ঐক্যের শক্তি: অনুপ্রেরণামূলক গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

উপস্থাপনা করছি বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক গল্প, একতাই বল

কোনো গ্রামে এক কৃষক বাস করত। তার চার পুত্র ছিল। কৃষক খুব পরিশ্রমী ছিল। এই কারণে তার সকল পুত্রও তাদের প্রত্যেক কাজ খুব পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে করত, কিন্তু সমস্যা ছিল যে কৃষকের সকল পুত্রের মধ্যে একেবারেই মিল ছিল না। তারা সকলে ছোট ছোট বিষয়ে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত। নিজেদের পুত্রদের এই ঝগড়া নিয়ে কৃষক খুব চিন্তিত থাকত। কৃষক অনেকবার তার পুত্রদের এই বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তার কথার কোনো প্রভাব চার ভাইয়ের উপর পড়ত না। ধীরে ধীরে কৃষক বৃদ্ধ হয়ে গেল, কিন্তু তার পুত্রদের মধ্যে পারস্পরিক ঝগড়ার প্রবণতা শেষ হওয়ার কোনো নামই নিচ্ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে একদিন কৃষক একটি কৌশল বের করল এবং পুত্রদের ঝগড়ার এই অভ্যাস দূর করার মনস্থির করল। সে তার সকল পুত্রকে ডাকল এবং তাদের কাছে আসতে বলল।

কৃষকের ডাক শুনেই সকল পুত্র তাদের পিতার কাছে পৌঁছালো। তারা বুঝতে পারছিল না যে তাদের পিতা কেন তাদের সকলকে একসঙ্গে ডেকেছে। সকলে পিতাকে তাদের ডাকার কারণ জিজ্ঞাসা করল। কৃষক বলল - আজ আমি তোমাদের সকলকে একটি কাজ দিতে যাচ্ছি। আমি দেখতে চাই যে তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারে। সকল পুত্র একসুরে বলল - পিতা আপনি যে কাজ দিতে চান, দিন। আমরা তা পুরো পরিশ্রম ও সততার সাথে করব। ছেলেদের মুখ থেকে এই কথা শুনে কৃষক তার বড় ছেলেকে বলল, ‘যাও এবং বাইরে থেকে কিছু কাঠ নিয়ে আসো’। কৃষক তার দ্বিতীয় ছেলেকে একটি দড়ি আনতে বলল। পিতার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই বড় ছেলে কাঠ আনতে চলে গেল এবং দ্বিতীয় ছেলে দড়ি আনার জন্য বাইরে দৌড়ালো।

কিছুক্ষণ পর দুই ছেলে ফিরে এল এবং পিতাকে কাঠ ও দড়ি দিল। এবার কৃষক তার ছেলেদের বলল যে এই সকল কাঠকে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি আঁটি তৈরি করতে। পিতার এই আদেশ পালন করে বড় ছেলে সকল কাঠকে একসঙ্গে বেঁধে আঁটি তৈরি করল। আঁটি তৈরি হওয়ার পর বড় ছেলে কৃষককে জিজ্ঞাসা করল - পিতা এরপর আমাদের কি করতে হবে? পিতা মুচকি হেসে বলল - ‘বাবারা, এবার তোমাদের এই কাঠের আঁটিটিকে নিজেদের শক্তি দিয়ে দুই ভাগে ভাঙতে হবে।’ পিতার এই কথা শুনে বড় ছেলে বলল ‘এটা তো আমার বাঁ হাতের কাজ, আমি এটা মুহূর্তের মধ্যে করে দেব।’ দ্বিতীয় ছেলে বলল ‘এতে কি আছে, এই কাজ তো সহজেই হয়ে যাবে।’ তৃতীয় ছেলে বলল ‘এটা আমার ছাড়া আর কেউ করতে পারবে না।’ চতুর্থ ছেলে বলল ‘এটা তোমাদের কারোরই সাধ্যের মধ্যে নেই, আমি তোমাদের সকলের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, আমার ছাড়া এই কাজ আর কেউ করতে পারবে না।’

তারপর কি ছিল, নিজেদের কথা প্রমাণ করতে সকলেই লেগে গেল এবং আবারও চার ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে গেল। কৃষক বলল - ‘বাবারা, আমি তোমাদের এখানে ঝগড়া করার জন্য ডাকিনি, বরং আমি দেখতে চাই যে তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে, যে এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারে। তাই ঝগড়া বন্ধ কর এবং কাঠের এই আঁটিটিকে ভেঙে দেখাও। এই কাজের জন্য সকলকে এক এক করে সুযোগ দেওয়া হবে।’ এই কথা বলে কৃষক প্রথমে কাঠের আঁটিটি তার সবচেয়ে বড় ছেলের হাতে দিল। বড় ছেলে আঁটিটি ভাঙার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু তা ভাঙতে অসফল হল। অসফল হওয়ার পর বড় ছেলে দ্বিতীয় ছেলেকে কাঠের আঁটিটি দিয়ে বলল যে ভাই আমি চেষ্টা করে দেখলাম এই কাজ আমার দ্বারা হবে না, তুমি চেষ্টা করে দেখতে পারো।

এবার কাঠের আঁটিটি দ্বিতীয় ছেলের হাতে ছিল। সেও সেই আঁটিটি ভাঙার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করল, কিন্তু কাঠের আঁটিটি ভাঙল না। অসফল হওয়ার পর সে কাঠের আঁটিটি তৃতীয় ছেলেকে দিল এবং বলল, এই কাজ খুব কঠিন, তুমিও চেষ্টা করে দেখ। এবার তৃতীয় ছেলেও তার পুরো শক্তি লাগিয়ে দিল, কিন্তু কাঠের আঁটিটি খুব মোটা ছিল। এই কারণে বেশি শক্তি লাগানোর পরও সে তা ভাঙতে পারছিল না। অনেক চেষ্টা করার পর যখন তার দ্বারাও হল না, তখন অবশেষে সে কাঠের আঁটিটি সবচেয়ে ছোট ছেলের হাতে দিল। এবার ছোট ছেলের পালা ছিল নিজের শক্তি পরীক্ষা করার। সেও অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু সেও সকল ভাইয়ের মতো সেই কাঠের আঁটিটি ভাঙতে সফল হল না। অবশেষে হেরে গিয়ে সে কাঠের আঁটিটি মাটিতে ফেলে দিল এবং বলল - ‘পিতা এই কাজ সম্ভব নয়।’

কৃষক হাসল এবং বলল ‘বাবারা এবার তোমরা এই আঁটিটি খুলে এর কাঠগুলো আলাদা করে নাও এবং তারপর সেটা ভাঙার চেষ্টা কর।’ চার ভাই তাই করল। এবার সকলে একটি একটি করে কাঠ নিজেদের হাতে নিল এবং সহজেই তা ভেঙে দিল। কৃষক বলল - ‘বাবারা তোমরা চারজনও এই কাঠগুলোর মতোই। যতক্ষণ এই কাঠগুলোর মতো একসঙ্গে থাকবে, ততক্ষণ কেউ তোমাদের কোনো রকম ক্ষতি করতে পারবে না, কিন্তু যদি তোমরা ঝগড়া করতে থাকো, তাহলে এই একা কাঠগুলোর মতো সহজেই ভেঙে যাবে।’ কৃষকের এই কথা শুনে এবার সকল ছেলে বুঝতে পারল যে তাদের পিতা তাদের কী বোঝাতে চাইছে। সকল পুত্র তাদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইল এবং ওয়াদা করল যে জীবনে তারা আর কখনও নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করবে না।

আমরা এই গল্প থেকে এই শিক্ষা পাই যে - যদি আমরা সকলে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকি, তাহলে যত কঠিন সমস্যাই আসুক না কেন, তার মোকাবিলা সকলে মিলেমিশে সহজেই করা যেতে পারে। অন্যদিকে, যদি আমরা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করি এবং আলাদা আলাদা থাকি, তাহলে ছোট থেকে ছোট কষ্টও জীবনের উপর ভারী হয়ে পড়তে পারে।

আমাদের প্রচেষ্টা হল যে একইভাবে আপনাদের সকলের জন্য ভারতের অমূল্য রত্নগুলি, যা সাহিত্য, শিল্পকলা ও গল্পে বিদ্যমান, সেগুলি সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এইরকমই প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

Leave a comment