উত্তর ভারতে বর্ষণের তাণ্ডব: বন্যা, ভূমিধস ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি

উত্তর ভারতে বর্ষণের তাণ্ডব: বন্যা, ভূমিধস ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি
সর্বশেষ আপডেট: 8 ঘণ্টা আগে

উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারী বর্ষণে দুর্যোগ। হিমাচল, উত্তরাখণ্ড এবং রাজস্থানে বন্যা, ভূমিধস ও মেঘ ভাঙার কারণে মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সতর্কতা জারি করেছে।

আবহাওয়া: উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে বর্ষার বৃষ্টি এই মুহূর্তে ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। গুজরাট, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্যগুলিতে ভারী বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত। অনেক জায়গায় আকস্মিক বন্যা, ভূমিধস এবং জলমগ্নতার মতো বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, অনেক জেলায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং ত্রাণ ও উদ্ধারকার্য অবিরাম চলছে।

হিমাচল প্রদেশে মেঘ ভাঙার কারণে বিপর্যয়

হিমাচল প্রদেশের কাংড়া এবং কুল্লু জেলায় মেঘ ভাঙার ঘটনা পরিস্থিতি আরও গুরুতর করে তুলেছে। বুধবার সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টির পর কাংড়ার মানুনি খাড়ে ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে শ্রমিক কলোনিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিকের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে ১০ জনের বেশি এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দলগুলি লাগাতার উদ্ধার ও অনুসন্ধান অভিযান চালাচ্ছে। বন্যার কারণে নদী-নালাগুলির জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আশেপাশের এলাকাতেও বিপদ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর হিমাচলে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে।

উত্তরাখণ্ডে ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা

উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস ও বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তেহরি গাড়ওয়াল, নৈনিতাল, চাম্পাওয়াত, চামোলি, পাউরি গাড়ওয়াল, দেরাদুন, বাগেশ্বর এবং পিথোরাগড় জেলাগুলিতে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ)-কে মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনসাধারণকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

রুদ্রপ্রয়াগ জেলার ঘোলাথির অঞ্চলে একটি ১৮ সিটের বাস অলকানন্দা নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন, যেখানে সাতজন আহত হয়েছেন। আহতদের জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

রাজস্থানে রেকর্ড বৃষ্টিতে জলমগ্নতা

রাজস্থানে বর্ষা সম্পূর্ণরূপে সক্রিয় হয়েছে এবং রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ভারী বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। জয়পুর, যোধপুর, বিকানের এবং জয়সলমিরের মতো জেলাগুলিতে ১৮০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে নিচু এলাকাগুলিতে জলমগ্নতা দেখা দিয়েছে।

রাজ্য সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য বিশেষ দল পাঠিয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর আগামী দিনগুলিতে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়েছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

দিল্লিতে বর্ষার আগমন

দিল্লিতে এখন পর্যন্ত বর্ষার বৃষ্টি হয়নি, তবে আবহাওয়া দপ্তর ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়েছে। রাজধানীতে আর্দ্রতা ও গরমের মেঘ কেটে যেতে পারে এবং মানুষ গরম থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা করতে পারে। যদিও দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলেও জলমগ্নতা এবং যানজটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটকেও বৃষ্টির তাণ্ডব

মহারাষ্ট্রের শিরপুর এবং ওয়াশিমের মতো এলাকাগুলিতে একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জলমগ্নতার কারণে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে এবং কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।

কর্ণাটকের হাসান জেলায় আবহাওয়া দপ্তর আগামী তিন দিনের জন্য বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। শিরাডি ঘাটে ভারী বৃষ্টির কারণে ভূমিধস হয়েছে, যার ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রশাসন রাস্তাটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সতর্ক করেছে যে আগামী কয়েক দিন উত্তর ভারতের বিভিন্ন অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পার্বত্য রাজ্যগুলিতে ভূমিধস এবং নদীর জলস্তর দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিকে সতর্ক থাকার এবং জরুরি পরিকল্পনা সক্রিয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Leave a comment