মুম্বাইতে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধি: সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতে আবারও করোনাভাইরাস (Covid-19) এর উপস্থিতি নথিভুক্ত হয়েছে। যদিও এখনও আগের মতো বিপদের পরিমাণ নেই, তবুও মহারাষ্ট্রসহ কিছু রাজ্যে কোভিডের সংক্রমণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের মতে, রাজ্যের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইতে কোভিডের সক্রিয় সংক্রমণের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রের অন্যান্য জেলা যেমন পুনে, থানে এবং কোলহাপুরেও কিছু নতুন কেস নথিভুক্ত হয়েছে।

মুম্বাইতে কোভিড রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি

মুম্বাইতে কোভিড রোগীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিবেদনের মতে, ২০ মে পর্যন্ত মুম্বাইতে মোট সক্রিয় কোভিড কেস ১০১-এ পৌঁছেছে। এই বছর জানুয়ারি থেকে মহারাষ্ট্রে ৬,০৬৬ জনের সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০৬ জন কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে।

এই পজিটিভ কেসগুলির মধ্যে ১০১ জন মুম্বাইয়ের, পুনে এবং থানেতে ১ জন করে এবং কোলহাপুরে ৩ জন রোগী পাওয়া গেছে। সরকার জানিয়েছে অধিকাংশ রোগীর লক্ষণ সাধারণ এবং এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। জনগণের কাছে আবেদন করা হয়েছে যেন তারা সতর্ক থাকে এবং নিয়ম মেনে চলে।

কী রোগীদের লক্ষণ এবং কতটা গুরুতর কেস?

সরকারি প্রতিবেদনের মতে, মহারাষ্ট্রে বর্তমান কোভিড রোগীদের মধ্যে ৫২ জন হোম আইসোলেশনে আছেন এবং হালকা লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসা পাচ্ছেন। এছাড়াও ১৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি, কিন্তু কোনও রোগীর অবস্থা গুরুতর নয়। সকল রোগীর চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে এবং চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

রোগীদের মধ্যে সাধারণত ভাইরাল জ্বর, গলা ব্যথা, হালকা মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি যে লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কাশি এবং সামান্য শ্বাসকষ্টও দেখা গেছে, তবে কারও ICU বা ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ জনগণকে বলেছে যেন তারা আতঙ্কিত না হয় এবং যদি লক্ষণ দেখা দেয় তবে অবিলম্বে পরীক্ষা করানোর জন্য।

জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দুটি কোভিড মৃত্যু

মহারাষ্ট্রে এই বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত কোভিড-সংক্রান্ত মোট দুটি মৃত্যু হয়েছে। যদিও এই দুই রোগীর অবস্থা আলাদা ছিল কারণ তারা আগে থেকেই গুরুতর রোগে আক্রান্ত ছিল, যাকে মেডিকেল ভাষায় কো-মর্বিড বলা হয়। একজন রোগীর হাইপোক্যালসিমিয়া আক্রান্তের সাথে নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম ছিল, যা একটি গুরুতর কিডনির রোগ, অন্য রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। এই কারণে, কোভিড সংক্রমণ তাদের স্বাস্থ্যের উপর আরও খারাপ প্রভাব ফেলেছে।

সরকার স্পষ্ট করেছে যে সাধারণ ও সুস্থ মানুষের জন্য কোভিডের ঝুঁকি এখনও খুবই কম। তবে, আগে থেকে যেকোনো ধরনের গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেশি সতর্ক ও সাবধান থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধির বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। এছাড়াও, যদি কারও কোভিডের লক্ষণ দেখা দেয় তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা জরুরী যাতে সময়মতো চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং জটিলতা থেকে বাঁচা যায়।

রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি ও নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া

মহারাষ্ট্র সরকার বর্তমানে সম্পূর্ণ সতর্কতা ও প্রস্তুতি নিয়ে কোভিডের নিরীক্ষণ করছে। রাজ্যে আইএলআই (ইনফ্লুয়েঞ্জা-সদৃশ রোগ) এবং এসএআরআই (গুরুতর তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ) এর সন্দেহজনক ঘটনার উপর কঠোর নজর রাখা হচ্ছে। এই রোগীদের কাছ থেকে নমুনা নিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে যাতে সংক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

এছাড়াও, মহারাষ্ট্র সরকার কোভিড পজিটিভ কেসগুলির জিনোম সিকোয়েন্সিংও করছে। এই প্রক্রিয়াটি ভাইরাসের নতুন বা পরিবর্তিত ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করতে সহায়তা করে। এই কাজের জন্য পুনের বি. জে. মেডিকেল কলেজ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি), পুনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি ভাইরাসের পরিবর্তিত প্রকৃতির উপর নজর রাখতে এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর কৌশল তৈরি করতে সহায়তা করবে।

দেশের অন্যান্য রাজ্যেও কি কেস বাড়ছে?

মহারাষ্ট্র ছাড়াও দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যেও কোভিডের কিছু ঘটনা সামনে আসছে। যদিও এই রাজ্যগুলিতে এখনও পরিস্থিতি গুরুতর নয় এবং অনেক সংখ্যক রোগী পাওয়া যায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি পরিবর্তন এবং ভাইরাল রোগের প্রাদুর্ভাব সাধারণ, তাই এই বৃদ্ধি কিছুটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে। কিন্তু সরকার বলেছে এই পরিস্থিতিকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় এবং সবাই সতর্ক থাকবে।

এছাড়াও, কিছু বিদেশী দেশেও কোভিড কেসে সামান্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। এই কারণেই ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ সতর্ক এবং প্রতিটি পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রস্তুত। তারা নিরন্তর নজরদারি করছে এবং জনগণের কাছে আবেদন করছে যাতে তারা কোভিড নিয়ম মেনে চলে, যাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করা যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।

জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা

স্বাস্থ্য বিভাগ জনগণের কাছে আবেদন করেছে যেন তারা আতঙ্কিত না হয়, কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন করে। যে কোনও ধরণের লক্ষণ অনুভব করলে নিকটস্থ হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নীচের বিষয়গুলির বিশেষ যত্ন নিন:

  • জনবহুল স্থানে মাস্ক পরুন।
  • বারবার হাত ধুয়ে ফেলুন অথবা স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
  • যদি কাশি, জ্বর, সর্দি বা শ্বাসকষ্ট হয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • সুস্থ খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখুন।
  • সরকারী নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন এবং গুজব থেকে বিরত থাকুন।

কোভিড কেস বৃদ্ধির মধ্যে সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে মাস্ক পরুন, হাত পরিষ্কার রাখুন এবং ভিড় থেকে দূরে থাকুন। সময়মতো পরীক্ষা এবং চিকিৎসা রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সাবধানতার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং আমাদের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারি।

Leave a comment