রাতে দুধ পান: কাদের জন্য ক্ষতিকর এবং কেন?

🎧 Listen in Audio
0:00

দুধকে আয়ুর্বেদ ও আধুনিক বিজ্ঞান উভয় ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়। এতে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলি থাকে যা হাড়, মস্তিষ্ক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। কিন্তু কি আপনি জানেন যে দুধের ভুল সময়ে সেবন বা কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে এর সেবন স্বাস্থ্যের ক্ষতিও করতে পারে?

বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দুধ পান করা ভারতে একটি সাধারণ অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস ক্ষতিকারক হতে পারে। আসুন জেনে নিই কোন ৫ ধরণের মানুষের রাতে দুধ পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং কেন।

অম্লতা ও অপচের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য রাতের দুধ উপকারী নয়

যদি আপনার প্রায়ই অম্লতা, গ্যাস বা পেটে ভারী ভাবের অভিযোগ থাকে, তাহলে রাতে দুধ পান করা আপনার জন্য ঠিক নয়। দুধ হজম করতে কিছুটা সময় লাগে কারণ এটি ভারী। তাই রাতে দুধ পান করলে আপনার পেটে ফুলে উঠতে পারে এবং বুকে জ্বালাও হতে পারে। সাথে সকালে উঠে আপনার পেট ভারী বা ফোলা মনে হতে পারে।

কি করবেন:

যদি আপনার দুধ পান করার প্রয়োজন বোধ হয়, তাহলে তা হালকা গরম করে হলুদ মিশিয়ে পান করুন। এতে দুধ হালকা হয় এবং হজম করতে সুবিধা হয়। সাথে চেষ্টা করুন রাতের বদলে সকালে বা বিকেলে দুধ পান করুন। এবং মনে রাখবেন খাওয়ার সাথে সাথে দুধ পান করবেন না কারণ এতে হজমে সমস্যা হতে পারে।

ওজন কমাতে চাইলে রাতের দুধ থেকে দূরে থাকুন

যদি আপনি ওজন কমাতে চান, তাহলে রাতে দুধ পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত। দুঁধে ফ্যাট ও ক্যালোরি থাকে, যা শারীরিক কার্যকলাপ ছাড়া শরীরে জমা হতে পারে। বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ক্যালোরিযুক্ত জিনিসপত্র খাওয়া-পান করা ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। তাই রাতে দুধ পান করা স্থূলতা বৃদ্ধি করতে পারে।

কি করবেন:

যদি আপনি ডায়েটে থাকেন, তাহলে ফুল ক্রিম দুধের বদলে টোন্ড বা স্কিমড দুধ সেবন করুন। সাথে, দুধের সাথে মিষ্টি বা ড্রাই ফ্রুটস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এতে ক্যালোরির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। দুধ দিনের বেলায় পান করা ভালো যাতে আপনার শরীর তা ভালোভাবে হজম করতে পারে।

কাশি, সাইনাস ও অ্যালার্জির সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে দুধ

যদি আপনার বারবার ঠান্ডা লাগা, সর্দি, কাশি, সাইনাস বা অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তাহলে রাতে দুধ পান করা আপনার জন্য ঠিক নয়। দুধ শরীরে মিউকাস বা বাল্গম বৃদ্ধি করে, যার ফলে আপনার নাক বন্ধ হতে পারে এবং গলায় ব্যথা বা ভারী ভাব অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে সকালে উঠার সময় এই সমস্যা বেশি অনুভূত হয়।

কি করবেন:

যদি আপনার দুধ পান করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাতে একটু আদা, কালো মরিচ বা হলুদ মিশিয়ে নিন। এই উপকরণগুলি দুধের বাল্গম তৈরির প্রভাব কমায় এবং আপনাকে স্বস্তি দেয়। সাথে, চেষ্টা করুন দুধ দিনের বেলায় পান করুন যাতে আপনার অ্যালার্জি বা সাইনাসের সমস্যা না বাড়ে।

মধুমেহ রোগীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে

মধুমেহ রোগীদের রাতে দুধ পান করার সময় খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ দুধে ল্যাকটোজ নামক একটি প্রাকৃতিক চিনি থাকে, যা শরীরে গ্লুকোজে পরিণত হয় এবং এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষ করে যদি রাতে আপনি কোন শারীরিক কার্যকলাপ না করেন, তাহলে দুধ পান করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

কি করবেন:

মধুমেহ রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া রাতে দুধ পান করা থেকে বিরত থাকুন। যদি ডাক্তার অনুমতি দেন, তাহলে কম ফ্যাটযুক্ত দুধ সীমিত পরিমাণে পান করুন। এছাড়াও, শর্করার মাত্রার উপর নজর রাখুন এবং সময় সময় রক্ত পরীক্ষা করাতে থাকুন যাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য দুধ একেবারেই নয়

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য দুধ পান করা একেবারেই ঠিক নয়। এই অবস্থায় শরীর দুধে থাকা ল্যাকটোজ নামক চিনিকে হজম করতে পারে না। এর ফলে দুধ পান করার পর পেটে ব্যথা, গ্যাস, অপচ, ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা হতে পারে। এ ধরণের ব্যক্তিদের দিন হোক বা রাত, কখনোই দুধ পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত যাতে এই সমস্যাগুলি না হয়।

কি করবেন:

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা ল্যাকটোজ-মুক্ত দুধ সেবন করতে পারেন অথবা সয়া, বাদাম, ওটের মতো উদ্ভিদ থেকে তৈরি দুধ (প্লান্ট-বেসড মিল্ক) এর বিকল্প বেছে নিতে পারেন। এছাড়াও, আপনার ডাক্তার বা বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করেই দুধ বা দুধের বিকল্প সেবন করুন যাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

দুধ পানের সঠিক সময় ও পদ্ধতি কি হতে পারে?

দুধ পানের সঠিক সময় ও পদ্ধতি প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আলাদা হতে পারে, কারণ প্রত্যেকের শরীরের হজম ব্যবস্থা আলাদা। যদি আপনার অম্লতা, মধুমেহ, অ্যালার্জি ইত্যাদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে আপনি রাতে দুধ পান করতে পারেন, কিন্তু কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরী:

  • দুধ সর্বদা হালকা গরম করে পান করুন, ঠান্ডা দুধ শরীর হজম করতে অসুবিধা হতে পারে।
  • দুধে হলুদ, ইলাচি বা আদা মিশিয়ে পান করা উপকারী, এতে দুধের পুষ্টির সাথে সাথে এর প্রভাবও ভালো হয়।
  • দুধ পান করার পর তৎক্ষণাৎ ঘুমাতে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা বা হালকা শারীরিক কার্যকলাপ করা ভালো।
  • রাতের খাবার ও দুধ পান করার মাঝে অন্তত এক ঘন্টার ব্যবধান রাখুন, যাতে আপনার হজম ঠিকভাবে হয় এবং দুধ ভালোভাবে হজম হয়।

দুধকে সম্পূর্ণ খাদ্য বলা হয়েছে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে সকলেই যেকোনো সময় এটি পান করতে পারেন। যদি আপনার স্বাস্থ্যের অবস্থা উপরে বর্ণিত যেকোনো শ্রেণীতে পড়ে, তাহলে আপনাকে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করেই দুধ সেবন করা উচিত। ভুল সময় বা পরিস্থিতিতে দুধ পান করা লাভের বদলে ক্ষতিও করতে পারে।

Leave a comment