১৪৪৭ হিজরি: মহররম মাসের চাঁদ দেখা এবং তাৎপর্য

১৪৪৭ হিজরি: মহররম মাসের চাঁদ দেখা এবং তাৎপর্য
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

ইসলামিক বর্ষ ১৪৪৭-এর সূচনা এখন কেবল চাঁদ দেখার অপেক্ষায়। সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়ের দৃষ্টি এখন আকাশের দিকে, যেখানে নতুন চাঁদের উদয় হওয়ার প্রতীক্ষা করা হচ্ছে। মহররম, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস, শুধু একটি নতুন বছরের সূচনা করে না, বরং এটি ত্যাগ, বীরত্ব এবং আত্মত্যাগের কাহিনীও নিয়ে আসে। এই মাসটি হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন এবং তাঁর সঙ্গীদের কারবালার শাহাদাতের স্মরণে গভীর তাৎপর্য বহন করে।

মহররম ২০২৫: চাঁদ দেখার সম্ভাব্য তারিখ

এই বছর মহররম ২০২৫-এর চাঁদ আজ, ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি এই দিনে চাঁদ দেখা যায়, তাহলে ইসলামিক নববর্ষ হিজরি ১৪৪৭ সালের সূচনা সেই সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে। যদিও, কোনো কারণে যদি ২৬ জুন চাঁদ দেখা না যায়, তবে ২৭ জুন (শুক্রবার) থেকে মহররম এবং ইসলামিক নতুন বছর আরম্ভ হবে।

ইসলামিক মাসগুলির গণনা চন্দ্র দর্শনের উপর ভিত্তি করে হয়, তাই মাসের শুরু নতুন চাঁদ দেখার পরেই ধরা হয়। এই কারণে মহররমের সূচনা প্রতি বছর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন তারিখে হয়।

কেন বিশেষ মহররম মাস

মহররম ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের মধ্যে অন্যতম, যেখানে যুদ্ধ পর্যন্ত নিষিদ্ধ। এই মাস আল্লাহ্‌র ইবাদত, আত্ম-নিরীক্ষণ এবং সংযমের সময়। তবে, শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এই মাসটি বিশেষভাবে শোক ও আত্মত্যাগের প্রতীক। এই মাসেই কারবালার যুদ্ধ হয়েছিল — এমন একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধ, যা ইসলামী ইতিহাসকে চিরকালের জন্য পরিবর্তন করে দিয়েছে।

১০ মহররম: ইয়ওম-এ-আশুরা-র গুরুত্ব

১০ মহররমের দিনটি ‘আশুরা’ নামে পরিচিত। এই দিনটি ইমাম হোসেন (রা.) এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গীর শাহাদাতের স্মরণে পালন করা হয়। এই যুদ্ধ ইরাকের কারবালায় ১০ মহররম ৬১ হিজরি (৬৮০ খ্রিস্টাব্দে) সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে ইয়াজিদের সেনাবাহিনী অত্যাচারের সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছিল। ইমাম হোসেন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে অস্বীকার করেন এবং তাঁর পরিবারসহ ধর্ম ও সত্যের জন্য আত্মত্যাগ করেন। এই দিনটি সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য ধৈর্য, ​​সমর্পণ এবং সত্যের বিজয়ের প্রতীক।

মহররমের রীতি ও অনুষ্ঠান

মহররম মাসে, বিশেষ করে ১০ তারিখে, বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা অনেক ঐতিহ্য পালন করে:

  • শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়া বের করে, শোক প্রকাশ করে এবং কারবালার ঘটনার দৃশ্য উপস্থাপন করে।
  • কালো পোশাক পরে শোক প্রকাশ করা হয়।
  • কিছু মুসলমান রোজা রাখে, বিশেষ করে ৯ ও ১০ মহররম।
  • মসজিদ ও ইমামবাড়াগুলিতে মজলিস (ধর্মীয় সমাবেশ) অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমাম হোসেনের আত্মত্যাগের কথা বর্ণনা করা হয়।
  • সামूहिक লঙ্গর ও ক্ষীর বিতরণ করা হয়, যাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের খাবার সরবরাহ করা যায়।

সারা বিশ্বে শাহাদাতের স্মৃতি পালন করা হবে

মহররম মাস কেবল ভারত বা পাকিস্তানেই নয়, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান, লেবানন, বাহরাইন, সৌদি আরব এবং আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলিতেও শ্রদ্ধা ও শোকের সাথে পালিত হয়। কারবালার ঘটনা স্মরণ করা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, বরং একটি নৈতিক বার্তাও দেয় — যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা উচিত, ফলাফল যাই হোক না কেন।

মহররম ২০২৫-এর সূচনা আবারও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে যে ইসলাম শুধু ইবাদতের নাম নয়, বরং ন্যায়বিচার, সত্য এবং মানবতার জন্য সংগ্রামেরও প্রতীক। চাঁদ দেখা যাওয়া মাত্র একদিকে যেমন ইসলামিক নতুন বছর শুরু হবে, তেমনই অন্যদিকে কারবালার শাহাদাতের স্মৃতিগুলি আবার নতুন করে জাগরিত হবে।

Leave a comment