ছদন্ত হাতির গল্প: ঠাকুরমা দিদিমার মুখে শোনা বিখ্যাত বাংলা গল্প

🎧 Listen in Audio
0:00

ছদন্ত হাতির গল্প। বিখ্যাত গল্প! ঠাকুরমা দিদিমার গল্প। বাংলা গল্প। পড়ুন subkuz.com-এ!

উপস্থাপিত, বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক গল্প, ছদন্ত হাতি

বহু শতাব্দী আগের কথা, হিমালয়ের ঘন জঙ্গলে দুই প্রকারের হাতি দেখা যেত। এদের মধ্যে এক প্রকার ছিল ছদন্ত এবং অন্য প্রকারের নাম ছিল উপোসথ। এদের মধ্যে ছদন্ত প্রজাতিটি বেশ বিখ্যাত ছিল। বিশাল ছয়টি দাঁত থাকার কারণেই এদের ছদন্ত বলা হত। এই হাতিগুলোর মাথা ও পা মণির মতো টকটকে লাল দেখাত। এই ছদন্ত হাতিদের রাজা কাঞ্চন গুহায় বাস করত। মহাসুভদ্দা ও চুল্লসুভদ্দা নামের তার দুই রাণী ছিল। একদিন হাতিদের রাজা তার দুই রাণীকে নিয়ে কাছের একটি পুকুরে স্নান করতে যায়। সেই পুকুরের ধারে একটি পুরনো বিশাল গাছ ছিল। গাছটিতে খুব সুন্দর ও মনমুগ্ধকর সুগন্ধযুক্ত ফুল ধরেছিল। গজরাজ খেলার ছলে তার শুঁড় দিয়ে গাছের একটি ডাল ধরে জোরে ঝাঁকায়। এতে ডালের ফুলগুলো মহাসুভদ্দার ওপর ঝরে পরে এবং সে গজরাজের ওপর খুব খুশি হয়। অন্যদিকে, গাছের শুকনো ডালটি পুরনো হওয়ার কারণে গজরাজের শুঁড়ের ঝাপটা সহ্য করতে না পেরে ভেঙে যায় এবং ফুলসহ গজরাজের অন্য রাণী চুল্লসুভদ্দার ওপর গিয়ে পরে।

ঘটনাটি যদিও নিতান্তই একটি দুর্ঘটনা ছিল, কিন্তু চুল্লসুভদ্দা এটিকে নিজের অপমান মনে করে এবং সাথে সাথেই গজরাজের বাসস্থান ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যায়। যখন গজরাজ এই কথা জানতে পারে, তখন সে চুল্লসুভদ্দাকে অনেক খোঁজে, কিন্তু কোথাও তাকে পায় না। কিছুদিন পর চুল্লসুভদ্দার মৃত্যু হয় এবং মৃত্যুর পর সে মদ্দ রাজ্যের রাজকুমারী রূপে জন্ম নেয়। যুবতী হলে তার বারাণসীর রাজার সাথে বিয়ে হয় এবং সে বারাণসীর প্রধান রাণী হয়। পুনর্জন্মের পরেও সে ছদন্তরাজের দ্বারা ভুলবশত হওয়া সেই অপমানের কথা ভুলতে পারেনি এবং প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবতে থাকে। একদিন সুযোগ পেয়ে সে বারাণসীর রাজাকে ছদন্তরাজের দাঁত আনার জন্য প্ররোচিত করে। ফলস্বরূপ, রাজা কিছু দক্ষ শিকারীর দলকে গজরাজের দাঁত আনার জন্য পাঠিয়ে দেয়। গজরাজের দাঁত আনার জন্য রওনা হওয়া দলের নেতা ছিল সোনুত্তর। সোনুত্তর প্রায় ৭ বছর ধরে পথ অতিক্রম করে গজরাজের বাসস্থানে পৌঁছায়। সে গজরাজকে ধরার জন্য এবং শিকার বানানোর জন্য তার বাসস্থান থেকে কিছুটা দূরে একটি বড় গর্ত করে। গর্তটি ঢাকার জন্য সেটিকে পাতা ও ছোট কাঠ দিয়ে ঢেকে দেয় এবং নিজে ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

গজরাজ যেই গর্তের কাছে আসে, সোনুত্তর বিষ মাখানো তীর বের করে ছদন্তরাজকে লক্ষ্য করে মারে। তীরের আঘাতে আহত হওয়ার পর যখন গজরাজের নজর ঝোপের মধ্যে লুকানো সোনুত্তরের ওপর পরে, তখন সে তাকে মারার জন্য তাড়া করে। যেহেতু সোনুত্তর সন্ন্যাসীদের পোশাক পরে এসেছিল, তাই গজরাজ সোনুত্তরকে জীবন দান করে। গজরাজের থেকে জীবন দান পেয়ে সোনুত্তরের মন বদলে যায় এবং সে গজরাজকে সব কথা খুলে বলে এবং গজরাজকে মারার উদ্দেশ্য জানায়। জীবন দান পাওয়ার কারণে সোনুত্তর গজরাজের দাঁত কাটতে পারে না, তাই ছদন্তরাজ মৃত্যুর আগে নিজেই নিজের দাঁত ভেঙে সোনুত্তরকে দিয়ে দেয়। গজরাজের দাঁত পেয়ে সোনুত্তর বারাণসী ফিরে আসে এবং গজরাজের দাঁত রানীর সামনে রাখে। এছাড়াও সোনুত্তর রানীকে জানায় যে কিভাবে গজরাজ তাকে জীবন দান করে নিজে তার দাঁত দিয়ে দেয়। পুরো কথা জানার পর রানী গজরাজের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে সেই শোকে সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়।

এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে - প্রতিশোধের ভাবনা চিন্তা করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

বন্ধুরা, subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত ও বিশ্বের সাথে জড়িত সব ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করে থাকি। আমাদের প্রচেষ্টা হল, এইভাবেই আকর্ষণীয় এবং প্রেরণাদায়ক গল্পগুলি সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরনের প্রেরণামূলক গল্প ও কাহিনীর জন্য subkuz.com পড়তে থাকুন।

Leave a comment