পুত্রদা একাদশী, যা সন্তান লাভ এবং পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, ২০২৫ সালে ১০ জানুয়ারী পালিত হবে। পঞ্চাঙ্গ অনুযায়ী, একাদশী তিথি ৯ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১২:২২ টা থেকে শুরু হয়ে ১০ জানুয়ারী ২০২৫, সকাল ১০:১৯ টায় শেষ হবে।
পুত্রদা একাদশী হিন্দু ধর্মে একটি অত্যন্ত বিশেষ ব্রত, যা সন্তান লাভ এবং সন্তানের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য পালন করা হয়। এই ব্রত কেবলমাত্র ধর্মীয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অনেক পরিবারের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এবং আনন্দ এনে দেয় বলে মনে করা হয়। পৌষ মাসে আগমনকারী পুত্রদা একাদশী ২০২৫ সালের প্রথম একাদশী এবং এর ব্রত পালন করলে সারা বছর শুভ ফল লাভের বিশ্বাস রয়েছে।
২০২৫ সালে পুত্রদা একাদশী কবে?
* ২০২৫ সালে পুত্রদা একাদশী ১০ জানুয়ারী পালিত হবে।
* একাদশী তিথি আরম্ভ: ৯ জানুয়ারী ২০২৫, দুপুর ১২:২২ টা।
* একাদশী তিথি সমাপ্তি: ১০ জানুয়ারী ২০২৫, সকাল ১০:১৯ টা।
* ব্রত পারণ (ব্রত ভাঙার সময়): ১১ জানুয়ারী ২০২৫, সকাল ৭:১৫ টা থেকে ৮:২১ টার মধ্যে।
পুত্রদা একাদশী ব্রতের বিধি
* স্নান এবং সংকল্প: ব্রত পালনকারী ব্যক্তিকে প্রাতঃকালে স্নান করে ব্রতের সংকল্প করতে হবে।
* ভগবান বিষ্ণুর পূজা: ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমাকে গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করিয়ে হলুদ বসন পরিধান করাতে হবে।
* পূজন সামগ্রী: তুলসী পাতা, ফল, ফুল, দীপ, ধূপ, চন্দন এবং পঞ্চামৃত দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করতে হবে।
* পুত্রদা একাদশী কথা: ব্রতের দিন পুত্রদা একাদশীর কথা শোনা এবং শোনানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
* ভজন-কীর্তন: ভগবান বিষ্ণুর ভজন এবং মন্ত্র জপ করতে হবে।
* ভোজন: ব্রতধারীকে অন্ন গ্রহণ করা উচিত নয়। ফলাহার এবং জল গ্রহণ করতে পারেন।
পুত্রদা একাদশী ব্রতের গুরুত্ব
* এই ব্রত সেই দম্পতিদের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়, যারা সন্তান লাভের ইচ্ছা পোষণ করেন।
* ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই ব্রত পালন করলে ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হন এবং সন্তান সংক্রান্ত সকল কষ্ট দূর হয়।
* এই দিন ব্রত পালন করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি, সন্তানের স্বাস্থ্য এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়।
* যারা সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত, তারা এই দিন বিশেষ করে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করেন।
পুত্রদা একাদশীর পৌরাণিক কথা
প্রাচীন কালে মহিষমতি নগরের রাজা সুকৈটুমান এবং তাঁর রাণী শৈব্যা অত্যন্ত ধার্মিক এবং পুণ্যাত্মা ছিলেন। যদিও তারা সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, যা তাঁদের জীবনে প্রচুর দুঃখ এবং চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারা উভয়েই এই দুঃখ দূর করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু কোনো উপায় কাজ করছিল না।
একদিন রাজা এবং রাণী ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে শুনলেন যে পুত্রদা একাদশীর ব্রত সন্তান লাভের জন্য অত্যন্ত শুভ এবং ফলপ্রসূ। রাজা সুকৈটুমান এই ব্রত পালন করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং রাণী শৈব্যাকেও এর বিষয়ে জানালেন। রাজা সন্তান সুখ লাভের জন্য কঠোর তপস্যা এবং ব্রত পালন করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
রাজা পুত্রদা একাদশীর দিন ব্রত পালন করলেন, পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং ভক্তি সহকারে ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলেন। তিনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে সন্তান সুখের প্রার্থনা করলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে এই ব্রত পালন করলে তাঁর জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধি ফিরে আসবে। রাজার তপস্যা এবং ভক্তিতে প্রসন্ন হয়ে ভগবান বিষ্ণু তাঁর কাছে এসে আশীর্বাদ করলেন যে তিনি শীঘ্রই সন্তান সুখ লাভ করবেন। ভগবান বিষ্ণু রাজাকে বললেন যে এই একাদশীর ব্রত পালন করলে তাঁর সকল দুঃখ দূর হবে এবং তিনি একটি সুন্দর সন্তান লাভ করবেন।
ভগবান বিষ্ণুর আশীর্বাদে রাজা এবং রাণীর জীবনে আনন্দ এসে গেল। রাণী শৈব্যা একটি সুন্দর পুত্রের জন্ম দিলেন। রাজা এবং রাণী ভগবান বিষ্ণুর ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন এবং তাঁদের আশীর্বাদে জীবনে সুখ এবং সমৃদ্ধির অভিজ্ঞতা লাভ করলেন।