২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ভারতকে S-400 সরবরাহ করবে রাশিয়া

২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ভারতকে S-400 সরবরাহ করবে রাশিয়া
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

রাশিয়া ২০২৬-২৭ সালের মধ্যে ভারতকে S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের অবশিষ্ট দুটি স্কোয়াড্রন সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইতিমধ্যে তিনটি স্কোয়াড্রন পাওয়া গেছে। এই সিস্টেমটি পাকিস্তান ও চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

S-400 সিস্টেম: সম্প্রতি পুলওয়ামা সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত কর্তৃক পরিচালিত "অপারেশন সিন্দুর"-এ S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অভিযানের সময়, পাকিস্তান থেকে সম্ভাব্য বিমান হামলার হুমকিকে S-400 সময়মতো নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এই কারণে, এই অত্যাধুনিক সিস্টেমের গুরুত্ব আবারও আলোচনায় এসেছে।

২০২৬-২৭ সালের মধ্যে অবশিষ্ট স্কোয়াড্রন পাওয়া যাবে

রাশিয়া ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ভারতকে আশ্বাস দিয়েছে যে তারা ২০২৬ এবং ২০২৭ সালের মধ্যে S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের অবশিষ্ট দুটি স্কোয়াড্রনের সরবরাহ সম্পন্ন করবে। রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসোভ এবং ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর মধ্যে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)-এর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকের সময় এই বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়।

ভারত তিনটি স্কোয়াড্রন পেয়েছে

২০১৮ সালে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে ভারতকে মোট পাঁচটি S-400 স্কোয়াড্রন পাওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, তাদের সরবরাহ ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এতে বিলম্ব হয়। ইতিমধ্যে তিনটি স্কোয়াড্রন ভারতকে হস্তান্তর করা হয়েছে, যা ভারতীয় বিমান বাহিনী কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে মোতায়েন করেছে।

ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হচ্ছে

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং এই বৈঠকের পর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, "ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।" সূত্রানুসারে, চতুর্থ স্কোয়াড্রন আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যে এবং পঞ্চম স্কোয়াড্রনটি ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত পাবে।

S-400-এর প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য কী?

S-400 ট্রায়াম্ফ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হল রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত মাল্টি-লেয়ার অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। প্রতিটি স্কোয়াড্রনে দুটি ফায়ারিং ইউনিট থাকে এবং প্রতিটি ইউনিটে চারটি লঞ্চার স্থাপন করা হয়। একটি স্কোয়াড্রনে মোট ১২৮টি ক্ষেপণাস্ত্র থাকে। এর আঘাত হানার ক্ষমতা ১২০ কিলোমিটার থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এই সিস্টেম ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং যুদ্ধবিমান শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম।

এতে একটি দীর্ঘ-পাল্লার রাডার সিস্টেম রয়েছে যা একই সাথে ১০০টির বেশি লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করতে পারে। এছাড়াও, এই সিস্টেমটি সব আবহাওয়ায় ব্যবহারের জন্য পরিবহন ও লঞ্চার যানগুলির সাথে স্থাপন করা হয়।

ভারতের কাছে থাকা S-400গুলি কোথায় মোতায়েন করা হয়েছে?

ভারতীয় বিমান বাহিনী S-400-এর প্রথম তিনটি স্কোয়াড্রন চীন ও পাকিস্তানের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে মোতায়েন করেছে। একটি স্কোয়াড্রন পাঞ্জাবে, একটি উত্তরাখণ্ড বা উত্তর-পূর্বের কোনো অংশে এবং একটি লাদাখ অঞ্চলের কাছে মোতায়েন করা হয়েছে। এর ফলে ভারতের আকাশ নিরাপত্তা অনেক শক্তিশালী হয়েছে এবং শত্রুপক্ষের যে কোনো বিমান হামলাকে আগেই নস্যাৎ করা যেতে পারে।

S-400 থেকে পাকিস্তান ও চীনকে কড়া বার্তা

পুলওয়ামা হামলার পর ভারত যেভাবে অপারেশন সিন্দুর সম্পন্ন করেছে, তাতে S-400-এর ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পাকিস্তানের দিক থেকে হওয়া বিমান অনুপ্রবেশের সমস্ত সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছে। একই সাথে এটিও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভারত এখন কেবল সন্ত্রাসী ঘটনার জবাব দেবে না, বরং কৌশলগতভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে।

S-400 সরবরাহে বিলম্বের কারণ কী?

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সামরিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বেশ প্রভাব পড়েছে। যুদ্ধের কারণে রাশিয়াকে তাদের অভ্যন্তরীণ সামরিক চাহিদাগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। এর ফলে ভারতসহ অন্যান্য দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে প্রভাব পড়েছে। তবে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব শক্তিশালী রয়েছে এবং এর ফলস্বরূপ সরবরাহের নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

Leave a comment