এয়ারটেলের শেয়ারের উল্লম্ফন: এয়ারটেলের শেয়ার ২% বৃদ্ধি পেয়ে ₹২,০০৯.৮০-এর স্তরে পৌঁছেছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই শেয়ারটি অসাধারণ পারফর্ম করেছে।
Airtel Share: ভারতীয় এয়ারটেলের শেয়ারগুলি বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজারে দুর্দান্ত পারফর্ম করে নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। কোম্পানির স্টক প্রথমবারের মতো ₹২০০০ অতিক্রম করেছে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য আয়ের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই বছর এয়ারটেলের শেয়ার প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিএসই সেনসেক্সের গড় ৬ শতাংশ রিটার্নের থেকে চার গুণ বেশি।
শেয়ারে জোরালো উত্থান
বিএসই-তে এয়ারটেলের শেয়ার বৃহস্পতিবার ₹২,০০৯.৮০-এ পৌঁছেছে, যা এখন পর্যন্ত এর সর্বোচ্চ স্তর। এছাড়াও, কোম্পানির আংশিক পরিশোধিত শেয়ারগুলিও ₹১,৫৩২.৯০ পর্যন্ত বেড়েছে। এই বছর এই শেয়ারগুলিতেও প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে। এই স্থিতিশীলতার কারণে, কোম্পানির বাজার মূলধন প্রথমবার ₹১২ ট্রিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
এয়ারটেল ১২ লক্ষ কোটি টাকার বাজার মূলধন ছুঁয়েছে
ভারতীয় এয়ারটেল এখন দেশের সেই কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে একটি, যাদের বাজার মূলধন ₹১২ লক্ষ কোটির বেশি। এই ক্লাবে ইতিমধ্যে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ, এইচডিএফসি ব্যাংক এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেসের মতো दिग्गज কোম্পানিগুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রিলায়েন্স ₹১৯.৯৬ ট্রিলিয়ন বাজার মূলধন নিয়ে শীর্ষে রয়েছে, এইচডিএফসি ব্যাংক ₹১৫.২৬ ট্রিলিয়নে এবং টিসিএস ₹১২.৪৬ ট্রিলিয়ন বাজার মূল্যে রয়েছে। এয়ারটেল চতুর্থ স্থানে পৌঁছে একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে।
5G-তে বদলেছে খেলার চিত্র
বিশেষজ্ঞদের মতে, এয়ারটেলের এই দৃঢ়তা কেবল শেয়ার বাজারের গতি নয়, বরং এর পেছনে কোম্পানির কৌশল এবং দূরদর্শী বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এয়ারটেল সময় মতো 5G নেটওয়ার্কে বিশাল বিনিয়োগ করেছে এবং আজ তার সুবিধা পাচ্ছে। দেশে 5G ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের শেষ নাগাদ ভারতে প্রায় ২৯ কোটি মোবাইল ব্যবহারকারী 5G নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়েছিল।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ
টেলিকম সেক্টরে প্রতি ব্যবহারকারীর গড় রাজস্ব (ARPU) এর পরিসংখ্যানও এয়ারটেলের পক্ষে দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৩ থেকে ৫ বছরে ARPU প্রতি বছর প্রায় ১২ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। এটি কোম্পানিগুলির আয় বৃদ্ধি করবে এবং লাভও বাড়বে। বিনিয়োগকারীরা এই ক্রমবর্ধমান লাভের প্রত্যাশা করছেন, যা শেয়ারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
২০৩০ সাল পর্যন্ত 5G ব্যবহারকারী ৯৮ কোটির সংখ্যা ছুঁতে পারে
বিশ্লেষকদের অনুমান, ২০৩০ সাল পর্যন্ত ভারতে 5G ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৮ কোটিতে পৌঁছতে পারে। এর অর্থ হল, দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মোবাইল ব্যবহারকারী 5G নেটওয়ার্কে থাকবেন। এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সরাসরি প্রভাব পড়বে টেলিকম কোম্পানিগুলির আয়ের উপর, বিশেষ করে সেই কোম্পানিগুলির উপর যারা ইতিমধ্যে এই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। এয়ারটেল এই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
ট্যারিফে বৃদ্ধির প্রস্তুতি
টেলিকম সেক্টরের জন্য আরেকটি ভালো খবর হল যে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে ট্যারিফে প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি হতে পারে। ট্যারিফ বাড়লে কোম্পানিগুলির আয় সরাসরি বৃদ্ধি পাবে। এ পর্যন্ত এয়ারটেলের কৌশল ছিল প্রিমিয়াম পরিষেবা প্রদান করা এবং সেই অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করা। এমন পরিস্থিতিতে, ট্যারিফ বাড়লে তার বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, বরং সুবিধা হবে।
গ্রাহক সংখ্যায় ক্রমাগত বৃদ্ধি
এয়ারটেলের 5G নেটওয়ার্কের বিস্তার এখন দেশের অনেক বড় শহরে পৌঁছেছে এবং গ্রামীণ এলাকাতেও কোম্পানি দ্রুত নেটওয়ার্ক প্রসারিত করেছে। গ্রাহক সংখ্যায় ক্রমাগত বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। TRAI-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, এয়ারটেল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী হিসাবে রয়েছে এবং তার বাজার হিস্যাও ক্রমাগত বাড়ছে।
ব্যবসা মডেলে উন্নতি দেখা যাচ্ছে
এয়ারটেল গত কয়েক বছরে কেবল তার নেটওয়ার্কেই বিশাল বিনিয়োগ করেনি, বরং তার ব্যবসা মডেলও পরিবর্তন করেছে। ডিজিটাল পরিষেবা, ফাইবার-টু-হোম সংযোগ, এয়ারটেল পেমেন্টস ব্যাংক এবং ডেটা সেন্টারের মতো নতুন খাতে প্রবেশ করে কোম্পানি তার রাজস্বের উৎসকে বৈচিত্র্যময় করেছে। এর ফলে অন্যান্য ক্ষেত্র থেকেও তার আয় হচ্ছে এবং শেয়ার বাজারে একটি নির্ভরযোগ্য কোম্পানি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।