নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

🎧 Listen in Audio
0:00

আজকাল নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিডের সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায়শই মনে করা হয় যে এই সমস্যাটি শুধুমাত্র পুরুষদের হয়, কিন্তু গবেষণা দেখায় যে নারীদের মধ্যেও এটি বেশ সাধারণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, জয়েন্ট এবং গোড়ালির ব্যথা, প্রদাহ, চলাফেরায় অসুবিধা ইত্যাদি ইউরিক এসিড বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিড কেন বৃদ্ধি পায়, এর কারণগুলি কী এবং কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ইউরিক এসিড কী?

ইউরিক এসিড এক ধরণের রাসায়নিক যা শরীরে পিউরিন নামক পদার্থের ভাঙ্গন থেকে তৈরি হয়। পিউরিন প্রধানত প্রোটিনযুক্ত খাদ্যে পাওয়া যায়, যেমন মাংস, মাছ, ডাল ইত্যাদি। যখন শরীর এই পদার্থগুলি হজম করে তখন ইউরিক এসিড তৈরি হয়। সাধারণ অবস্থায় এই ইউরিক এসিড রক্তের মাধ্যমে কিডনিতে পৌঁছায় এবং প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু যখন ইউরিক এসিড অতিরিক্ত তৈরি হয় বা বের হতে বাধা পায়, তখন এটি রক্তে জমা হয় এবং জয়েন্টে ক্রিস্টাল তৈরি করে গাউট (গর্ভবতী) जैसी সমস্যা সৃষ্টি করে।

নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিডের সমস্যা কেন বেশি হয়?

পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিডের সমস্যা বেশি হওয়ার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে, যার মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন, হজম প্রক্রিয়া এবং জীবনযাত্রা প্রধান।

১. হরমোনাল পরিবর্তনের প্রভাব

নারীদের মধ্যে সেক্স হরমোন, বিশেষ করে এস্ট্রোজেন, ইউরিক এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এস্ট্রোজেন ইউরিক এসিডকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজে সাহায্য করে। কিন্তু নারীদের, বিশেষ করে পিরিয়ডের সময় বা মেনোপজের পর, এই হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে, যার ফলে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।

  • পিরিয়ডের সময় হরমোনাল ভারসাম্যহীনতার কারণে ইউরিক এসিডের সমস্যা বাড়তে পারে।
  • মেনোপজের পর এস্ট্রোজেনের ঘাটতির ফলে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা নারীদের গাউট जैसी রোগের জন্য আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

২. খারাপ হজম প্রক্রিয়া এবং মেটাবলিজম

নারীদের মধ্যে হজমের সমস্যা বেশি হয়, যার ফলে শরীর প্রোটিন এবং পিউরিনকে সঠিকভাবে হজম করতে পারে না। মেটাবলিক সিন্ড্রোম, ডায়াবেটিস, লিভার এবং কিডনির সাথে সম্পর্কিত রোগগুলিও ইউরিক এসিডের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। যখন হজম প্রক্রিয়া দুর্বল হয়, তখন ইউরিক এসিড শরীরে জমা হতে থাকে।

৩. উপবাস এবং অনিয়মিত খাবার

ভারতে নারীরা বেশি উপবাস রাখে বা পূজা-পাঠের সময় খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন আসে। এর ফলে শরীরের মেটাবলিজমে প্রভাব পড়ে এবং ডাইজেস্টিভ এনজাইম কম তৈরি হতে শুরু করে। এই এনজাইমের অভাবের কারণে প্রোটিন হজমের প্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়, যার ফলে ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।

ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা

নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা 2.4 থেকে 6.0 mg/dL ধরা হয়। যদি এই মাত্রা বেশি হয় তবে তাকে হাইপারইউরিসিমিয়া বলা হয়, যা গাউট এবং জয়েন্টের ব্যথার প্রধান কারণ হতে পারে।

যদি আপনার জয়েন্টে বারবার ব্যথা, প্রদাহ বা চলাফেরায় অসুবিধা হয় তবে এটি ইউরিক এসিড বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

নারীদের জন্য ইউরিক এসিড বৃদ্ধির প্রধান কারণ

  • হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা: এস্ট্রোজেনের ঘাটতির ফলে ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পায়।
  • হজমতন্ত্রের দুর্বলতা: খারাপ হজমের কারণে শরীর পিউরিনকে সঠিকভাবে ভাঙতে পারে না।
  • জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, উপবাস ইত্যাদির ফলে মেটাবলিজম প্রভাবিত হয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী রোগ: ডায়াবেটিস, লিভার রোগ, কিডনির সমস্যা ইউরিক এসিড বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • চাপ এবং মানসিক চাপ: স্ট্রেসের ফলে শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন হয় যা ইউরিক এসিডকে প্রভাবিত করে।

ইউরিক এসিড বৃদ্ধি পেলে কী করবেন?

  1. সমতাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন: অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার, লাল মাংস, মদ এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা ফল, শাকসবজি এবং সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি বেশি খান।
  2. পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করুন যাতে ইউরিক এসিড প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।
  3. নিয়মিত ব্যায়াম করুন: যোগ, হাঁটা এবং হালকা ব্যায়াম মেটাবলিজমকে উন্নত করে।
  4. ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন: ইউরিক এসিডের মাত্রা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করান এবং ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করুন।
  5. উপবাসের সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন: দীর্ঘ সময় ধরে অনাহারে না থেকে ছোট ছোট করে খাবার খান।

নারীরা প্রায়শই জয়েন্ট এবং গোড়ালির ব্যথাকে বয়স বা ক্লান্তির কারণে মনে করে, কিন্তু এটি ইউরিক এসিড বৃদ্ধির লক্ষণ হতে পারে। হরমোনাল পরিবর্তন, হজমের সমস্যা এবং জীবনযাত্রার ভুল অভ্যাস নারীদের মধ্যে ইউরিক এসিডের সমস্যা বাড়ায়। তাই এই সমস্যাটিকে উপেক্ষা করবেন না এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে চলুন। সমতাযুক্ত খাদ্য এবং নিয়মিত জীবনযাত্রা গ্রহণ করে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যায়।

Leave a comment