ট্রাম্পের ঘোষণা: ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি, তেলের দামে ঝাঁকুনি

ট্রাম্পের ঘোষণা: ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি, তেলের দামে ঝাঁকুনি
সর্বশেষ আপডেট: 7 ঘণ্টা আগে

আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার এক বড় ঘোষণা করে জানিয়েছেন যে ইসরাইল এবং ইরান এখন সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হয়েছে। এই ঘোষণার সরাসরি প্রভাব আন্তর্জাতিক শক্তি বাজারে দেখা গেছে। বিশেষ করে কच्चा তেলের (ক্রুড অয়েল) দামে তীব্র হ্রাস পেয়েছে।

সোমবারের দিন বিশ্বজুড়ে বাজারগুলির জন্য একটি বড় খবর নিয়ে এসেছে যখন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে ইরান এবং ইসরাইল যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হয়েছে। ১২ দিন ধরে চলা এই সামরিক সংঘর্ষের পর এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা, যা কেবলমাত্র পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা কমিয়েছে তাই নয়, বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

এই শান্তি চুক্তির সবচেয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কच्चा তেলের (ক্রুড অয়েল) দামে দেখা গেছে। যেখানে সোমবারই তেল ৯ শতাংশ সস্তা হয়েছিল, সেখানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে এতে আরও ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৫.৭৫ ডলার প্রতি ব্যারেল পর্যন্ত নেমে এসেছে।

ট্রাম্পের বড় ঘোষণা, ২৪ ঘন্টার মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ হবে যুদ্ধ

ওয়াইট হাউস থেকে জারি একটি বিবৃতিতে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে ইরান এবং ইসরাইল একটি সম্পূর্ণ ও বিস্তৃত যুদ্ধবিরতির জন্য সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন যে যদি উভয় পক্ষ ২৪ ঘন্টা শান্তি বজায় রাখে, তবে এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে গণ্য হবে।

এই ঘোষণা বৈশ্বিক মঞ্চে আমেরিকার কূটনৈতিক সাফল্য হিসাবে দেখা হচ্ছে। বিগত ১২ দিন ধরে চলা এই সংঘর্ষের কারণে বৈশ্বিক বাজারে, বিশেষ করে শক্তি বাজারে প্রচণ্ড অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। এখন যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত হওয়ার পরে, বাণিজ্যিক কার্যকলাপে স্থিরতা ফিরে আসার আশা করা হচ্ছে।

তেল বাজারে তোলপাড়, এখন সরবরাহ বাধার আশঙ্কা দূর

ইরান, যা ওপেক (OPEC) এর তৃতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদক দেশ, যুদ্ধের সময় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা সামরিক আক্রমণের আশঙ্কা ছিল। এর ফলে তেলের দামে হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরে, বাজার আশ্বস্ত যে ইরান তার তেল উৎপাদন এবং রপ্তানি স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবে।

আইজি ফার্মের বিশ্লেষক টনি সাইকেমোর বলেছেন, "যুদ্ধবিরতির খবরে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে কच्चा তেলের দামে যা ঝুঁকি প্রিমিয়াম যুক্ত ছিল, তা প্রায় সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে।"

শেয়ার বাজারে উত্থান, ডলারে দুর্বলতা

যুদ্ধবিরতির ঘোষণার ইতিবাচক প্রভাব বৈশ্বিক শেয়ার বাজারেও দেখা গেছে। আমেরিকার প্রধান শেয়ার সূচক S&P 500-এ 0.3 শতাংশ এবং নাসড্যাকে 0.5 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, জাপানের নিক্কেই সূচক 38,905-এ পৌঁছেছে, যা গত দিনের 38,354 থেকে অনেক বেশি।

অন্যদিকে, ডলার সূচকে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। জাপানি ইয়েনের তুলনায় ডলার 0.1 শতাংশ কমে 145.92 ইয়েনে নেমে এসেছে, যখন ইউরো 0.1 শতাংশ বেড়ে 1.1589 ডলারে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দুর্বলতার একটি বড় কারণ হলো সংকট কেটে যাওয়ার পরে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বিনিয়োগের প্রবণতা ফিরে আসছে।

ইউরোপ এবং জাপানের স্বস্তি

কच्चा তেলের দামে হ্রাসের সবচেয়ে বড় লাভ পাবে সেসব দেশ যারা তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল, যেমন জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই অঞ্চলে উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপান এবং ইউরোপ উভয়ই অর্থনৈতিকভাবে উচ্চ আমদানি বিলের সাথে লড়াই করছিল। এখন তেলের দাম কমে যাওয়ায় তাদের অর্থনীতিতে স্বস্তি আসার আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমেরিকা, যা এখন একটি প্রধান তেল রপ্তানিকারক দেশ হয়ে উঠেছে, কম দামের ফলে কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

ভারতের উপরও প্রভাব নিশ্চিত

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। এইভাবে কच्चा তেলের দাম কমে যাওয়ার সরাসরি লাভ ভারতীয় অর্থনীতিতে পেতে পারে। পেট্রোল-ডিজেলের দাম স্থিতিশীল হলে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে এবং চলতি হিসাব ঘাটতির উন্নতির সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

সরকারকে রাজস্ব ঘাটতি কমানো এবং টাকার উপর চাপ কমাতেও সাহায্য করবে। এছাড়াও, বিমান ভাড়া এবং লজিস্টিকস খরচেও স্বস্তি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে, যার ফলে সাধারণ মানুষও স্বস্তি পাবে।

আগামীতেও কি শান্তির পরিবেশ বজায় থাকবে?

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এই প্রশ্ন তুলে ধরেছেন যে এটি কি স্থায়ী সমাধান হবে নাকি কেবলমাত্র অস্থায়ী বিরতি? পশ্চিম এশিয়ায় এর আগেও অনেকবার যুদ্ধবিরতি হয়েছে যা কিছুদিন পরে ভেঙে গেছে। তবে এবার আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন এর মতো বড় দেশগুলির কূটনৈতিক সক্রিয়তা দেখে আশা করা হচ্ছে যে এই শান্তি দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকতে পারে।

```

Leave a comment