আজকের শেয়ার বাজার: মাসিক মেয়াদ উত্তীর্ণির দিনে বাজারের দুর্দান্ত উত্থান, इंट्राডেতে নিফটি ছুঁল 24,450+ এর মনোরম স্তর। একই সাথে, নিফটি ব্যাংকও নতুন রেকর্ড উচ্চতা স্পর্শ করেছে।
বৃহস্পতিবার ভারতীয় শেয়ার বাজারে ব্যাপক উত্থান দেখা গেছে। এই ঊর্ধ্বগতি টানা তৃতীয় দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে এবং এর প্রভাব সেনসেক্স ও নিফটি উভয় সূচকেই দেখা গেছে। নিফটি যেখানে 25500-এর উপরে পৌঁছে গেছে, সেখানে সেনসেক্সও 83500-এর স্তর অতিক্রম করেছে। ব্যাংক নিফটি তার ইতিহাসে সর্বোচ্চ উচ্চতা ছুঁয়ে 57076-এর উপরে লেনদেন করেছে।
বৃহস্পতিবার বাজারের এই উল্লম্ফন মাসিক ডেরিভেটিভ মেয়াদ উত্তীর্ণির দিনে আসে, যা সাধারণত অস্থিরতার সময় হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে এর বিপরীতে, এবার বাজারে ব্যাপক হারে কেনাকাটা দেখা গেছে। বিশেষ করে মিডক্যাপ এবং লার্জক্যাপ শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
গত তিন দিনে 8.2 লক্ষ কোটি টাকার মুনাফা
23 জুন যখন বাজার বন্ধ হয়েছিল, তখন বিএসই-তে তালিকাভুক্ত সমস্ত কোম্পানির মোট বাজার মূলধন ছিল 4,47,82,499 কোটি টাকা। তবে বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা বেড়ে 4,56,03,273 কোটি টাকা হয়েছে। অর্থাৎ, শেয়ার বাজার গত তিন দিনে বিনিয়োগকারীদের প্রায় 8.2 লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ দিয়েছে।
এই পরিসংখ্যান বাজারের গতি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। ক্রমাগত বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তা বাজারকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
কোন শেয়ারগুলিতে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন দেখা গেছে
বৃহস্পতিবার যে শেয়ারগুলি বাজারকে উপরে তুলতে বড় ভূমিকা রেখেছে, তাদের মধ্যে ভারত ইলেকট্রনিক্স (BEL), ইটারনাল, ভারতী এয়ারটেল, টাটা স্টিল, মারুতি সুজুকি এবং বাজাজ ফাইনান্সের নাম উল্লেখযোগ্য। এই কোম্পানিগুলির শেয়ারে জোরদার কেনাকাটা হয়েছে এবং তারা বাজারকে উপরে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
অন্যদিকে, টেক মাহিন্দ্রা, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক, এসবিআই, টিসিএস এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বড় শেয়ারগুলিতে শুরুর দিকে কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেছে।
মবীকুইকের শেয়ারের পতন
বৃহস্পতিবার যে স্টকটি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সেটি হল ওয়ান মবীকুইক সিস্টেমস। এই কোম্পানির শেয়ারে 6 শতাংশের বেশি পতন হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটিতে একটি ব্লক ডিল হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার নেট1 ইউইপিএস টেকনোলজিসের একটি সহযোগী সংস্থা তাদের 8 শতাংশ অংশীদারিত্ব বিক্রি করেছে। এর ফলে স্টকের পতন হয়।
টেক্সম্যাকো রেলের বড় অর্ডার
একই দিনে টেক্সম্যাকো রেল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শেয়ারে 9 শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। কোম্পানিটি 62.24 মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ প্রায় 535 কোটি টাকার আন্তর্জাতিক অর্ডার পেয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বেড়েছে এবং স্টকটি লাফিয়েছে।
কোন সেক্টর বাজিমাত করল
বৃহস্পতিবার বাজারে অটো, ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএমসিজি, মেটাল, ফার্মা, কনজিউমার ডিউরেবলস এবং অয়েল অ্যান্ড গ্যাস সেক্টর দারুণ পারফর্ম করেছে। অন্যদিকে, রিয়েল এস্টেট, পিএসইউ ব্যাংক এবং আইটি সেক্টরে কিছুটা দুর্বলতা দেখা গেছে।
এই বৈচিত্র্য দেখায় যে বাজার কেবল কয়েকটি নির্বাচিত সেক্টরের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং ব্যাপক ভিত্তিতে স্থিতিশীলতা দেখাচ্ছে।
কেন বাজারে স্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে
বাজারে উত্থানের বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণ ছিল। প্রথমত, এটি ছিল মাসিক ডেরিভেটিভ মেয়াদ উত্তীর্ণির দিন, যে দিন সাধারণত ট্রেডিং ভলিউম বাড়ে। এছাড়াও, বিদেশি সংকেতগুলিও বেশ ইতিবাচক ছিল।
এশীয় বাজারগুলিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও একটি ইতিবাচক প্রবণতা ছিল। জাপানের নিক্কেই ইনডেক্স 0.9 শতাংশ বেড়ে চার মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ডলারের বিপরীতে রুপি শক্তিশালী হয়ে 20 পয়সা বেড়ে 85.88-এ দাঁড়িয়েছে। ডলার ইনডেক্সে 0.25 শতাংশ পতন হয়েছে।
তেল ও সোনার দামে স্থিতিশীলতা বজায় ছিল, যা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ কমিয়েছে। আন্তর্জাতিক স্তরে, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বেড়েছে, যা বিশ্ব বাজারকে সমর্থন জুগিয়েছে।
ফেড চেয়ারম্যানের বক্তব্য
ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেছেন যে, মুদ্রাস্ফীতির উপর শুল্কের প্রভাব এখনো সম্পূর্ণরূপে বোঝা কঠিন। তবে জুলাই মাসে 25 বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এখন 25 শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যা আগে ছিল মাত্র 12.5 শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এই সম্ভাবনা 90 শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব
ন্যাটো দেশগুলির বৈঠকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, আমেরিকা আগামী সপ্তাহে ইরানের সঙ্গে কথা বলবে। এর ফলে বাজারে উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে পিছিয়ে দিয়েছে, যা এই অঞ্চলে অস্থিরতার আশঙ্কা কিছুটা কমিয়েছে।