হরতালিকা তীজের ব্রতকথা Hartalika Teej-এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী
বিশ্বাস করা হয়, ভগবান শিব দেবী পার্বতীকে তাঁর পূর্বজন্মের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য এই কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন। ভগবান শিব দেবী পার্বতীকে বলেন-
হে পার্বতী! তুমি আমাকে স্বামী রূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলে। তুমি অন্নজল ত্যাগ করে শুষ্ক পাতা খেয়েছিলে, শীতে ক্রমাগত জলে বসে তপস্যা করেছিলে। বৈশাখের প্রখর রোদে পঞ্চাগ্নি ও সূর্যের তাপে নিজেকে দগ্ধ করেছিলে। শ্রাবণের মুষলধারে বৃষ্টিতে অন্নজল ছাড়া খোলা আকাশের নিচে দিন কাটিয়েছিলে। তোমার এই কঠোর কষ্টসাধ্য তপস্যায় তোমার পিতা হিমবৎ প্রচুর দুঃখিত ও অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তোমার এত কঠোর তপস্যা ও তোমার পিতার ক্রোধ দেখে একদিন নারদ মুনি তোমার বাড়িতে আসেন।
তোমার পিতা হিমবৎ যখন তাঁর আগমনের কারণ জানতে চাইলেন, তখন নারদ মুনি বললেন, ‘হে হিমবৎ! আমি ভগবান বিষ্ণুদেবের নির্দেশে এখানে এসেছি। আপনার কন্যার কঠোর তপস্যায় খুশি হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁর সাথে বিবাহ করার ইচ্ছা পোষণ করছেন। এই বিষয়ে আমি আপনার সম্মতি জানতে চাই।’ নারদ মুনির কথা শুনে তোমার পিতা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বললেন, ‘শ্রীমান, যদি স্বয়ং বিষ্ণুদেব আমার কন্যার সাথে বিবাহ করতে চান, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। ভগবান বিষ্ণু তো স্বয়ং ব্রহ্মার রূপ। প্রতিটি পিতাই চায় তার কন্যা সুখে থাকুক এবং স্বামীর গৃহে লক্ষ্মীর রূপ ধারণ করুক।
তোমার পিতার সম্মতি পাওয়ার পর নারদ মুনি বিষ্ণুদেবের কাছে গিয়ে বিবাহ ঠিক হওয়ার সংবাদ দিলেন। এদিকে যখন তুমি এই বিষয়টি জানতে পারলে, তখন তুমি অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে পড়লে। তোমাকে দুঃখিত দেখে তোমার বান্ধবী তোমার দুঃখের কারণ জিজ্ঞাসা করল। তখন তুমি বললে, ‘আমি মনের আন্তরিকতা থেকে ভগবান শিবকেই আমার স্বামী মেনে নিয়েছি, কিন্তু আমার পিতা বিষ্ণুদেবের সাথে আমার বিবাহ ঠিক করে দিয়েছেন। আমি এমন ধর্মসংকটে আছি যে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’ তোমার বান্ধবী তোমাকে সাহস দিয়ে বলল, ‘সংকটের সময় ধৈর্য্য ধরার প্রয়োজন হয়। তুমি আমার সাথে ঘন জঙ্গলে চলো যেখানে সাধনাও করা হয়। সেখানে তোমাকে তোমার পিতা খুঁজে পাবে না। আমার পূর্ণ আশা, ভগবান অবশ্যই তোমার সাহায্য করবেন।’
তুমি তোমার বান্ধবীর কথা শুনে তাই করলে। তোমার ঘর থেকে এভাবে চলে যাওয়ায় তোমার পিতা অত্যন্ত দুঃখিত ও চিন্তিত হলেন। তিনি তখন ভাবতে লাগলেন, আমি আমার কন্যার বিবাহ বিষ্ণুদেবের সাথে ঠিক করে দিয়েছি। যদি ভগবান বিষ্ণু বারাত নিয়ে আসেন এবং কন্যা এখানে না থাকে, তাহলে অনেক অপমান সহ্য করতে হবে। তোমার পিতা তোমাকে সর্বত্র খুঁজতে শুরু করলেন। অন্যদিকে তুমি নদীর তীরে একটি গুহায় পুরো মনে আমার আরাধনায় নিমগ্ন হয়ে গেলে। তারপর তুমি বালু দিয়ে একটি শিবলিঙ্গ তৈরি করলে। রাতভর তুমি আমার স্তুতিতে ভজন-কীর্তন করেছিলে। তুমি অন্নজল ছাড়া গর্হণ করে আমার ধ্যান করেছিলে, তোমার এই কঠোর তপস্যায় আমার আসন কেঁপে উঠল এবং আমি তোমার কাছে এলাম।
আমি তোমাকে তোমার ইচ্ছামত কোনো বর চাইতে বললাম, তুমি তখন আমাকে তোমার সামনে দেখে বললে, "আমি আপনাকে মনের আন্তরিকতা থেকে আমার স্বামী মেনে নিয়েছি। যদি আপনি সত্যিই আমার এই তপস্যায় খুশি হয়ে আমার সামনে এসেছেন, তাহলে আমাকে আপনার পত্নীরূপে গ্রহণ করুন।" আমি তোমার কথা শুনে তথাস্তু বলে কৈলাসে চলে গেলাম। তুমি প্রাতঃকালে হয়ে পূজার সকল উপকরণ নদীতে প্রবাহিত করে তোমার সখীর সাথে ব্রতের বর্ণনা করলে।
ঠিক সেই সময় তোমার পিতা হিমবৎ তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে সেখানে পৌঁছে গেলেন। তোমার অবস্থা দেখে তোমার পিতা দুঃখিত হয়ে তোমার এই কঠিন তপস্যার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তুমি তোমার পিতাকে বুঝিয়ে বললে, ‘পিতা, আমি জীবনের অধিকাংশ সময় কঠিন তপস্যা করে কাটিয়েছি। আমার এই কঠোর তপস্যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শিবকে স্বামীরূপে লাভ করা। আমি আজ আমার তপস্যার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আপনি বিষ্ণুদেবের সাথে আমার বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাই আমি আরাধ্যের সন্ধানে ঘর থেকে দূরে চলে গেলাম। এখন আমি ঘরে আপনার সাথে এক শর্তে যাব, যখন আপনি মহাদেবের সাথে আমার বিবাহ করানোর জন্য প্রস্তুত হবেন।’
তোমার পিতা তোমার এই ইচ্ছা মেনে নিলেন এবং তোমাকে সাথে নিয়ে ফিরে গেলেন। তারপর কিছুদিন পর তোমার পিতা বিধি-বিধানের সাথে আমাদের বিবাহ করে দিলেন। ভগবান শিব আরো বলেন- ‘হে পার্বতী! তুমি ভাদ্রপদের শুক্ল তৃতীয়ায় আমার পূজা করে যে ব্রত করেছিলে, তারই ফলশ্রুতি হিসেবে আমাদের বিবাহ সম্ভব হয়েছিল। এই ব্রতের মহিমা এমন যে, যে কোনো অবিবাহিতা কন্যা এই ব্রত পালন করে, সে গুণী, বিদ্বান ও ধনী স্বামী পাওয়ার ভাগ্য লাভ করে। অন্যদিকে, বিবাহিতা স্ত্রী যখন এই ব্রত পূর্ণ বিধি-বিধানের সাথে পালন করে, তখন সে সৌভাগ্যবতী হয় এবং পুত্র ও ধন-সুখ লাভ করে।’
এই কাহিনী থেকে আমরা শিক্ষা পাই- সত্যিকারের মনোভাব ও পরিশ্রমের মাধ্যমে যদি কোনো বস্তুর ইচ্ছা করা হয়, তাহলে সেই ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ হয়।