মিথুন সংক্রান্তি ২০২৫: পিতৃতর্পণ, দান ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধির পথ

🎧 Listen in Audio
0:00

হিন্দু ধর্মে প্রতিটি সংক্রান্তিরই বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কিন্তু মিথুন সংক্রান্তিকে পিতৃকৃপা লাভ এবং দান-পুণ্যের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যখন সূর্যদেব বৃষ রাশি থেকে বেরিয়ে মিথুন রাশিতে প্রবেশ করেন, তখন এই জ্যোতির্বিদ্যাগত ঘটনাকে ‘মিথুন সংক্রান্তি’ বলা হয়। এই বছর এই পবিত্র দিনটি ১৫ জুন ২০২৫ (শনিবার) পালিত হবে।

বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে করা তর্পণ, দান এবং স্নান কেবল ধার্মিক নয়, আত্মিক শুদ্ধির জন্যও অত্যন্ত ফলপ্রসূ। আসুন জেনে নিই মিথুন সংক্রান্তির দিন কোন কোন বিশেষ কাজ করা উচিত, যাতে পিতারা প্রসন্ন হন এবং আপনার জীবনের দোষ দূর হয়।

মিথুন সংক্রান্তির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব

সংক্রান্তির অর্থ – সংক্রমণ বা প্রবেশ। মিথুন সংক্রান্তি সেই সময় যখন সূর্য মিথুন রাশিতে প্রবেশ করেন এবং এই পরিবর্তন ইতিবাচক শক্তির সঞ্চারের প্রতীক বলে মনে করা হয়। শাস্ত্র অনুসারে, এই দিনে করা তর্পণ এবং দান পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সন্তুষ্ট করে এবং তাদের আশীর্বাদে জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি এবং মানসিক শান্তি আসে।

স্নানের পুণ্যলাভ

মিথুন সংক্রান্তির দিন পবিত্র নদী, সরোবর বা জলাশয়ে স্নান করা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। যদি এটি সম্ভব না হয়, তবে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করুন। এতে শরীর ও মনের উভয়েরই শুদ্ধি হয় এবং এটি আপনাকে ধার্মিক কাজের জন্য প্রস্তুত করে।

পিতৃতর্পণ করুন – পিতৃদের আত্মাকে দিন শান্তি

  • স্নানের পর, দক্ষিণ দিকে মুখ করে আপনার পিতৃদের ধ্যান করুন।
  • জলে কালো তিল, যব, এবং কুশ দিয়ে তর্পণ করুন।
  • গোত্রের উচ্চারণ করুন এবং ‘গোত্রে অস্মা কং বসুরূপণাম্ শ্রাদ্ধং তিলোদকং দাতুং নমঃ’ মন্ত্র বলে জলটি তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের মাঝ দিয়ে তিনবার ফেলে দিন।
  • এই প্রক্রিয়া পিতৃদের সন্তুষ্টি প্রদান করে এবং পিতৃদোষ কমায়।

সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়া – দোষের নিবারণ

সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দেওয়ার ফলে আত্মিক শক্তির বিকাশ হয়।

  • তামার লোটায় জল ভরুন
  • তাতে কালো তিল, লাল ফুল এবং গুড় দিন
  • সূর্যকে অর্ঘ্য দিতে দিতে ‘ॐ সূর্যায় নমঃ’ মন্ত্রের জপ করুন।

এই উপায় সূর্যের সাথে জড়িত নেতিবাচকতা দূর করে এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে।

অন্ন ও ভোজনের দান – পূর্বপুরুষদের অর্পণ

মিথুন সংক্রান্তির দিন কোনও দরিদ্র, বৃদ্ধ বা ব্রাহ্মণকে রান্না করা খাবার বা কাঁচা অন্ন দান করা অত্যন্ত পুণ্যদায়ক। আপনি চাইলে খিচুড়ি, পুরি-সবজি, মিষ্টি ইত্যাদি বানিয়ে দরকারমন্দদের খাওয়াতে পারেন।

এতে পিতৃদের সন্তুষ্টি মেলে এবং জীবনে অন্ন-ধনের কখনো অভাব হয় না।

কালো তিলের দান – শনি দোষ থেকে মুক্তি

কালো তিলের দান মিথুন সংক্রান্তিতে বিশেষ গুরুত্ব রাখে।

  • এটি কোনও ব্রাহ্মণ বা দরকারমন্দকে দান করলে
  • শনি দোষ শান্ত হয়
  • এবং পিতৃদের মোক্ষ লাভ হয়।

এই উপায় পিতৃঋণ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

গোসেবা – পিতৃ আশীর্বাদ পাওয়ার সহজ পথ

গোসেবা করা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পুণ্যদায়ক কাজ বলে মনে করা হয়।

  • এই দিন গোকে সবুজ ঘাস, গুড়, বা চনা খাওয়ালে
  • আপনার পিতারা প্রসন্ন হন
  • এবং ঘরে বাস্তুদোষ দূর হয়।

পিপুল পূজন ও দীপদান

মিথুন সংক্রান্তির দিন পিপুল গাছের নিচে দীপ জ্বালিয়ে, জল অর্পণ করে এবং ‘ॐ নমঃ ভগবতে বাসুদেবায়’ মন্ত্রের জপ করুন।

  • এই উপায় পিতৃদের প্রসন্ন করে
  • এবং গ্রহদের শান্তিতে সাহায্য করে।

বিশেষ সাবধানতা ও ধর্মাচরণ

  • এই দিন মাংস-মদ্য, ক্রোধ এবং অপশব্দ থেকে বিরত থাকুন।
  • যতটা সম্ভব, মৌন থাকুন এবং ধ্যান-ভজন করুন।
  • মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন এবং সাত্ত্বিক খাবারই গ্রহণ করুন।

মিথুন সংক্রান্তি কেবল একটি জ্যোতিষীয় ঘটনা নয়, বরং পিতৃপ্রেম ও আত্মিক শুদ্ধির উৎসব। এই দিনে করা তর্পণ ও দানের মাধ্যমে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের শ্রদ্ধাপূর্ণ স্মরণ করি এবং তাদের আশীর্বাদে জীবনকে সমৃদ্ধ করি। ১৫ জুন ২০২৫ এই পবিত্র দিনে আপনিও এই সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলি অবলম্বন করুন এবং আপনার জীবনে পিতৃকৃপা লাভ করুন।

Leave a comment