হিন্দু ধর্মে জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার তিথিকে অত্যন্ত পবিত্র ও ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। এই তিথি আধ্যাত্মিক উন্নতি, মানসিক শুদ্ধি এবং সাংসারিক সাফল্য লাভের বিশেষ সুযোগ প্রদান করে। ২০২৫ সালে এই তিথি ১১ জুন, মঙ্গলবার। এই তিথি ভগবান বিষ্ণু, দেবী লক্ষ্মী এবং চন্দ্রদেবের বিশেষ কৃপা লাভের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করা হয়।
এই দিন চন্দ্রমা তার পূর্ণ ষোলো কলায় সুশোভিত হয়, যার ফলে এর প্রভাব আমাদের মন, মস্তিষ্ক এবং ভাগ্যের উপর সরাসরি পড়ে। তাই এই রাতে বিশেষ উপায় করা জীবনে থেমে থাকা কাজগুলিকে গতি দেওয়ার, কর্মজীবনে উন্নতি এবং পারিবারিক সুখ লাভ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
১. চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য দেওয়া – মন ও কর্মজীবনে ভারসাম্য
জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রমা পূর্ণরূপে থাকে, যাকে পূর্ণ চন্দ্র বলা হয়। এই দিন চন্দ্রমাকে জল ও দুধ মিশিয়ে অর্ঘ্য দেওয়া শুভ বলে মনে করা হয়।
কীভাবে উপায় করবেন: একটি তামা বা রূপার পাত্রে জল, কয়েক ফোঁটা দুধ, কয়েকটি চালের দানা এবং সাদা ফুল রাখুন। রাতে চন্দ্রমাকে দেখে অর্ঘ্য দিন এবং সাথে 'ॐ চন্দ্রায় নমঃ' মন্ত্রের ১০৮ বার জপ করুন।
লাভ: মানসিক শান্তি লাভ হয়, কর্মজীবনে অযথা চাপ কমে এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
২. দেবী লক্ষ্মীর বিশেষ আরাধনা – ধন-ধান্যের প্রাপ্তির উত্তম যোগ
পূর্ণিমার রাতে মা লক্ষ্মীর পূজা করলে ঘরে দারিদ্র্য দূর হয় এবং সমৃদ্ধি আসে।
পূজাবিধি: ঘরের ঈশান কোণে (উত্তর-পূর্ব দিকে) লাল কাপড় বিছিয়ে মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করুন। তাকে কমলগট্টা, অক্ষত, রোলী, চাল এবং সাদা মিষ্টান্ন অর্পণ করুন।
মন্ত্র জপ: 'শ্রীং হ্রীং ক্লীং ऐং কমলবাসিন্যৈ নমঃ' মন্ত্রের ১০৮ বার জপ করুন।
লাভ: মা লক্ষ্মীর বিশেষ কৃপায় ঘরে টাকার স্থায়িত্ব এবং আয় বৃদ্ধির যোগ হয়।
৩. তুলসী পূজন – ঘরের নেতিবাচক শক্তি দূর হবে
ভগবান বিষ্ণুকে তুলসী অতি প্রিয়। তুলসী পূজন করলে ঘরে ইতিবাচক শক্তি বজায় থাকে।
কীভাবে উপায় করবেন: তুলসী গাছের পাশে ঘি-র প্রদীপ জ্বালান এবং ১১ বা ২১ বার তুলসীর প্রদক্ষিণ করুন।
মন্ত্র: 'ॐ নমো ভগবতে বাসুদেবায়' জপ করুন।
লাভ: ঘরে সুখ-শান্তি বজায় থাকে, পারিবারিক সম্পর্কে মধুরতা আসে এবং কলহ দূর হয়।
৪. পিপুল বৃক্ষের পূজা – গ্রহ দোষ ও পিতৃ দোষ শান্ত হবে
পিপুল বৃক্ষে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ তিন দেবতার বাস বলে মনে করা হয়।
বিধি: রাত্রে পিপুল বৃক্ষে জল অর্পণ করুন এবং একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রণাম করুন।
লাভ: পিতৃ দোষ, শনি দোষ এবং অন্যান্য গ্রহ বাধা থেকে মুক্তি মেলে। কর্মের বোঝা কমে।
৫. দানের গুরুত্ব – পুণ্য ও সৌভাগ্যের সংযোগ
জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় দান করা সবচেয়ে পুণ্যকর কাজগুলির মধ্যে একটি বলে মনে করা হয়।
কী করবেন: রাতে সংকল্প করে পরের দিন সকালে অন্ন, বস্ত্র, ঘি, ধন বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দরিদ্রদের দান করুন।
লাভ: পুণ্য লাভ হয়, জীবনে দুর্ভাগ্য দূর হয় এবং অর্থনৈতিক অবস্থায় স্থায়িত্ব আসে।
জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার রাত আত্মউন্নয়ন এবং ঈশ্বর-সংযোগের উত্তম সুযোগ নিয়ে আসে। যদি এই রাতে ভক্তি ও নিয়মিতভাবে চন্দ্রমাকে অর্ঘ্য, দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা, তুলসী ও পিপুলের পূজা এবং সত্যনারায়ণ কথার মতো উপায় করা হয়, তবে জীবনের অনেক কষ্ট দূর করা সম্ভব।