INS তমাল ভারতের নতুন স্টেলথ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট, যা ব্রাহ্মোস মিসাইল, অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার এবং রাডার ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত হয়ে শত্রুর S-500-এর মতো সিস্টেমকেও পরাস্ত করতে সক্ষম।
INS তমাল: ভারত এখন সমুদ্র সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ শক্তি নিয়ে সজ্জিত হতে চলেছে। ১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে ভারতীয় নৌবাহিনীকে অর্পণ করা হবে এমন একটি যুদ্ধজাহাজ, যা শুধু অত্যাধুনিক ব্রাহ্মোস মিসাইল দিয়ে সজ্জিত হবে না, বরং এর ডিজাইন এবং প্রযুক্তি এটিকে শত্রুর রাডার থেকেও অদৃশ্য করে রাখবে। এই যুদ্ধজাহাজের নাম INS তমাল, যা আগামী বছরগুলোতে ভারতের সমুদ্র কৌশলতে 'গেম চেঞ্জার'-এর ভূমিকা নিতে পারে।
এই ফ্রিগেট কিরভাক-III ক্লাসের অংশ, যা ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে ডিজাইন ও নির্মাণ করেছে। INS তমাল কেবল প্রযুক্তির প্রতীক নয়, বরং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক নিরাপত্তা সমীকরণের মধ্যে ভারতের শক্তিশালী সামরিক কূটনীতিরও বার্তা দেয়।
INS তমালের গঠন ও ডিজাইন: রাডারের চোখ থেকে দূরে
INS তমাল একটি স্টেলথ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৫ মিটার এবং ওজন প্রায় ৩৯০০ টন। এটি রাশিয়ায় ভারতীয় ও রুশ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে। এটি কিরভাক ক্লাসের শেষ জাহাজ যা রাশিয়ায় তৈরি হয়েছে। এর পরের দুটি ফ্রিগেট ভারতে গোয়া শিপইয়ার্ডে তৈরি হবে।
এই জাহাজটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি শত্রুর রাডার প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে সক্ষম, যার ফলে এর উপস্থিতি সনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ব্রাহ্মোসের শক্তিতে অপরাজেয়
INS তমালের সবচেয়ে বড় শক্তি হল এতে মোতায়েন করা ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। এই মিসাইল ২.৮ ম্যাক গতিতে ওড়ে এবং এর পাল্লা ২৯০ থেকে 450 কিলোমিটার পর্যন্ত। অর্থাৎ পাকিস্তানের করাচির মতো স্থানগুলি এর সরাসরি আঘাতের মধ্যে রয়েছে।
ব্রাহ্মোস মিসাইলের বৈশিষ্ট্য হল এর নির্ভুলতা, গতি এবং কৌশলগত আঘাত হানার ক্ষমতা। সমুদ্রের আক্রমণে এটি শত্রুর এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, যুদ্ধজাহাজ এবং সমুদ্র ঘাঁটিগুলি এক ঝটকায় ধ্বংস করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিমান এবং ডুবোজাহাজ হামলা থেকে সুরক্ষা
INS তমাল-এ কামভ-২৮ এবং কামভ-৩১-এর মতো দুটি উন্নত হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হবে। কামভ-২৮ অ্যান্টি-সাবমেরিন অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে কামভ-৩১ প্রাথমিক সতর্কীকরণ মিশনে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, এই জাহাজটি কেবল ভূপৃষ্ঠে যুদ্ধ করতে পারে তা নয়, বায়ু এবং সমুদ্রের নিচ থেকে আসা বিপদ থেকেও সম্পূর্ণরূপে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।
এছাড়াও, এতে আধুনিক এয়ারবোর্ন আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম, অ্যান্টি-সাবমেরিন টর্পেডো, এবং ইনফ্রারেড-ভিত্তিক স্টেলথ সেন্সর থাকবে যা এটিকে শত্রুর আধুনিক ফাইটার জেট যেমন F-35, J-35A, রাফাল এবং F-16 থেকেও সুরক্ষিত রাখবে।
S-500-এর মতো উন্নত সিস্টেমকেও হার মানায়
বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম S-500-ও INS তমালের স্টেলথ প্রযুক্তি এবং সমুদ্রের অবস্থানের কারণে এর উপস্থিতি সনাক্ত করতে পারবে না। খোলা সমুদ্রে এর গতি, অপ্রতিরোধ্যতা এবং মিসাইল সজ্জিত ক্ষমতা এটিকে S-500-এর মতো বিপজ্জনক সিস্টেমের নাগালের বাইরে রাখে। এটি স্পষ্ট যে ভারত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে যা যে কোনও হুমকির জবাব দিতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ভারত-রাশিয়া অংশীদারিত্বের শক্তিশালী উদাহরণ
INS তমাল ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ২০১৬ সালে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ, যার মোট খরচ ছিল ₹২১,০০০ কোটি। এই চুক্তির অধীনে চারটি স্টেলথ ফ্রিগেট তৈরি করার কথা ছিল। প্রথম দুটি ফ্রিগেট রাশিয়াতে তৈরি করে ভারতকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকি দুটি ভারতের গোয়া শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে।
INS তমাল এই সিরিজের তৃতীয় জাহাজ এবং শেষ জাহাজ যা রাশিয়ায় তৈরি হয়েছে। এর নির্মাণ খরচ প্রায় ₹৮০০০ কোটি টাকা। বিশেষ বিষয় হল, এতে প্রায় ২৬% দেশীয় সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা ভারতের आत्मनिर्भरতা-কে আরও শক্তিশালী করে।
INS তমালের মোতায়েন: সমুদ্র থেকে শত্রুর অবরোধ
INS তমালকে বিশেষভাবে আরব সাগরে মোতায়েন করা হবে, যেখান থেকে পাকিস্তান ও চীনের প্রতিটি কার্যকলাপের উপর নজর রাখা সহজ হবে। এর মোতায়েনের পর ভারতীয় নৌবাহিনীর টহল, নজরদারি এবং আক্রমণাত্মক-প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
এই জাহাজ সমুদ্রের মাধ্যমে আসা যে কোনও বিপদ মোকাবিলায় সক্ষম হবে এবং ভারতকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে পরিণত করবে।