শীতকালে রুম হিটারের বিপদ এবং ব্যবহারের সতর্কতা

🎧 Listen in Audio
0:00

শীতকালে মানুষ নিজেকে গরম রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন করে। গ্রামীণ এলাকায়, মানুষ গরম থাকার জন্য কাঠ বা গোবরের ঘুঁটের মতো ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি ব্যবহার করে আগুন জ্বালায়। অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে মানুষ রুম হিটার বা ব্লোয়ারের উপর বেশি নির্ভরশীল। তবে, হিটারের অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর হতে পারে। এগুলো ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, বিশেষ করে হাঁপানি রোগীদের জন্য। তীব্র ঠান্ডা থেকে বাঁচতে মানুষ অনেকগুলো পোশাক পরে, তবুও তারা প্রায়ই কাঁপতে থাকে। গ্রামীণ ও শহুরে উভয় পরিস্থিতিতেই, এই মৌসুমে হিটার সবচেয়ে পছন্দের সমাধান হয়ে ওঠে। হিটার ঠান্ডা থেকে আরাম দিলেও, এর অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। আপনি যদি আপনার শরীর গরম রাখার জন্য ক্রমাগত হিটারের উপর নির্ভরশীল হন, তাহলে এর থেকে আসা বিপদ সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।

 

রুম হিটার থেকে হওয়া বিপদ:

যদিও অনেক মানুষ রুম হিটার পছন্দ করে, তবে তারা প্রায়ই এর থেকে হওয়া সম্ভাব্য বিপদগুলি উপেক্ষা করে। বেশিরভাগ রুম হিটারের মধ্যে একটি লাল-গরম ধাতুর রড থাকে যা আর্দ্রতা শোষণ করে বাতাসকে গরম করে, যা ঘরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

হিটার থেকে নির্গত বাতাস ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্ক করে দিতে পারে, যার ফলে ঘুমাতে অসুবিধা এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী হিটার, হ্যালোজেন হিটার বা ব্লোয়ারের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে, কারণ এই হিটারগুলো থেকে নির্গত রাসায়নিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষতি করে। হাঁপানি বা অ্যালার্জিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষভাবে হিটারের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

শিশুদের সম্পর্কিত সমস্যা:

রুম হিটার শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই ক্ষতিকর নয়, শিশুদের জন্যও ঝুঁকির কারণ। রুম হিটারের দীর্ঘক্ষণ সংস্পর্শে থাকার কারণে শিশুদের ত্বক এবং নাকের পথে ক্ষতি হতে পারে, যার ফলে কাশি, হাঁচি, বুকে জমাট বাঁধা এবং শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এছাড়াও, হিটারের সংস্পর্শে থাকার কারণে শিশুদের ত্বকে ফুসকুড়ি এবং নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যা হতে পারে।

 

অক্সিজেনের অভাব হতে পারে:

বদ্ধ ঘরে কখনও একটানা হিটার ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি দ্রুত বাতাস থেকে অক্সিজেন কমিয়ে দেয়, যার ফলে মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব এবং মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা যায়। স্বাভাবিক অক্সিজেনের মাত্রা বজায় রাখার জন্য হিটার ব্যবহার করার সময় ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখা দরকার।

বিষাক্ত গ্যাসের কুফল:

হিটার কার্বন মনোক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত করে, যা মস্তিষ্কের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। কার্বন মনোক্সাইডের সংস্পর্শে শুধু শিশুরাই নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত অ্যালার্জি আছে এমন ব্যক্তিদের হিটার যুক্ত ঘরে থাকার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

হাঁপানির সমস্যা হতে পারে:

যদি আপনার হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত কোনো সমস্যা থাকে, তাহলে হিটারের ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। হিটার শুধুমাত্র গরম বাতাসই ছাড়ে না, গ্যাসও নির্গত করে যা কাশি, চোখে জ্বালা এবং শরীরে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে।

 

উপায়:

যদি আপনি হিটার কিনছেন, তাহলে তেল হিটার কেনার কথা বিবেচনা করুন, যা অন্য প্রকারের তুলনায় বেশি নিরাপদ।

বাতাসে আর্দ্রতা যোগ করতে এবং শুষ্কতা প্রতিরোধ করার জন্য হিটারের কাছে জল ভর্তি একটি পাত্র রাখুন।

যদি হিটারের কারণে আপনার চোখে জ্বালা অনুভব হয়, তাহলে অবিলম্বে ঠান্ডা জল দিয়ে আপনার চোখ ধুয়ে নিন।

সারা রাত একটানা হিটার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি আপনার ত্বক শুষ্ক করে দিতে পারে এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। পরিবর্তে, ঘর গরম হয়ে গেলে ঘুমানোর এক বা দুই ঘণ্টা আগে হিটার বন্ধ করে দিন।

যখন ঘরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য খুব বেশি গরম হয়ে যায়, তখন জানালা বা দরজা খুলুন।

হিটার ত্বকের ক্ষতিও করতে পারে। দীর্ঘক্ষণ হিটারের সংস্পর্শে থাকার কারণে ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে, যার ফলে চুলকানি হতে পারে এবং ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে। তাই, সীমিত সময়ের জন্য হিটার ব্যবহার করার এবং ঘর যথেষ্ট গরম হয়ে গেলে সেগুলো বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

নোট: আমাদের উদ্দেশ্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র তথ্য প্রদান করা। আমরা কোনো চিকিৎসা পরামর্শ বা চিকিৎসা প্রদান করি না। শুধুমাত্র একজন যোগ্য চিকিৎসা পেশাদারই উপযুক্ত পরামর্শ দিতে পারেন, কারণ তাদের প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে।

Leave a comment