প্রিম্যাচিওর (সময়ের আগে জন্মানো) বাচ্চা: দেখতে কেমন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রিম্যাচিওর (সময়ের আগে জন্মানো) বাচ্চা কেমন হয়?What is a premature baby like?

প্রত্যেক মা ও সন্তানের সম্পর্ক গর্ভধারণ থেকেই শুরু হয়। এটা তো সবাই জানে যে, একটি শিশুর জন্ম নয় মাস পর হয়, কিন্তু কিছু বাচ্চা চিকিৎসার কারণে নয় মাস পুরো হওয়ার আগেই সাত বা আট মাসে জন্ম নেয়। এই ধরনের শিশুরা অন্যদের তুলনায় দুর্বল হয়। নয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রি-ম্যাচিওর বেবি বলা হয়।

চিকিৎসার কারণে, কিছু শিশু নয় মাসের আগে জন্ম নেয়। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের প্রি-ম্যাচিওর বেবি বলা হয়। "প্রিম্যাচিওর শিশু" শব্দটি সেই শিশুদের বোঝায়, যারা নয় মাস পর্যন্ত মায়ের গর্ভে থাকতে পারে না। এই কারণেই সময়ের আগে জন্মানো শিশুরা সাধারণ শিশুদের তুলনায় একটু দুর্বল হয়। তাই ডাক্তাররা এই ধরনের শিশুদের বেশি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দেন। এটা মনে রাখতে হবে যে, মায়ের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনির সমস্যা বা হৃদরোগের কারণে বাচ্চার জন্ম সময়ের আগে হতে পারে।

তবে, অনেক মহিলার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের দেখতে কেমন হয় এবং তারা কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তাই, এই নিবন্ধে আমরা সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। সময়ের আগে জন্মানো বাচ্চা দেখতে কেমন হয়? সাধারণ শিশুদের তুলনায় সময়ের আগে জন্মানো শিশুরা একটু আলাদা দেখতে হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের মাথা তাদের শরীরের চেয়ে বড় দেখা যেতে পারে।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুরা সাধারণত সাধারণ শিশুদের তুলনায় দুর্বল হয়। এদের শরীরে ফ্যাট খুব কম থাকে।

সময়ের আগে জন্মানো বাচ্চার শরীর ছোট এবং খুব দুর্বল হতে পারে। শিশুর রক্তনালী দেখা যেতে পারে।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের পিঠ এবং কাঁধে লোম থাকতে পারে। এছাড়াও, তাদের শরীরে ফ্যাট কম থাকার কারণে ত্বক পাতলা দেখাতে পারে।

প্রসবের পর সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের NICU-তে কেন রাখা হয়? সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। তাই, ডাক্তাররা সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের কিছু দিনের জন্য নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (NICU) রাখেন।

NICU-কে বাংলায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বলা হয়। যদিও সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে, কিন্তু তাদের সুরক্ষার জন্য হাসপাতালের NICU-তে রাখা হয়।

NICU-তে ডাক্তার ও নার্সদের একটি দল শিশুর যত্ন নেয়। শিশুকে কয়েক দিনের জন্য NICU-তে রাখা হয়। যদি শিশুর অবস্থা স্বাভাবিক না হয়, তবে তাদের আরও বেশি সময় NICU-তে রাখা হতে পারে।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুর লক্ষণ: সাধারণ শিশুদের তুলনায়, সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের শারীরিক কার্যকলাপ কম থাকে।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের ওজন কম হয়।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুরা সাধারণ শিশুদের তুলনায় দুর্বল হয়।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের ত্বক সাধারণ শিশুদের তুলনায় পাতলা হয়।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যা: সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।

অ্যানিমিয়া: সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের অ্যানিমিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে, কারণ তাদের শরীরে প্রায়ই লোহিত রক্তকণিকার অভাব থাকে।

জন্ডিস: শিশুর শরীরে অতিরিক্ত বিলিরুবিন জন্ডিসের কারণ হতে পারে।

শ্বাস নিতে অসুবিধা: যদি অ্যাপনিয়াতে শিশুর মস্তিষ্ক ঠিকমতো বিকশিত না হয়, তাহলে শিশুর শ্বাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস নিতে অসুবিধা হলে তা জীবনহানিকর হতে পারে।

সংক্রমণের ঝুঁকি: গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের কারণে সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা: কিছু সময়ের আগে জন্মানো শিশুর হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

সায়ানোসিসের সমস্যা: সাধারণ শিশুদের তুলনায় সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা অনেক কম থাকে, যার কারণে সায়ানোসিস হতে পারে।

অন্ধত্বের ঝুঁকি: সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের দুর্বল চোখের কারণে অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকে। তাই, এই ধরনের শিশুদের অন্ধত্বের ঝুঁকি থাকতে পারে।

 

সময়ের আগে জন্মানো শিশুর যত্ন কিভাবে নেবেন:

সময়ের আগে জন্মানো শিশুকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, তাই ডাক্তাররা নিম্নলিখিত পরামর্শ দিতে পারেন:

ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার: এটি এমন একটি কৌশল যেখানে মা ও শিশুর মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে ত্বক থেকে ত্বকের সংযোগ থাকে, যেখানে মা বাচ্চাকে তার বুকের সাথে লাগিয়ে রাখে। এই কৌশল মা ও শিশুর মধ্যে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে।

বুকের দুধ খাওয়ানোর গুরুত্ব বোঝা: আমরা সবাই জানি যে, নবজাতকের জন্য মায়ের দুধ জরুরি। তাই, বাচ্চা জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করে দেওয়া উচিত।

তবে, সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের সাধারণত চুষতে বা গিলতে অসুবিধা হয়, তাই তাদের কাপ, চামচ বা নাসোগ্যাস্ট্রিক টিউবের মাধ্যমে খাবার দেওয়া হয়।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের ঘুমের দিকে বিশেষ নজর রাখা উচিত, তাই তাদের আরামের জন্য নরম বিছানায় শোয়ানো উচিত।

শিশুর শরীর সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত, তাই শিশুর শরীর নরম টিস্যু ও পরিষ্কার জল দিয়ে পরিষ্কার করা উচিত।

এছাড়াও, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বেবি অয়েল বা বেবি সোপ ব্যবহার করুন।

সময়ের আগে জন্মানো শিশুদের বেশি গরম বা ঠান্ডা জায়গায় শোয়ানো উচিত নয়, কারণ এর ফলে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

এছাড়াও, আরাম প্রদানের জন্য শিশুকে সাধারণ তাপমাত্রার জায়গায় শোয়ান।

```

Leave a comment