শেখচিল্লির বুদ্ধি: মিথ্যা কথার প্রতিযোগিতায় জয়

🎧 Listen in Audio
0:00

শেখচিল্লি সাধারণত বোকার মতো কাজ করত, কিন্তু এইবার সে তার বুদ্ধির এমন ব্যবহার করল যে সবাই হতবাক হয়ে গেল। ব্যাপারটা হল, শেখকে পছন্দ করা ঝাজ্জরের নবাব যুদ্ধের পর কিছু মাসের জন্য নিজের রাজ্য থেকে ভ্রমণে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর ছোট ভাই রাজ্য সামলাতে শুরু করল। নবাবের ছোট ভাই শেখকে একদম পছন্দ করত না। তার মনে সবসময় এটাই ঘুরত যে তার ভাই অর্থাৎ নবাব তাকে মাথায় চড়িয়ে রেখেছে। সে কোনো কাজ ঠিক করে করতে পারে না আর খুব অলসও।

এইরকম ধারণার বশবর্তী হয়ে ঝাজ্জরের ছোট নবাব শেখের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল। একদিন সুযোগ পেয়েই ছোট নবাব শেখচিল্লিকে ভরা সভায় বকুনি দিল। সে বলল, একজন ভালো কাজ করা লোক সেই হয়, যে বলা কাজের থেকেও বেশি করে। তুমি তো দেওয়া কাজও ঠিক করে করো না। ছোট নবাব আরও বলল যে, তুমি ঘোড়াগুলোকে আস্তাবলে নিয়ে গিয়ে বাঁধোও না। কিছু জিনিস তুলতে গেলে তোমার পা কাঁপতে শুরু করে। কোনো কাজ তুমি মন দিয়ে করো না কেন? জবাব দাও। সভায় উপস্থিত সবাই শেখচিল্লিকে বকুনি শুনে খুব হাসতে লাগল। বকুনি শুনে আর সবাইকে নিজের ওপর হাসতে দেখে শেখচিল্লি চুপচাপ সভা থেকে চলে গেল।

কিছুদিন পর শেখ রাজমহলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। ছোট নবাবের নজর পড়তেই সে তাকে সঙ্গে সঙ্গে ডেকে পাঠাল। ছোট নবাব শেখকে বলল, “তাড়াতাড়ি গিয়ে কোনো ভালো হাকিমকে ডেকে আনো। আমাদের বেগমের শরীর খারাপ।” জবাবে মাথা নেড়ে শেখচিল্লি হাকিমের খোঁজে বেরিয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর শেখ সেখানে একজন হাকিম ও কবর খোঁড়ার শ্রমিকদের সঙ্গে হাজির হল। সে শ্রমিকদের মহলের কাছেই কবর খোঁড়ার কাজে লাগিয়ে দিল। তখনই ছোট নবাব সেখানে এসে রেগে গিয়ে বলল, আমি তো শুধু হাকিমকে ডেকেছিলাম। তোমরা কারা আর কেন কবর খুঁড়ছ? এখানে তো কারও মৃত্যু হয়নি।

এই কথা শুনে শেখচিল্লি জবাবে বলল, জনাব! এদের কবর খুঁড়তে আমি বলেছি, কারণ আপনি বলেছিলেন যে ভালো কাজ করা মানুষ বলা কাজের থেকেও বেশি করে। আমিও আপনার বেগমের অসুস্থতার কথা শুনে তার সঙ্গে জড়িত সব সম্ভাব্য কাজ করে দিয়েছি। এই কথা শুনে রেগে ছোট নবাব মহলের ভেতরে চলে গেল। কিছুদিন পর সে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করল, কারণ রাজ্যের কাজকর্মের চেয়ে তার বেশি আনন্দ লাগত দাবা ও অন্যান্য খেলাধুলায়। এই প্রতিযোগিতার জন্য ছোট নবাব ঘোষণা করল যে, যে সবচেয়ে বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারবে তাকে পুরস্কার হিসেবে সোনার হাজার মোহর দেওয়া হবে।

এই ঘোষণা শুনে মিথ্যে কথা বলা লোকেরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পৌঁছে গেল। প্রতিযোগিতার সময় এক মিথ্যেবাদী ছোট নবাবকে বলল, সাহেব! আমি মোষের আকারের চেয়েও বড় পিঁপড়ে দেখেছি। সেগুলো আবার এমন যে মোষের থেকেও বেশি দুধ দেয়। ছোট নবাব বলল, “হ্যাঁ, এমনটা হতেই পারে।” তারপর আরেক মিথ্যেবাদী বলল, রাতে রোজ আমি উড়ে চাঁদে যাই আর তারপর সকাল হলেই আবার পৃথিবীতে ফিরে আসি। এই কথা শুনে ছোট নবাব বলল, “হয়তো তোমার কোনো জাদু শক্তি আছে, তাই এমনটা হতে পারে।” এই দুজনের মিথ্যে বলার পর এক মোটা লোক বলল, আমি তরমুজের বীজ গিলে ফেলেছিলাম। সেই থেকে আমার পেটের ভেতরে তরমুজ গাছ বাড়ছে। রোজ একটা করে তরমুজ পেকে ফেটে যায় আর আমার পেট ভরে যায়। আমার আর খাবার খাওয়ার দরকারও পড়ে না।

এই কথা শুনে ছোট নবাব বলল, এতে আর কি বেশি কথা আছে। তুমি নিশ্চয়ই কোনো অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন বীজ খেয়েছ। এরকম অনেক মিথ্যে কথা শোনার পর শেখচিল্লি ছোট নবাবকে বলল, সাহেব! আপনার অনুমতি পেলে আমিও এই প্রতিযোগিতায় আমার কিছু প্রতিভা দেখাই। ছোট নবাব তাকে ভেংচি কেটে বলল, তুমি আর প্রতিভা! এই কথা শোনা মাত্রই শেখচিল্লি জোরে জোরে বলতে লাগল, আপনার মতো বোকা এই পুরো রাজ্যে আর কেউ নেই। আপনার সিংহাসন ছেড়ে দেওয়া উচিত, কারণ এটার ওপর আপনার কোনো অধিকার নেই। শেখচিল্লির কথা শুনে পুরো সভায় নীরবতা নেমে এলো। তারপর ছোট নবাব রেগে গিয়ে বলল, এই লোকের স্পর্ধার জন্য একে গ্রেফতার করো। এরপর ছোট নবাব শেখচিল্লিকে বলল, তুমি এক্ষুনি আমার কাছে ক্ষমা চাও, না হলে আমি তোমার মুণ্ডু কেটে ফেলব।

এই কথা শুনে শেখচিল্লি হাত জোড় করে বলতে লাগল, “কিসের জন্য শাস্তি? এখানে তো প্রতিযোগিতা চলছে আর সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা বলতে হবে। আমি তো সেটাই করেছি। কেউ কি আমার মিথ্যের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে? আপনি এটাকে মিথ্যে ছাড়া আর কিছু মনে করবেন না। এটা তো আমি প্রতিযোগী হিসেবে বলেছি।” ছোট নবাব ভাবতে লাগল, সে আগে মিথ্যে কথা বলল, না এখন বলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর ছোট নবাব শেখচিল্লিকে বলল, আমি তোমাকে যতটা বোকা ভাবি, তুমি ততটা বোকা নও। তুমি এই প্রতিযোগিতায় জিতে গেছ। তোমার চেয়ে বড় মিথ্যে আর কেউ বলেনি। নিজের বুদ্ধির জোরে শেখচিল্লি প্রতিযোগিতা জিতে সোনার হাজার মোহর পেল। সে নিজের পুরস্কার নিয়ে যেতে যেতে ভাবতে লাগল যে ছোট নবাব তো বোকা-ই। এই সত্যের জন্যই আমার জয় হল আর পুরস্কারও পেলাম।

এই গল্প থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে - বুদ্ধি ব্যবহার করলে সব সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। এছাড়াও, কারও অপমান করা উচিত নয়, কারণ প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনো দক্ষতা অবশ্যই থাকে।

Leave a comment