সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি কলেজ ক্যাম্পাসে নারকীয় অত্যাচার! FIR-এর পর তদন্তে তৎপর কসবা থানার পুলিশ
কলকাতার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ফের বড়সড় অপরাধের ঘটনা। সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের এক ছাত্রী বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে প্রায় রাত ১১টা পর্যন্ত কলেজের গার্ডরুমে আটকে রেখে যৌন নিপীড়নের শিকার হন বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে কসবা থানায় এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রী। অভিযোগের ভিত্তিতে রাতারাতি তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কলেজ ক্যাম্পাসে রাতে কারা কীভাবে প্রবেশ করল? নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন
এই ঘটনার পর থেকেই বড় প্রশ্ন উঠে আসছে কলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। কলেজের উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘বিকেল চারটার পর কলেজ চত্বরে পড়ুয়াদের থাকার অনুমতি নেই। এত রাতে ক্যাম্পাসে কীভাবে ছাত্রছাত্রীরা ঢুকল, সেটাই এখন বড় রহস্য।’’ তিনি আরও জানান, তাঁরা কলেজের দারোয়ানের মাধ্যমে এই খবর পান।
মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পারলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ! লিখিত অভিযোগ এখনও জমা পড়েনি
উপাধ্যক্ষের কথায়, এখনও পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে, মিডিয়া থেকে একের পর এক ফোন কলের মাধ্যমে তাঁরা ঘটনাটি জানতে পেরেছেন। কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি বিধায়ক অশোক দেবকেও এই ঘটনা জানানো হয়েছে।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়তে পারে ঘটনার সম্পূর্ণ চিত্র, শুরু হয়েছে খতিয়ে দেখা
তদন্তে গতি আনতে ইতিমধ্যেই কলেজ চত্বরের সমস্ত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার সময় কারা কারা উপস্থিত ছিল, তাদের গতিবিধি, প্রবেশ এবং প্রস্থানের সময়—সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তালবাগান ক্রশিং থেকে নাটকীয় গ্রেফতারি! রাতে বাড়ি থেকে ধরা পড়ে তৃতীয় অভিযুক্ত
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম দু’জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রশিংয়ের সিদ্ধার্থশঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। একজনকে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে এবং অপরজনকে ৭টা ৩৫ মিনিটে ধরা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১২টায় বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তৃতীয় অভিযুক্তকে। তিনজনের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।
CNMC হাসপাতালে নির্যাতিতার মেডিক্যাল টেস্ট, সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান
নির্যাতিতার প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে কলকাতার CNMC হাসপাতালে। এছাড়া প্রত্যক্ষদর্শীদেরও শারীরিক পরীক্ষা এবং বয়ান রেকর্ডের কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের জরুরি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত, সোমবার বসবে প্রশাসনিক বৈঠক
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন গভর্নিং বডির সদস্যরা। কলেজের নিরাপত্তা, ক্যাম্পাসের নিয়মনীতি, এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আটকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সব বিষয়েই আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে।
শহরজুড়ে শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, কড়া শাস্তির আশ্বাস পুলিশের
কলকাতার মতো শহরের অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার পর ছাত্রসমাজ এবং অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। পাশাপাশি, শহরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও নয়া পরিকল্পনা নিচ্ছে প্রশাসন।
রাজ্যবাসী এখন একটাই প্রশ্ন তুলছেন—কলেজ চত্বরে এমন জঘন্য অপরাধ কীভাবে ঘটল? কোথায় প্রশাসনিক ত্রুটি? তদন্তের রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে সবাই।
