সুন্দর ও সুস্থ চুল পেতে সকলেরই ইচ্ছে থাকে। বিশেষ করে আজকের দূষণ, চাপ ও ভুল খাবারের কারণে চুল খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল, শুষ্ক ও ভেঙে পড়তে শুরু করে। শুধু শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুলের যত্ন সম্পূর্ণ হয় না। চুলকে সত্যিই সুস্থ, কোমল ও শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ও সঠিক চুলের যত্নের রুটিন গ্রহণ করা জরুরি।
রাতে ঘুমোনোর সময় আমাদের চুল নিজেদের মেরামত করে। তাই রাতে ঘুমোনোর আগে যত্ন নেওয়া চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই লেখায় আমরা আপনাকে বলবো যে রাতে ঘুমোনোর আগে আপনি কোন ছয়টি বিশেষ কাজ করতে পারেন, যার ফলে আপনার চুল মখমলী ও সুস্থ হবে।
হালকা তেল বা সিরাম দিয়ে চুলকে পুষ্টি দিন
রাতে ঘুমোনোর আগে চুলে হালকা ও প্রাকৃতিক তেল বা ওয়াটার-বেসড সিরাম লাগানো অত্যন্ত উপকারী। কারণ রাতের বেলায় চুলের বৃদ্ধি ও মেরামত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে, এই সময় পুষ্টি দেওয়ার ফলে চুল শক্তিশালী ও সুস্থ হয়। নারকেল তেল, বাদাম তেল বা জলপাই তেল চুলের জন্য উপকারী এবং আপনি এগুলি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন।
যদি আপনার স্ক্যাল্প অত্যন্ত তৈলাক্ত হয়, তবে তেলের পরিবর্তে ওয়াটার-বেসড সিরাম ব্যবহার করুন। এটি চুলকে ভারী বা চिपচিপে করে তোলার ছাড়া পুষ্টি দেয়। তেল বা সিরাম চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ধীরে ধীরে লাগান এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়ুন। এর ফলে আপনার চুল রাতভর পুষ্ট হবে এবং সকালে নরম ও শক্তিশালী অনুভূত হবে।
রাতে ঘুমোনোর আগে চুল ভালো করে আঁকুন
রাতে ঘুমোনোর আগে চুল ভালো করে আঁকা অত্যন্ত জরুরি কারণ জড়োজড়ো চুল ঘুমের সময় আরও বেশি ভেঙে যেতে পারে এবং দুর্বলও হতে পারে। তাই চুলকে ধীরে ধীরে, জোর না লাগিয়ে কাঁটা দিয়ে আঁকুন যাতে চুলের গোড়ায় ক্ষতি না হয় এবং চুল ভাঙা থেকে বাঁচে।
এর জন্য মোটা দাঁতের কাঁটা ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো কারণ এটি চুলকে টানা ছাড়া সহজেই আঁকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি কাঠের কাঁটা চুলের জন্য বিশেষ উপকারী কারণ এটি স্ট্যাটিক ইলেক্ট্রিসিটি কমায় এবং চুলে ক্ষতি করে না। রাতে ধীরে ধীরে এবং সাবধানে চুল আঁকানো চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
সিল্ক বা স্যাটিনের তোশকের কভার ব্যবহার করুন
আমাদের ঘুমের তোশক আমাদের চুলের স্বাস্থ্যের উপর অনেক প্রভাব ফেলে। যদি আমরা কটন বা সাধারণ কাপড়ের তোশক ব্যবহার করি, তাহলে তাতে চুলে বেশি ঘর্ষণ হয়, যার ফলে চুল শুষ্ক, ফ্রিজি এবং দ্রুত ভেঙে পড়তে শুরু করে। এর ফলে চুলের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা কমে যায়।
এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য সিল্ক বা স্যাটিনের তোশকের কভার ব্যবহার করা অত্যন্ত উপকারী। এই বিশেষ উপাদান চুলে ঘর্ষণ কমায়, যার ফলে চুল বেশি ভেঙে না পড়ে এবং কোমল থাকে। সিল্ক বা স্যাটিনের কভার দিয়ে আপনার চুলের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।
লিভ-ইন কন্ডিশনার বা ওভারনাইট হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন
যদি আপনার চুল শুষ্ক, নিষ্প্রাণ ও দুর্বল মনে হয়, তাহলে রাতে ঘুমোনোর আগে লিভ-ইন কন্ডিশনার বা ওভারনাইট হেয়ার মাস্ক লাগানো অত্যন্ত উপকারী। এগুলি আপনার চুলকে গভীরভাবে পুষ্টি দেয় এবং তাদের আর্দ্রতা দীর্ঘ সময় ধরে বজায় রাখে। এর ফলে চুল কোমল, সুস্থ ও উজ্জ্বল দেখায়।
আপনি ঘরেও অ্যালোভেরা জেল ও মধু দিয়ে একটি সহজ হোমমেড হেয়ার মাস্ক তৈরি করতে পারেন। এটি চুলে লাগিয়ে রাতভর রেখে দিন, সকালে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে চুলে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা পায় এবং তারা দ্রুত ভেঙেও পড়ে না। এই পদ্ধতি চুলের শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে।
চুলকে ढীলা পোনিটেইল বা ব্রেডে বাঁধুন
রাতে ঘুমোনোর সময় চুল খোলা রাখা ঠিক নয় কারণ এতে চুল বেশি ভেঙে যায় এবং জড়োজড়ো হয়। তাই ঘুমোনোর আগে চুলকে ढীলা পোনিটেইল বা ব্রেডে বাঁধা উচিত। এই পদ্ধতি চুলকে সুরক্ষিত রাখে এবং তাদের ভাঙা থেকে রক্ষা করে।
মনে রাখবেন যে পোনিটেইল বা ব্রেড খুব টাইট করা উচিত নয়, কারণ টাইট করলে মাথায় ব্যথা হতে পারে এবং চুলে ক্ষতি হয়। ढীলা পোনিটেইল চুলকে আরাম দেয় এবং সকালে চুল কম জড়োজড়ো হবে, যার ফলে তাদের সহজেই পরিচর্যা করা যাবে।
রাতে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ অবশ্যই করুন
রাতে ঘুমোনোর আগে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা চুলকে শক্তিশালী ও সুস্থ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৫ থেকে ১০ মিনিট আঙুল দিয়ে হালকা ম্যাসাজ করলে চুলের বৃদ্ধি বেড়ে যায়।
ম্যাসাজের জন্য আপনি হালকা তেল বা ওয়াটার-বেসড সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুল পুষ্টি পায় এবং মাথার ত্বকও তাজা অনুভব করে। পাশাপাশি, স্ক্যাল্প ম্যাসাজ চাপ কমায় এবং আপনার ঘুমও ভালো হয়, যার ফলে আপনি সারাদিন তাজা অনুভব করেন।
এটি চাপ কমায় এবং ঘুমও ভালো হয়।
চুলের স্বাস্থ্য শুধুমাত্র বহিরাগত যত্ন নয়, বরং সঠিক জীবনযাত্রা ও খাবারের উপরও নির্ভর করে। চুলকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখার জন্য প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি, শরীর ও চুলে আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করাও প্রয়োজন। চাপ কমাতে নিয়মিত যোগ ও ধ্যান করা উপকারী। এছাড়াও, চুলকে তীব্র রোদ ও দূষণ থেকে রক্ষা করা উচিত কারণ এতে চুল দুর্বল ও শুষ্ক হতে পারে। তাই ভালো ফলাফলের জন্য জীবনযাত্রায় এই পরিবর্তনগুলি আনার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
রাতে ঘুমোনোর আগে চুলের সঠিক যত্ন আপনাকে মখমলী, কোমল ও সুস্থ চুল দিতে সাহায্য করে। উপরে উল্লেখিত ৬ টি সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি আপনার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং নিজেই পার্থক্য অনুভব করুন। নিয়মিত তেল বা সিরাম লাগানো, চুল আঁকানো, সিল্ক তোশক ব্যবহার, ওভারনাইট মাস্ক, ढীলা পোনিটেইল ও স্ক্যাল্প ম্যাসাজের মতো ছোট ছোট উপায় আপনার চুলকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। এর সাথে সুস্থ খাবার এবং চাপমুক্ত জীবনযাত্রার মাধ্যমে আপনার চুলের স্বাস্থ্য দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকবে।