গ্রামের দুই বন্ধু ও পাইপলাইনের সাফল্য

🎧 Listen in Audio
0:00

আজাদপুর গ্রামে মোহিত ও রমেশ নামে দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু থাকত। দুজনের বয়স প্রায় পনেরো বছর, আর দুজনেই পরস্পরের কথা মানত। গ্রীষ্মের দিনে গ্রামে খরা পড়েছিল, যার ফলে কূপগুলি শুকিয়ে গেছে। গ্রামের নারীরা নদী থেকে পানি এনে বহন করত, আর সেই পানিই ছিল তাদের জীবনরেখা।

একদিন মোহিত ও রমেশ নদীর ধারে ঘুরছিল। ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছিল, আর দুজনেই দেখল গ্রামের মহিলারা মটকা ভরছে। মোহিত রমেশকে বলল, "ভাই, কেন না আমরা গ্রামবাসীদের কাছে পানি পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করি? বিনিময়ে প্রতিটি মটকার জন্য পঁচিশ পয়সা নেব।"

রমেশের কাছে এই চিন্তাটি ভালো লেগেছিল, আর দুজনে মিলে এই কাজ শুরু করল। ধীরে ধীরে তাদের কাছে টাকা আসতে শুরু করল, আর দুজনেই সুখে থাকত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মোহিত বুঝতে পারল এই কাজ বেশি দিন চলবে না। একদিন সে রমেশকে বলল, "ভাই, আমরা কতদিন এভাবে মটকা বহন করব? যদি কালকে আমাদের কিছু হয়ে যায় তাহলে কি হবে?" রমেশ এটিকে হালকাভাবে নিল আর বলল, "ছাড়ো না, এখন তো সব ঠিক চলছে। পরে পরে দেখব।"

নতুন পথ, নতুন পরিচয়

মোহিতের মনে এই প্রশ্নটি বারবার কান্নাকাটি করতে লাগল। একদিন সে একজন কুমোরের কাছে গেল আর দেখল সে ঘড়া থেকে পানি বের করার জন্য একটি পাইপ ব্যবহার করছে। মোহিতের মাথায় একটি নতুন চিন্তা এল। সে কুমোরকে মোটা ও লম্বা পাইপ তৈরি করার জন্য বলল, যাতে নদী থেকে গ্রাম পর্যন্ত পানি আনা যায়।

শ্রম ও বুদ্ধিমত্তার ফলে সাফল্য

তিন মাসের পরিশ্রমের পর, মোহিত নদী থেকে গ্রাম পর্যন্ত পাইপলাইন বিছিয়ে দিল। এখন তার কাছে মটকা নয়, বরং পাইপলাইন থেকে পানি বিক্রির একটি বড় মাধ্যম ছিল। সে প্রতিটি মটকার জন্য মাত্র দশ পয়সা নেওয়া শুরু করল। গ্রামবাসীরাও খুশি ছিল, কারণ পানি সস্তা ও দ্রুত পাওয়া যাচ্ছিল। অন্যদিকে, রমেশের কাজ বন্ধ হয়ে গেল। মানুষ এখন তার মটকার জন্য পঁচিশ পয়সা কেন দেবে, যখন দশ পয়সাতেই পানি পাওয়া যাচ্ছে?

ধীরে ধীরে, মোহিত তার কাজ আরও বড় করল। সে আশেপাশের গ্রামগুলিতেও পাইপলাইন বিছিয়ে দিল এবং প্রচুর টাকা উপার্জন করল। মোহিতের জন্য তার এই পাইপলাইন সত্যিই টাকার গাছ হয়ে উঠল। সে দেখিয়ে দিল যে চিন্তাভাবনা বদলানোর মাধ্যমেই আসলে জীবন বদলে যায়।

নৈতিক শিক্ষা

বড় ও নতুন চিন্তাধারা সম্পন্ন ব্যক্তিরাই ভিড় থেকে আলাদা থাকে। পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে করা কাজ সবসময় সফল হয়।

Leave a comment