প্রতি মাসে কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে মাসিক শিবরাত্রি (Masik Shivratri 2024) পালিত হয়, যা বিশেষভাবে ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজার দিন। এই দিনটি বিশেষভাবে বিবাহে আসা বাধা দূর করার জন্য মানা হয়।
মাসিক শিবরাত্রির দিনে ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজা-অর্চনা করার পাশাপাশি কিছু বিশেষ জিনিস শিবলিঙ্গে নিবেদন করলে পুণ্য লাভ হয় এবং ভগবান শিবের কৃপা পাওয়া যায়। এই দিনটি বিশেষ করে সেই সকল মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যারা বৈবাহিক জীবনে সুখ-শান্তি এবং মনের মতো জীবনসঙ্গী পাওয়ার ইচ্ছা রাখেন।
মাসিক শিবরাত্রি ২০২৪-এর শুভ মুহূর্ত
পঞ্জিকা অনুসারে, পৌষ মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি শুরু হবে ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, গভীর রাত ৩টা ৩২ মিনিটে এবং শেষ হবে ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ভোর ৪টা ১ মিনিটে। সেই অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ মাসিক শিবরাত্রি ২৯ ডিসেম্বর পালিত হবে। মাসিক শিবরাত্রির দিনে বিশেষভাবে ভগবান শিব ও মা পার্বতীর পূজা করা হয় এবং এই দিনে উপবাস রাখলে ভগবান শিবের কৃপা লাভ হয়।
মাসিক শিবরাত্রি ২০২৪-এ শিবলিঙ্গে নিবেদন করার মতো জিনিস
* নবপুষ্প (নয়টি ফুল) - শিবলিঙ্গে নবপুষ্প নিবেদন করা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। এই ফুলগুলি ভগবান শিবের প্রিয় বস্তু এবং এর মাধ্যমে পূজায় বিশেষ পুণ্য লাভ হয়।
* দুধ (Milk) - দুধ দিয়ে শিবলিঙ্গ অভিষেক করলে ভগবান শিবের বিশেষ কৃপা পাওয়া যায়। এটি তাঁর শরীরকে শীতলতা ও আরাম দেওয়ার প্রতীক।
* ঘি (Ghee) - ঘি-এর অভিষেকও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এর মাধ্যমে ভগবান শিবের আশীর্বাদ পাওয়া যায় এবং বাড়িতে সমৃদ্ধি আসে।
* মধু (Honey) - মধু নিবেদন করাও শিবলিঙ্গে খুব উপকারী। এটি ভগবান শিবকে প্রসন্ন করে এবং জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
* বিল্বপত্র (Bilva Leaves) - বিল্বপত্র শিবপূজায় অত্যন্ত প্রভাবশালী বলে মনে করা হয়। ভগবান শিবের পূজায় এটি অত্যন্ত প্রিয় এবং এর মাধ্যমে শিবের বিশেষ কৃপা লাভ হয়।
* চন্দন (Sandalwood Paste) - চন্দনের অর্চনার মাধ্যমে শিবলিঙ্গে শান্তির বাস হয় এবং ব্যক্তি মানসিক শান্তি লাভ করে। এটি বিশেষভাবে সেই সকল মানুষের জন্য ভালো, যারা মানসিক চাপে ভুগছেন।
* শিব মন্ত্র জপ (Chanting of Shiv Mantras) - এই দিনে শিব মন্ত্র জপ করা এবং বিশেষ করে "ওঁ নমঃ শিবায়" জপ করা উত্তম ফল প্রদান করে বলে মনে করা হয়।
* জল (Water) - শিবলিঙ্গে জল নিবেদন করা আবশ্যক। এই অভিষেকের মাধ্যমে ভগবান শিবের কৃপা লাভ হয় এবং জীবনে সব প্রকার সমৃদ্ধি আসে।
মাসিক শিবরাত্রির তাৎপর্য
মাসিক শিবরাত্রি প্রতি মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। এই দিনটি ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর পূজা-অর্চনা করার বিশেষ সুযোগ। মাসিক শিবরাত্রির তাৎপর্য হিন্দু ধর্মে অনেক বেশি এবং এটি বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা ভগবান শিবের উপাসনা করেন, বিশেষ করে তারা যারা বৈবাহিক জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি চান।
* ধর্মীয় তাৎপর্য: মাসিক শিবরাত্রির উৎসব ভগবান শিবের উপাসনা ও পূজার দিন। এই দিনটি বিশেষভাবে সেই সকল মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা জীবনে কোনো সমস্যায় জর্জরিত বা তাদের মনোকামনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে শিবের উপাসনা করলে ভগবান শিবের বিশেষ কৃপা লাভ হয় এবং জীবনের সকল সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
* বিবাহ ও বৈবাহিক জীবন: মাসিক শিবরাত্রির তাৎপর্য বিশেষভাবে বিবাহ ও বৈবাহিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে ভগবান শিব ও মাতা পার্বতীর পূজা করলে বিবাহের পথে আসা বাধা দূর হয় এবং দাম্পত্য জীবনে সুখ আসে। অনেকে এই দিনে বিশেষভাবে বিবাহের জন্য প্রার্থনা করেন এবং তাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য ভগবান শিবের আশীর্বাদ লাভ করেন।
* সাধনা ও তপস্যা: শিবরাত্রির উপবাস ও পূজা বিশেষভাবে সাধনা ও তপস্যা হিসেবে করা হয়। এই দিনে উপবাস রাখা এবং রাত্রি জাগরণ করা শিবের উপাসনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সাধনা ব্যক্তির আত্মাকে শুদ্ধ করে এবং তাকে মানসিক শান্তি প্রদান করে।
* সম্পত্তি ও সমৃদ্ধি: মাসিক শিবরাত্রির দিনে ভগবান শিবের পূজা করলে ঘরে সমৃদ্ধি আসে। শিবলিঙ্গে জল, দুধ, ঘি, মধু, বিল্বপত্র ইত্যাদি নিবেদন করলে ভগবান শিব প্রসন্ন হন এবং ঘরে সুখ-শান্তি ও সম্পত্তির বাস হয়।
* পুণ্য ও শান্তি: শিবরাত্রির উপবাস পুণ্য লাভের পথ খুলে দেয়। এই দিনে পূজা করলে মানুষ কেবল মানসিক শান্তি পায় না, তার পাপও নাশ হয়। এই দিনের সাধনা থেকে পুণ্য লাভ হয় এবং ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়।
