আমেরিকায় মাম্পসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব: ৭০০-এর বেশি সংক্রমণ

আমেরিকায় মাম্পসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব: ৭০০-এর বেশি সংক্রমণ
সর্বশেষ আপডেট: 12-04-2025

আমেরিকায় মাম্পস (Measles) এর প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত মাম্পসের সংক্রমণের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হচ্ছে শিশুরা।

মাম্পস প্রাদুর্ভাব: আমেরিকায় এ বছর মাম্পসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এটি বিশেষ করে শিশুদের প্রভাবিত করছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত মাম্পসের সংক্রমণের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে এবং অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়েছে। আমেরিকার স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র একটি বৈঠকে বলেছেন যে, মাম্পসের সংক্রমণ জাতীয় পর্যায়ে স্থির হচ্ছে, তবে এই ভাইরাসটি মূলত অ-টিকাভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছড়াচ্ছে।

এর উপর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC) ওয়েস্ট টেক্সাসে একটি দল মোতায়েন করেছে, যারা মানুষকে টিকা দিচ্ছে এবং সংক্রমণের বিস্তার রোধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ভাইরাসের বিস্তার এবং টিকাকরণের অভাব

আমেরিকার স্বাস্থ্য ও মানব সেবা বিভাগের সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র একটি সাম্প্রতিক বৈঠকে জানিয়েছেন যে, মাম্পসের সংক্রমণ বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে স্থির হওয়ার দিকে যাচ্ছে, তবে ভাইরাসটি সেসব সম্প্রদায়ে ছড়াচ্ছে যেখানে টিকাকরণের হার খুব কম। এটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে কারণ এ ধরণের এলাকা মহামারীর জন্য আরও সংবেদনশীল। বিশেষ করে, ওয়েস্ট টেক্সাসের মতো এলাকায় টিকাকরণ অভিযান চালানো হচ্ছে যাতে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করা যায়।

বিশ্বব্যাপী মাম্পসের ঘটনা বৃদ্ধি

এই বছর মাম্পসের সংক্রমণে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি দেখা গেছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আমেরিকায় মাম্পসের সংক্রমণের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। একইভাবে, ভারতের মতো দেশগুলিতেও মাম্পসের সংক্রমণে হঠাৎ বৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং CDC-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মাম্পসের সংক্রমণে ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩ সালে ১০.৩ মিলিয়ন মাম্পসের কেস রেকর্ড করা হয়েছিল, যার ফলে এই রোগটি আবার উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে।

ভারতে মহামারীর পর মাম্পসের সংক্রমণে বৃদ্ধি

ভারতেও কোভিড-১৯ মহামারীর পর মাম্পসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারীর সময় জাতীয় টিকাকরণ অভিযানে প্রভাব পড়েছিল, যার ফলে অনেক শিশু মাম্পসের টিকা পায়নি। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মাম্পসের সংক্রমণে ৬২% হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু এখন এই সংখ্যা আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের মধ্যে টিকাকরণের অভাব এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

টিকাকরণই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাম্পস থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল Measles, Mumps, Rubella (MMR) টিকা নেওয়া। শিশুদের ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সে এই টিকা এবং ৪ থেকে ৬ বছর বয়সে দ্বিতীয় টিকা নেওয়া উচিত। এছাড়াও, যারা আগে টিকা নিয়েছিল কিন্তু তাদের টিকাকরণের অবস্থায় কোনও পরিবর্তন হয়েছে, তাদের বুস্টার টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাম্পসের মতো ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে টিকাকরণ অপরিহার্য এবং এটাই একমাত্র উপায় যার দ্বারা এই রোগকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়াও, করোনা মহামারীর কারণে টিকাকরণে যে বাধা এসেছিল, তার জন্য এখন বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সংক্রমণ রোধে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা জরুরি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সকল দেশের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে তারা শিশুদের টিকাকরণ অভিযান আরও শক্তিশালী করে, যাতে মাম্পসের মতো বিপজ্জনক ভাইরাসের বিস্তার রোধ করা যায়। বিশেষ করে, আমেরিকা, ইউকে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখন সেই শিশুদের চিহ্নিত করার এবং তাদের টিকাকরণ করার জন্য কাজ করছেন যারা মহামারীর সময় টিকা পায়নি।

Leave a comment