বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব আজ তাঁর বাসভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ করেন। এই অনুষ্ঠানে বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম, কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র পবন খেড়া, এবং সিপিআইএমএল-এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
তেজস্বী যাদব: বিহারে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক শুরু হওয়া ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযান নিয়ে মহাজোট বড় ধরনের প্রশ্ন তুলেছে। এই ইস্যুতে বিরোধী দল ক্ষমতাসীন বিজেপি-জেডিইউ জোটকে তীব্রভাবে নিশানা করে এবং এটিকে দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণির ভোটারদের অধিকার হরণের ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত করে।
বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব তাঁর বাসভবনে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে বিহার কংগ্রেস সভাপতি রাজেশ রাম, দলের মুখপাত্র পবন খেড়া এবং সিপিআইএমএল-এর সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যও উপস্থিত ছিলেন। তেজস্বী বলেন, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক যে সব নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে, সেগুলি গরিব শ্রেণির মানুষের কাছে সহজলভ্য নয়। এমন অবস্থায়, কোটি কোটি মানুষ তাঁদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
তেজস্বীর গুরুতর অভিযোগ
তেজস্বী যাদব এই ভোটার তালিকা যাচাই প্রক্রিয়াকে গভীর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বলেন, বিজেপি-জেডিইউ গরিবদের ভোট কাড়ার পরিকল্পনা করছে। এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত। ২২ বছর পর হঠাৎ ভোটার তালিকার সংশোধন কেন? তাও আবার যখন বিহারে বন্যা ও বৃষ্টির মরসুম চলছে। গরিবদের কাছে কি এত সময় থাকবে যে তারা সব কাগজপত্র জোগাড় করতে পারবে?
তিনি আরও বলেন যে, ২০০৩ সালে যখন এই ধরনের অভিযান চালানো হয়েছিল, তখন তা সম্পন্ন করতে পুরো দু'বছর সময় লেগেছিল, কিন্তু এখন মাত্র দু'মাসের মধ্যে তা সম্পন্ন করার কথা বলা হচ্ছে, যা কার্যত সম্ভবপর বলে মনে হয় না।
কী কী নথিপত্র চাওয়া হচ্ছে?
তেজস্বী যাদবের মতে, কমিশন ভোটারদের কাছ থেকে এমন সব নথি চেয়েছে যা গরিব ও গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের পক্ষে জোগাড় করা কঠিন। উদাহরণস্বরূপ:
- ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী তরুণদের জন্ম সনদের সঙ্গে বাবা-মায়ের জন্ম সনদও জমা দিতে হবে
- ২০ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের নাগরিকত্বের প্রমাণস্বরূপ নথি জমা দিতে হবে
- ৩৯ বছরের বেশি বয়স্ক ভোটারদেরও তাঁদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে
তেজস্বী বলেন, এই নিয়মগুলি আরএসএস-এর এজেন্ডা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে, যাতে দুর্বল শ্রেণির ভোটারদের ভোট দেওয়া থেকে বিরত রাখা যায়।
আধার কার্ডের বিষয়টিও ওঠে
তেজস্বী যাদব স্মরণ করিয়ে দেন যে, কয়েক দিন আগেই নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলেছিল, কিন্তু এই অভিযানে আধার কার্ডকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, যদি আধারকে যুক্ত করতে হয়, তাহলে আধার কেন চলছে না? কেন এত কঠিন নথি চাওয়া হচ্ছে? এটা গরিবদের ভোট কাটার ষড়যন্ত্র।
তেজস্বী একইসঙ্গে আরএসএস-এর উপরও আক্রমণ করেন এবং বলেন যে, সম্প্রতি সংঘের এক বড় নেতা সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা থেকে স্পষ্ট হয় যে এই পুরো বিষয়টি সুপরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে দুর্বল করার চেষ্টা।
নির্বাচনের বছরে কেন উঠছে প্রশ্ন?
বিহারে বিধানসভা নির্বাচন ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা, এবং তার আগে এই ধরনের সংশোধন অভিযান অনেক রাজনৈতিক দলের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের ধারণা, এটি পুরো নির্বাচনী সমীকরণকে প্রভাবিত করতে পারে। তেজস্বী বলেন, যে সব আধিকারিকেরা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কাজ করেছিলেন, তাঁরাই এখন এই সংশোধন প্রক্রিয়াটি পরিচালনা করছেন, যা নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের তরফে এই অভিযোগের উপর আপাতত কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার বক্তব্য, এই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ, যাতে ভুয়ো ভোটারদের বাদ দেওয়া যায় এবং সঠিক ভোটার তালিকা তৈরি করা যায়।