীতে (২৩), কর্ণাটকে (১৩), গুজরাটে (৭), রাজস্থানে (২), হরিয়ানায় (১), সিকিমে (১), পশ্চিমবঙ্গে (১) এবং পুডুচেরীতে (১০) নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১২ মে থেকে ১৬৪ টি নতুন কেস ধরা পড়েছে, যার মধ্যে কেবলমাত্র কেরালাতেই ৬৯টি, মহারাষ্ট্রে ৪৪টি এবং তামিলনাড়ুতে ৩৩টি রিপোর্ট করা হয়েছে।
করোনার পুনরায় ছড়িয়ে পড়ার কারণগুলি কি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড-১৯-এর পুনরায় আবির্ভাবের সবচেয়ে বড় কারণ হল আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্থাৎ ইমিউনিটির ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়া। একে ইমিউনিটি ভেইন বলা হয়। যখন কোনও ব্যক্তি আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন অথবা টিকা নিয়েছিলেন, তখন কয়েক মাস পরে তার অ্যান্টিবডি কমতে শুরু করে। এর ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরও একটি বড় কারণ হল আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বৃদ্ধি। যখনই ভ্রমণ আবার শুরু হল এবং মানুষ বিদেশ থেকে আসা-যাওয়া শুরু করল, তখনই ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টও দেশে আসতে শুরু করল। বিশেষ করে বিমানবন্দর এবং জনাকীর্ণ স্থানে এই ভ্যারিয়েন্টগুলি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে স্থানীয় পর্যায়ে নতুন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
নতুন সংক্রমণ ছড়ানো ভ্যারিয়েন্টটি কোনটি?
এবার যে নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে, তার নাম JN.1। এটি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপ-শ্রেণী এবং এখন পর্যন্ত ভারত সহ অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, JN.1 ভ্যারিয়েন্ট খুব দ্রুত ছড়ায় কিন্তু এর লক্ষণগুলি সাধারণত হালকা। সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে হালকা জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, পেশী ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা এবং পেটে হালকা অস্বস্তি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেছে। এই লক্ষণগুলি সাধারণ সর্দি বা ভাইরাল ফ্লুর মতো, তাই মানুষ প্রায়শই এটিকে হালকাভাবে নেয়, কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী।
কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?
করোনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পদ্ধতি এখনও ২০২০ সালে প্রয়োগ করা পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল। শুধু এবার আমাদের এটিকে আরও বেশি দায়িত্বশীলতার সাথে প্রয়োগ করতে হবে।
- মাস্ক পরা ভুলবেন না: জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরা এখনও অত্যন্ত জরুরী, বিশেষ করে যদি আপনার কাশি, সর্দি বা জ্বর থাকে।
- হাতের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় মনোযোগ দিন: বারবার হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন: মেট্রো, বাস, বিয়েবাড়ি অথবা বাজারের মতো জনাকীর্ণ স্থানে দূরত্ব বজায় রাখা এখনও একটি কার্যকর উপায়।
- টিকাকরণ আপডেট রাখুন: যদি আপনি বুস্টার ডোজ না নিয়ে থাকেন তাহলে দ্রুত নিয়ে নিন। এতে গুরুতর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- নিজেকে আইসোলেট করুন: যদি আপনার কোভিডের মতো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে নিজেকে কয়েকদিনের জন্য আইসোলেট করুন এবং অন্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট JN.1 কি সত্যিই বিপজ্জনক?
এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, JN.1 ভ্যারিয়েন্টকে গুরুতরভাবে বিপজ্জনক মনে করা হয় না। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই হালকা লক্ষণ দেখা গেছে এবং কোনও রোগীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়নি। তবে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াতে পারে, কিন্তু এটি গুরুতর অসুস্থতা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করছে না।
তবুও, বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী এবং পূর্বে কোনও রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ভ্যারিয়েন্ট কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। তাই এসব ব্যক্তিকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত এবং জনাকীর্ণ স্থান থেকে দূরে থাকা উচিত।