চীন কর্তৃক ভারত বিরোধী মনোভাব: কৃষি ক্ষেত্রে সংকট তৈরি

চীন কর্তৃক ভারত বিরোধী মনোভাব: কৃষি ক্ষেত্রে সংকট তৈরি
সর্বশেষ আপডেট: 5 ঘণ্টা আগে

চীন আবারও ভারত বিরোধী মনোভাব দেখাচ্ছে, যা কৃষি ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করতে পারে

চীন সম্প্রতি ভারত সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করার জন্য আবারও কৌশলগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রথমত, তারা ভারতের জন্য বিরল আর্থ ম্যাগনেটের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, এবং এখন বিশেষায়িত সার (Speciality Fertilizers) সরবরাহও বন্ধ করে দিয়েছে। 

ভারত ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। একদিকে, সীমান্ত বিরোধ অমীমাংসিত, অন্যদিকে চীন বাণিজ্যিকভাবে ভারতকে घेरতে চাইছে। সম্প্রতি, চীন ভারতের জন্য বিশেষায়িত সার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে, যা ভারতীয় কৃষিকাজের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই সারগুলি ফল, সবজি এবং অন্যান্য বিশেষ ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বর্তমানে, এই নতুন ধরনের সার ভারতের কৃষিখাতে সংকট তৈরি করতে পারে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, চীন শুধুমাত্র ভারতের জন্য এই সরবরাহ বন্ধ করছে, অন্যান্য দেশেও এই সার রপ্তানি করছে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা এবং ব্যবসায়ীদের মতে, চীন গত দুই মাস ধরে ভারতের জন্য এই সার পাঠানোর ওপর একটি অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ভারতীয় কোম্পানিগুলোর উদ্বেগের বৃদ্ধি

বিশেষায়িত সার আমদানিকারী ভারতীয় কোম্পানিগুলো মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ বিশেষায়িত সার চীন থেকে আসে। সলভিবল ফर्टিলায়জার ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজিব চক্রবর্তীর মতে, চীন গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে ভারতের জন্য এই সার সরবরাহে বাধা দিচ্ছে। তবে এইবার তারা সম্পূর্ণভাবে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন সরাসরি কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি, তবে ভারত থেকে পাঠানো সারগুলোর সরকারি পরিদর্শন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে পণ্যগুলো চীন থেকে ভারতে পৌঁছাতে পারছে না।

চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্য

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চীন ভারত সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য বাণিজ্যকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, কারণ ভারত সরকারের তরফে চীন থেকে আসা বিনিয়োগের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুমোদন নিতে হচ্ছে। এছাড়াও, ভারত কিছু সংবেদনশীল পণ্যের উপর শুল্ক এবং নিরাপত্তা তল্লাশি কঠোর করেছে।

এই পদক্ষেপগুলোর প্রতিক্রিয়ায়, চীন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল এবং পণ্যের রপ্তানি ওপর অঘোষিতভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। প্রথমত, তারা বিরল আর্থ ম্যাগনেটের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, এবং এখন এই নতুন সমস্যাটি বিশেষায়িত সার নিয়ে এসেছে।

বিশেষায়িত সার কি

এই সারগুলো সাধারণ সার থেকে আলাদা। এগুলোতে জল-দ্রবণীয় সার, তরল সার, নিয়ন্ত্রিত মুক্তি (Controlled Release) এবং ধীর মুক্তি (Slow Release) সার, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সার, কাস্টমাইজড ফর্মুলা, জৈব সার এবং ন্যানো সার অন্তর্ভুক্ত। এই সারগুলোর ওপর ভারত সরকার কোনো ভর্তুকি দেয় না, তবে এগুলো ফসলের উৎপাদন বাড়াতে এবং মাটির গুণগত মান বজায় রাখতে সহায়ক।

এই সারগুলো বিশেষ করে ফল, সবজি, ফুল এবং উচ্চমূল্যের ফসলে ব্যবহার করা হয়। প্রচলিত সারগুলোর তুলনায় এগুলো পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর এবং আরও সুনির্দিষ্ট পুষ্টি সরবরাহ করে।

ভারতের আমদানি এবং বাজারের পরিস্থিতি

ভারতীয় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বিশেষায়িত সার প্রচুর পরিমাণে আমদানি করে। শিল্প পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে ভারত প্রায় ১.৫ থেকে ১.৬ লক্ষ টন বিশেষায়িত সার আমদানি করে।

ফার্টিলায়জার অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার মতে, ভারতে এই পণ্যগুলোর বাজার দ্রুত বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৯ সালের মধ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট সারের বাজার এক বিলিয়ন ডলারের বেশি হবে এবং এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯.২ শতাংশ হবে। এছাড়াও, বায়োস্টাইমুলেন্টগুলোর প্রবৃদ্ধি ১৫.৬ শতাংশ এবং অর্গানিক ফার্টিলায়জারের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

দেশীয় উৎপাদনে ঘাটতি

এখানে একটি বড় সমস্যা হলো, ভারতের কাছে এই সারগুলো বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি এবং সম্পদ এখনও নেই। এর কারণ হলো, অতীতে এই সারগুলোর চাহিদা খুব কম ছিল। সরকার যখন এই সারগুলোর ওপর ভর্তুকি দেয় না, তখন কৃষকরা ঐতিহ্যবাহী সারগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।

তবে এখন, যখন কৃষিতে গুণমান এবং উৎপাদনশীলতা দুটোই গুরুত্বপূর্ণ, তখন বিশেষায়িত সারের চাহিদা বাড়ছে। তাই অনেক ভারতীয় কোম্পানি এই খাতে উৎপাদন ইউনিট স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে। যদিও উৎপাদন শুরু হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

ভারতের বিকল্প কী

চীনের এই অঘোষিত নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতীয় কোম্পানিগুলো এখন অন্যান্য দেশে বিকল্প উৎস খুঁজতে শুরু করেছে। জর্ডান এবং ইউরোপীয় দেশগুলোকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এই দেশগুলো থেকে পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া চীনের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।

একটি বহুজাতিক ফার্টিলায়জার কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীন থেকে পণ্য আমদানির তুলনায় অন্যান্য উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করা কঠিন, কারণ সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও, দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ চীন এতদিন কম দামে প্রচুর পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করেছে।

কোম্পানিগুলোর ভূমিকা

ভারতীয় ফার্টিলায়জার কোম্পানিগুলোও এই পরিস্থিতিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। दीपक ফर्टিলায়জার, पारादीप ফर्टিলায়জার এবং नागार्जुन ফर्टিলায়জার-এর মতো কোম্পানিগুলো এই ক্ষেত্রে আগে থেকেই কাজ করছে। এখন এই কোম্পানিগুলো উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যাতে দেশের চাহিদা পূরণ করা যায়।

কোম্পানিগুলোর বিশ্বাস, সরকার যদি নীতিগত সহায়তা প্রদান করে এবং ভর্তুকি বা প্রণোদনা (incentives) এর ব্যবস্থা করে, তাহলে দেশে বিশেষায়িত সারের উৎপাদন সম্ভব। এটি ভারতকে স্বনির্ভর হতেও সাহায্য করতে পারে।

Leave a comment