প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার অধীনে ব্যাংক চারটি ভিন্ন বিভাগে ঋণ সরবরাহ করে: শিশু, কিশোর, তরুণ এবং তরুণ প্লাস।
সরকারের মুদ্রা যোজনা এখন আরও বেশি লাভজনক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা ২০১৫ সালে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা (PMMY)-তে এখন ঋণের সীমা বাড়িয়ে ₹২০ লক্ষ করা হয়েছে। আগে যেখানে সর্বোচ্চ ₹১০ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হতো, সেখানে এখন এই সীমা দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল তাদের সাহায্য করা যারা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে চান কিন্তু পুঁজির অভাবের কারণে পিছিয়ে যান।
মুদ্রা যোজনার সুবিধা কারা নিতে পারেন
মুদ্রা যোজনা বিশেষভাবে নন-কর্পোরেট এবং নন-এগ্রিকালচার সেক্টরের ছোট এবং মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য। এই যোজনা বিউটি পার্লার, সাইবার ক্যাফে, মোবাইল মেরামত, বুটিক, মুদি দোকান, ফুড স্টল, টিফিন সার্ভিস, অটো রিকশা, ট্যাক্সি বা যেকোনো ছোট আকারের ব্যবসার জন্য। সরকার চায় যে বেশি সংখ্যক মানুষ স্ব-কর্মসংস্থানের দিকে এগিয়ে আসুক এবং তাদের সাথে অন্যদেরও কর্মসংস্থান দিক।
মুদ্রা ঋণের চারটি বিভাগ
মুদ্রা যোজনার অধীনে বর্তমানে চারটি বিভাগে ঋণ দেওয়া হচ্ছে:
- শিশু: এই বিভাগের অধীনে, সর্বাধিক ₹৫০,০০০ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। এটি তাদের জন্য যারা প্রথমবারের মতো ব্যবসা শুরু করছেন এবং যাদের শুরুতে সামান্য অর্থের প্রয়োজন।
- কিশোর: এতে ₹৫০,০০১ থেকে ₹৫ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। এটি তাদের উদ্যোক্তাদের জন্য যারা কিছু সময়ের জন্য তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন এবং এখন এটি প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছেন।
- তরুণ: এই বিভাগে ₹৫ লক্ষ থেকে ₹১০ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। এটি তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ বা নতুন শাখা খোলার জন্য যারা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত।
- তরুণ প্লাস: এই স্কিমে সম্প্রতি যোগ করা একটি নতুন বিভাগ, যেখানে ₹১০ লক্ষ থেকে ₹২০ লক্ষ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। তবে, এটি শুধুমাত্র সেই উদ্যোক্তাদের জন্য যারা আগে ‘তরুণ’ বিভাগের অধীনে ঋণ নিয়েছেন এবং সময়মতো পরিশোধ করেছেন।
ঋণের জন্য কোনো গ্যারান্টি বা নিরাপত্তা নেই
মুদ্রা যোজনার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এতে কোনো ধরনের গ্যারান্টি বা নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। অর্থাৎ, কোনো কিছু বন্ধক না রেখে, সম্পত্তি না দেখিয়ে আপনি ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন। এই সুবিধাটি বিশেষভাবে ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক, যারা প্রায়শই জামিনের অভাবে ঋণ নিতে পারেন না।
ঋণ পরিশোধের জন্য কত সময় পাওয়া যায়
স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর সময় পাওয়া যায়। এর মধ্যে, প্রথম ৬ মাসের একটি মওকুফ, অর্থাৎ কিস্তি থেকে ছাড়ের সময়কাল থাকে। অন্যদিকে, ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য ৭ বছর সময় দেওয়া হয়, যেখানে ১২ মাস পর্যন্ত মওকুফ সুবিধা পাওয়া যায়।
এর মানে হল, আপনি প্রথমে এক বছর পর্যন্ত ব্যবসা স্থিতিশীল করতে মনোযোগ দিতে পারেন এবং তারপরে নিয়মিত কিস্তি শুরু হয়।
সুদের হারের ব্যবস্থা কী
সুদের হারের কথা বললে, মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণের জন্য ফ্লোটিং রেট সিস্টেম কার্যকর হয়। স্টেট ব্যাংক অনুসারে, ব্যাংক EBLR অর্থাৎ External Benchmark Lending Rate-এর ভিত্তিতে সুদ নির্ধারণ করে এবং এতে ৩.২৫ শতাংশ অতিরিক্ত মার্জিন যোগ করা হয়।
যদি এসবিআই-এর কথা বলি, তাহলে বর্তমানে EBLR প্রায় ৯ শতাংশের কাছাকাছি, তাই সব মিলিয়ে সুদের হার ১২.২৫ শতাংশের কাছাকাছি হয়। যদিও এটি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সামান্য উপরে-নিচে হতে পারে।
কোথা থেকে এবং কীভাবে মুদ্রা ঋণ পাওয়া যেতে পারে
মুদ্রা ঋণ পাওয়ার জন্য যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক, ক্ষুদ্র ঋণ ব্যাংক বা মাইক্রো-ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। অনলাইন আবেদনের জন্য www.udyamimitra.in পোর্টালেও সুবিধা উপলব্ধ রয়েছে।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যবসার পরিকল্পনা, আয়কর প্রমাণপত্র, আবাসিক প্রমাণপত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের ছবি। যদি আগে থেকেই ব্যবসা চলে, তাহলে তার রেজিস্ট্রেশন এবং জিএসটি ডিটেইলসও দিতে হয়।
ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বড় স্বস্তি
মুদ্রা যোজনার অধীনে ঋণ পাওয়ার ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসায়ী, শিল্পী, মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি বড় সহায় হয়েছে। বিশেষ বিষয় হল, এতে ঋণের প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং আবেদনকারীর ক্রেডিট ইতিহাসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যাংক কর্মীরাও এই প্রকল্পের অধীনে আবেদনগুলিকে অগ্রাধিকার দেন কারণ এটি একটি জাতীয় স্তরের প্রকল্প এবং সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এর ওপর নজর রাখা হয়।
প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়েছে
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের অধীনে সারা দেশে কোটি কোটি মানুষকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী তারা, যারা প্রথমবারের মতো ব্যবসার জগতে পা রাখছেন। মহিলা উদ্যোক্তাদের সংখ্যাও এই প্রকল্পে দ্রুত বাড়ছে, যার ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।