গ্রীষ্মকালে ধুলো, রোদ এবং দূষণের কারণে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়, এবং চোখকে সুরক্ষিত রাখার জন্য কোন সহজ উপায় অবলম্বন করা যায় এবং সংক্রমণ থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে জানতে চাই। গ্রীষ্মকাল শুধুমাত্র ঠান্ডা জিনিসপত্র এবং তাজা ফল নিয়ে আসে না, এটি অনেক স্বাস্থ্য সমস্যাও সঙ্গে করে আনে।
এদের মধ্যে একটি হল চোখের সংক্রমণ, যা গ্রীষ্মকালে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তীব্র রোদ, ধুলো-ময়লা, ঘাম এবং ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসার ফলে চোখের ক্ষতি হতে পারে। আর গ্রীষ্মে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি কেন বেড়ে যায় এবং এর থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায়।
গ্রীষ্মে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি কেন বেড়ে যায়?
- তীব্র রোদ এবং UV রশ্মি: গ্রীষ্মে সূর্যের তীব্র রশ্মি চোখের সূক্ষ্ম ত্বক এবং রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। UV রশ্মি চোখে জ্বালা, প্রদাহ, শুষ্কতা এবং সংক্রমণের কারণ হতে পারে। সূর্যের তীব্র আলোতে বেশি সময় কাটালে চোখের সুরক্ষা কমে যায়, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
- ধুলো এবং দূষণ: গ্রীষ্মে বাতাসে ধুলো এবং দূষণের পরিমাণ বেশি বেড়ে যায়। এই কণাগুলি যখন চোখে প্রবেশ করে তখন জ্বালা, চুলকানি, লালচেভাব এবং প্রদাহের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে কনজাংটিভাইটিস (চোখের সংক্রমণ) এবং অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যা চোখকে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- ঘাম এবং ময়লা হাতে চোখ ছোঁয়া: গ্রীষ্মকালে ঘাম হওয়া স্বাভাবিক। যখন আমরা হাত না ধুয়ে আমাদের চোখ ছুঁই বা ঘষি তখন তাতে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে, যা চোখে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যদি এই সমস্যা ক্রমাগত থাকে তাহলে এটি আরও গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে।
সংক্রমিত জলের ব্যবহার: গ্রীষ্মে সাঁতার কাটার প্রবণতা বেড়ে যায়। সুইমিং পুলে থাকা ক্লোরিন বা দূষিত জল চোখে গিয়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এটি চোখের সুরক্ষাকে দুর্বল করতে পারে, বিশেষ করে যদি জল পরিষ্কার না হয়।
চোখের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়
- UV প্রতিরোধী চশমা পরুন: গ্রীষ্মে রোদ থেকে রক্ষা পেতে সর্বদা UV প্রতিরোধী চশমা পরুন। এই চশমাগুলি কেবলমাত্র আপনার চোখকে তীব্র রোদ থেকে রক্ষা করে না, বরং ধুলো এবং দূষণ থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও, এটি চোখের ক্লান্তি কমায় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়।
- চোখ ছোঁয়া থেকে বিরত থাকুন: প্রায়শই আমরা হাত না ধুয়ে আমাদের চোখ ছুঁই, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস চোখে প্রবেশ করতে পারে। এটিই চোখে সংক্রমণ ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ। সর্বদা হাত ধোওয়ার পরেই চোখ ছুঁতে বা ঘষতে হবে, বিশেষ করে যদি আপনার বাইরে বা জনসাধারণের স্থানে থাকার সুযোগ থাকে।
- চোখ ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন: দিনে অন্তত ২-৩ বার চোখ ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেললে চোখের তাজাভাব ফিরে আসে এবং কোনো ধুলোবালি দূর করতে সাহায্য করে। এটি চোখের জ্বালা এবং প্রদাহ কমায়, পাশাপাশি দূষণ এবং ধুলোও বের করে দেয়।
- সাঁতার কাটার পর চোখ ধুয়ে ফেলুন: গ্রীষ্মে সাঁতার কাটার ফলে ক্লোরিনযুক্ত বা দূষিত জল চোখে যেতে পারে, যার ফলে সংক্রমণ হতে পারে। সাঁতার কাটার পরপরই আপনার চোখ পরিষ্কার জলে ধুয়ে ফেলুন। যদি চোখে জ্বালা বা অন্য কোনও সমস্যা হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- স্ক্রিনের সঠিক ব্যবহার করুন: আজকাল আমরা দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং টিভি স্ক্রিনে সময় কাটাই, যার ফলে চোখে শুষ্কতা এবং ক্লান্তি হতে পারে। এড়াতে '২০-২০-২০' নিয়ম অনুসরণ করুন। এর অর্থ হল প্রতি ২০ মিনিটে ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করে কোনও দূরবর্তী বস্তু দেখুন। এতে আপনার চোখের পেশীগুলিতে আরাম পায় এবং শুষ্কতা কমে।
- অন্যের জিনিসপত্র ব্যবহার করবেন না: কখনও অন্যের তোয়ালে, কাজল বা রুমাল ব্যবহার করবেন না। এগুলি থেকে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ছড়াতে পারে, যা চোখে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে জনসাধারণের স্থানে এই অভ্যাস আরও বেশি বিপজ্জনক হতে পারে।
চোখের যত্ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
গ্রীষ্মে চোখের যত্ন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ এই মৌসুমে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তীব্র রোদ, ধুলো-ময়লা এবং দূষণের মতো কারণে আমাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি, ঘাম এবং ময়লা হাতে চোখ ছোঁয়ার ফলেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। যদি আমরা কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করি তাহলে এই সমস্যাগুলি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
যেমন চোখ বারবার ধোয়া, ময়লা হাতে চোখ ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা এবং UV প্রতিরোধী চশমা পরা। এছাড়াও, যদি আপনার চোখে জ্বালা, প্রদাহ বা কোনও ধরণের অস্বস্তি বোধ হয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। এইভাবে, আপনি আপনার চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে পারবেন এবং গ্রীষ্মে হওয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারবেন।