হিন্দু পঞ্জিকায় প্রতি মাসেই আগমনকারী সংকষ্টী চতুর্থীর বিশেষ স্থান রয়েছে। এই ব্রত ভগবান গণেশকে উৎসর্গ করা হয়, যাঁকে বিঘ্নহর্তা এবং সংকটমোচক বলা হয়। আষাঢ় মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্থী তিথিকে "কৃষ্ণপিঙ্গল সংকষ্টী চতুর্থী" বলা হয়। এই দিনে ভক্তি ও নিয়মিত ব্রত ও পূজা করলে জীবনের সকল সংকট দূর হয় এবং সুখ-সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
সংকষ্টী চতুর্থীর ধর্মীয় গুরুত্ব
সংকষ্টীর অর্থ হল – সংকট দূরকারী। এই তিথি বিশেষ করে সেই ভক্তদের জন্য কল্যাণকর মনে করা হয়, যারা জীবনে কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ব্রত করলে ভগবান গণেশ প্রসন্ন হন এবং তাঁর ভক্তদের সকল দুঃখ দূর করেন।
এই ব্রত বিশেষ করে সন্তান লাভের ইচ্ছা, বুদ্ধি-বিবেকের বৃদ্ধি, পারিবারিক সুখ এবং আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য করা হয়। সংকষ্টী চতুর্থীর ব্রত বিশেষ ফলপ্রসূ মনে করা হয়, যখন এটি মঙ্গলবার বা শনিবারে পড়ে, কিন্তু প্রতি মাসের এই চতুর্থীও অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়।
গণেশ পূজা: কেন সর্বপ্রথম?
ভগবান গণেশকে ‘প্রথম পূজ্য’ দেবতা বলা হয়। কোনও শুভ কাজ বা পূজা-পাঠের শুরু গণেশজীর আরাধনার মাধ্যমেই হয়। তাঁর আশীর্বাদ সফলতা, সৌভাগ্য এবং নিরবচ্ছিন্ন জীবনের প্রতীক। এই কারণেই সংকষ্টী চতুর্থীতে গণেশজীর বিশেষ পূজা করা হয়।
সংকষ্টী চতুর্থীর তিথি ও শুভ মুহূর্ত (২০২৫)
পঞ্জিকা অনুযায়ী
- তিথি আরম্ভ: ১৪ জুন ২০২৫, দুপুর ০৩:৪৬ টা
- তিথি সমাপ্তি: ১৫ জুন ২০২৫, দুপুর ০৩:৫১ টা
পূজার সর্বোত্তম সময়: চন্দ্রোদয়ের পর, অর্থাৎ চতুর্থী তিথির রাতে গণেশজীর পূজা এবং চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দেওয়া সবচেয়ে শুভ মনে করা হয়।
সংকষ্টী চতুর্থীর পূজাবিধি
১. শুদ্ধি ও সংকল্প
- প্রাতঃকালে স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন।
- পূজা স্থল পরিষ্কার করুন এবং সেখানে চৌকিতে লাল বা হলুদ কাপড় বিছান।
- ভগবান গণেশের মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন।
- দুই হাত জোড় করে ব্রতের সংকল্প করুন।
২. পূজা সামগ্রী দিয়ে পূজন
- ভগবান গণেশকে হলুদ ফুল, দূর্বা, অক্ষত (চাল), হলুদ চন্দন অর্পণ করুন।
- গণেশজীকে মোদক, লাড্ডু অথবা গুড়ের ভোগ দিন – এটি তাঁর প্রিয় প্রসাদ।
- দীপ জ্বালান এবং আগরবাতি অর্পণ করুন।
৩. মন্ত্র ও স্তোত্র জপ
- ‘ॐ গং গণপতয়ে নমঃ’ মন্ত্রের ১০৮ বার জপ করুন।
- ইচ্ছা করলে গণেশ অর্থর্ষীর্ষ, সংকটনাশন স্তোত্র অথবা গণেশ চালীসার পাঠ করুন।
৪. আরতি ও অর্ঘ্য
- সন্ধ্যাকালে গণেশজীর আরতি করুন।
- চন্দ্রোদয়ের পর তাঁকে জল দিয়ে অর্ঘ্য দিন এবং প্রার্থনা করুন।
৫. ব্রত পারণ
- চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দেওয়ার পর ফলাহার করুন অথবা নিয়ম অনুযায়ী ব্রত পারণ করুন।
সংকষ্টী চতুর্থী ব্রতের লাভ
১. সংকট থেকে মুক্তি
এই ব্রত পালন করলে জীবনের কঠিন সমস্যা দূর হয় এবং সফলতা অর্জিত হয়।
২. সন্তান সুখের প্রাপ্তি
নিঃসন্তান দম্পতি যদি বিধিপূর্ণভাবে এই ব্রত পালন করে তাহলে সন্তান সুখ লাভ করে।
৩. বুদ্ধি ও বিবেকের বৃদ্ধি
ছাত্রছাত্রী ও কর্মজীবনে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ব্যক্তিরা এই ব্রত পালন করে মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারে।
৪. স্বাস্থ্য লাভ
এই ব্রত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু প্রদান করে।
৫. পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি
সংকষ্টী ব্রত পালনকারীর বাড়িতে সুখ-শান্তি বজায় থাকে এবং দারিদ্র্য দূর হয়।
পৌরাণিক কথা
পৌরাণিক কথার মতে, একবার মা পার্বতী গণেশজীকে চতুর্থী তিথিতে উপবাস করার আদেশ দেন। গণেশজী পুরোপুরি ভক্তি সহকারে ব্রত পালন করেন এবং ফলস্বরূপ তিনি ত্রিলোকে বন্দনীয় স্থান লাভ করেন। সেই থেকেই এই তিথি ব্রত ও পূজার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।
সংকষ্টী চতুর্থীর ব্রত কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং আস্থা, অনুশাসন এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধির প্রতীক। এই দিনটি ভগবান গণেশের প্রতি ভক্তি প্রকাশ এবং তাঁর আশীর্বাদে জীবনে সুখ-শান্তি লাভের একটি উত্তম সুযোগ।