বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের দাবিতে একটি দুর্গা মন্দিরকে রেলের জমিতে অবৈধ ঘোষণা করে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের কাছে হিন্দু ধর্মীয় স্থানগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
Bangladesh: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে ফেলার ঘটনাটি আবারও দুই দেশের মধ্যে সংবেদনশীল বিষয়গুলি সামনে এনেছে। মন্দিরটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙার এই ঘটনা কট্টরপন্থী সংগঠনগুলির দাবির ভিত্তিতে ঘটেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবি ও ভিডিওগুলিতে দেখা যাচ্ছে, মা দুর্গার প্রতিমা তখনও মন্দির চত্বরে ছিল, যখন সেটি ভেঙে ফেলা হয়।
রেলওয়ের জমিতে অবৈধ নির্মাণের দাবি
বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্দিরটি ভাঙার দায়িত্ব নিয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মন্দিরটি রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে নির্মিত হয়েছিল, যা ভেঙে ফেলা অপরিহার্য ছিল। মন্দির ভাঙার সময় বিপুল সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল, যাতে কোনো বিক্ষোভ বা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা এড়ানো যায়।
তিন দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হলো কার্যক্রম
জানা গেছে, কট্টরপন্থী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মন্দিরটি সরানোর দাবি জানানো হয়েছিল। এরপর মাত্র তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে বুলডোজার দিয়ে ভাঙার কাজ সম্পন্ন করে। এই দ্রুত পদক্ষেপ এখন ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত প্রতিবাদ জানিয়েছে, স্পষ্ট দাবি জানিয়েছে
ভারত সরকার এই ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের ইউনূস সরকারের কাছে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন যে ভারত এই ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। তিনি বলেন, ধর্মীয় স্থানগুলোকে এভাবে ভেঙে দেওয়া নিন্দনীয়, বিশেষ করে যখন সেখানে স্থাপিত প্রতিমা সরানো হয়নি।
মন্দিরগুলির নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ
রণধীর জয়সওয়াল আরও বলেছেন যে বাংলাদেশে ক্রমাগত এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, যার ফলে সেখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন হিন্দু সম্প্রদায়, তাদের সম্পত্তি এবং ধর্মীয় স্থানগুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
কূটনৈতিক স্তরে ভারতের সক্রিয়তা
ভারত এই বিষয়টিকে কেবল বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। কূটনৈতিক স্তরেও বাংলাদেশকে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারত চায় বাংলাদেশ সরকার এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুক এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করুক।
স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষোভ
ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেক সদস্য এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, এটি কেবল ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে না, বরং সংখ্যালঘুদের অস্তিত্বের উপরও সরাসরি আঘাত হানে। অনেক সামাজিক সংগঠনও এই ঘটনার নিন্দা করেছে।
বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলিও এই পদক্ষেপের ওপর প্রশ্ন তুলেছে। তাদের বক্তব্য, ধর্মীয় স্থান ভাঙার জন্য প্রশাসন যে তৎপরতা দেখায়, সেই একই তৎপরতা যদি দেশের মৌলিক সমস্যাগুলি সমাধানে দেখানো হতো, তবে তা আরও ভালো হতো।