ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানী বিমানের জন্য বন্ধ করা আকাশসীমা সম্পর্কে একটি বড় আপডেট প্রকাশিত হয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তানকে আরেকটি বড় কূটনৈতিক ধাক্কা দিয়েছে। ভারত পাকিস্তানী বিমান সংস্থা এবং অপারেটরদের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ রাখার মেয়াদ আরও এক মাসের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন এই নিষেধাজ্ঞা ২৪ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এমন সময়ে যখন দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমাগত উত্তপ্ত রয়েছে এবং পালঘামে হওয়া সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞাও তারই অংশ।
সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ভারতের কঠোর অবস্থান
২২ এপ্রিল ২০২৫-এ জম্মু ও কাশ্মীরের পালঘামে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। এই হামলার পর ভারত সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারী কোনও দেশকে ছাড় দেওয়া হবে না। এই নীতি অনুসরণ করে ৩০ এপ্রিল থেকে ভারত পাকিস্তানের বিমান সংস্থা এবং অপারেটরদের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী ছিল এবং ২৪ মে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের অবস্থান বিবেচনা করে এটি ২৪ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন সরকার আবারও এটিকে বাড়িয়ে ২৪ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নতুন NOTAM কি?
ভারতীয় নাগরিক বিমান চলাচল মহানির্দেশালয় (DGCA) সোমবার একটি নতুন NOTAM (Notice to Airmen) জারি করেছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়েছে যে পাকিস্তানে নিবন্ধিত বিমান, পাকিস্তানী বিমান সংস্থা এবং অপারেটরদের পরিচালিত বিমান, তাদের মালিকানাধীন বা লিজকৃত বিমান, এমনকি সামরিক ফ্লাইটগুলিও ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারবে না।
এই নিষেধাজ্ঞা সমগ্র ভারতীয় আকাশসীমায় প্রযোজ্য হবে, যার ফলে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক এবং সামরিক বিমান চলাচল কার্যকলাপে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।
পাকিস্তানের ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’, ভারতের সিদ্ধান্তের অনুকরণ
ভারতের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে পাকিস্তানও ভারতীয় বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ রাখার সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান ২৪ এপ্রিল ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল, যার মেয়াদ ২৪ মে পর্যন্ত ছিল। পরে ভারতের মতোই এটি মাসে মাসে বাড়ানো হয়েছে এবং এখন এটি ২৪ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের এই পদক্ষেপ কেবল ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি ভারতের সিদ্ধান্তের অনুকরণ ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তানের উড়ানের সংখ্যা বেশি এবং এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানের বিমান শিল্পে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
আকাশসীমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশের আকাশসীমার পারস্পরিক নির্ভরতার কারণে, এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘদিন ধরে থাকলে আঞ্চলিক বিমান চলাচল নেটওয়ার্কে প্রভাব পড়ে। যদিও ভারতের জন্য এই প্রভাব সীমিত কারণ ভারতের আকাশসীমা এবং দেশীয় বিমান চলাচল নেটওয়ার্ক বড়। অন্যদিকে পাকিস্তানের বিমান সংস্থাগুলিকে বিকল্প রুট থেকে উড়ান পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত জ্বালানী খরচ, সময় এবং ব্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়।
এছাড়াও:
- ফ্লাইট সময় বৃদ্ধি: পাকিস্তানী বিমানগুলিকে দীর্ঘ রুট বেছে নিতে হয়, যার ফলে উড়ানের সময় এবং জ্বালানী খরচ উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
- লজিস্টিক খরচ বৃদ্ধি: বিমান সংস্থাগুলির পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পায় যার ফলে তাদের ক্ষতি হতে পারে।
- সামরিক চলাচলে প্রভাব: কৌশলগত দিক থেকে বিমানবাহিনীর চলাচলে প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায়।
ভারতের বড় কূটনৈতিক বার্তা
আকাশসীমা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র একটি প্রযুক্তিগত পদক্ষেপ নয়, এটি একটি বড় কূটনৈতিক বার্তাও। এটি দেখায় যে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার নীতিতে অটল এবং সীমান্ত পেরিয়ে হওয়া হামলা কোনওভাবেই সহ্য করবে না। পাশাপাশি, এটি পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরিরও একটি উপায় যাতে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
সিন্ধু জল চুক্তি এবং বাণিজ্যেও কঠোরতা
ভারত সন্ত্রাসবাদী হামলার পর শুধুমাত্র আকাশসীমা নয়, সিন্ধু জল চুক্তি নিয়েও পুনর্বিবেচনা করেছে। এছাড়াও, বাণিজ্যিক লেনদেন এবং ভিসা নীতিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। অর্থাৎ, ভারত স্পষ্ট সংকেত দিয়েছে যে এখন আর কোনও নমনীয়তা দেখানো হবে না।
আগামী কি?
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে আগামী সময়ে আরও উত্তেজনা দেখা যেতে পারে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। যদিও যুদ্ধের বিকল্প যেকোনো দেশের জন্যই শেষ উপায়, তবে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য ভারত এই ধরণের পদক্ষেপ নিতে থাকবে।