আপনাদের ব্যবসা থাকলে বা শুরু করার পরিকল্পনা থাকলে, এই খবরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নিয়ম-কানুন-এ একটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
ব্যবসা জগতের জন্য জিএসটি (GST) সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর এসেছে। অর্থ মন্ত্রক একটি নতুন সার্কুলার জারি করেছে, যেখানে কারণ দর্শানোর নোটিশ (Show-cause notice) সংক্রান্ত মামলার সমাধানের জন্য একটি নতুন ব্যবস্থা (mechanism) চালু করা হয়েছে। এই ব্যবস্থাটি পণ্য ও পরিষেবা কর (Goods and Services Tax - GST) আইনের ধারা ১০৭ এবং ১০৮-এর অধীনে আনা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল আপিল এবং পর্যালোচনার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, সুসংগঠিত এবং সময়ানুবর্তী করা।
গত কয়েক বছরে জিএসটি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, অর্থাৎ ডিজিজিআই (DGGI) বেশ কয়েকটি সেক্টরে প্রচুর সংখ্যক নোটিশ জারি করেছিল। এর মধ্যে মূলত ব্যাংকিং, বীমা, ই-কমার্স, এফএমসিজি (FMCG) এবং রিয়েল এস্টেট সেক্টর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই সমস্ত ক্ষেত্রে ট্যাক্স ক্লাসিফিকেশন, ইনভয়েসিংয়ে (invoicing) ত্রুটি এবং জাল ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (আইটিসি) (ITC) দাবি করার অভিযোগ ছিল।
কেন্দ্রের বড় পদক্ষেপ, করদাতাদের স্বস্তি
নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে সরকার এই বিতর্কগুলির সমাধানের জন্য একটি স্পষ্ট এবং আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে। এখন করদাতারা কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার পর আপিল এবং পর্যালোচনার জন্য নির্ধারিত কাঠামো অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন।
সিজিএসটি (CGST) আইনের ধারা ১০৭-এর অধীনে, এখন আপিল করার ফরম্যাট এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, ধারা ১০৮-এর অধীনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা, পর্যালোচনার প্রক্রিয়া এবং সময়সীমাও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে, এখন কোনও মামলা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে না।
এই সার্কুলারটি সারা দেশের সমস্ত সিনিয়র কেন্দ্র ও রাজ্য জিএসটি কর্মকর্তাদের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কার্যকর করা হয়েছে, যাতে কোনো ধরনের ভিন্নতা বা বিভ্রান্তির অবকাশ না থাকে।
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়া এখন সহজ হবে
এখন শিল্পের কাছে নোটিশের জবাব দেওয়ার এবং তা নিষ্পত্তির জন্য একটি আনুষ্ঠানিক উপায় থাকবে। আগে জিএসটি নোটিশ পাওয়ার পরে করদাতারা বুঝতে পারতেন না কীভাবে জবাব দিতে হবে এবং এর জন্য কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এই কারণে অনেক ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।
নতুন ব্যবস্থার অধীনে, নোটিশ পাওয়ার পরে আপিল এবং পর্যালোচনার জন্য আলাদা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং প্রতিটি পর্যায়ে কর্মকর্তাদের দায়িত্বও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর ফলে, বিতর্কগুলির সমাধান সময়মতো হবে এবং ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
বাকি থাকা মামলার সংখ্যা কমবে
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে তারা ট্যাক্স সংক্রান্ত মামলাগুলির সংখ্যা কমাতে চায়। এই নীতির অধীনে, এখন বিতর্ক সমাধান ব্যবস্থা কার্যকর করা হচ্ছে।
ডিজিজিআই-এর (DGGI) দ্বারা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে হাজার হাজার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নোটিশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং অনেক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। নতুন সার্কুলার আসার ফলে আশা করা হচ্ছে যে, এটি কেবল করদাতাদের স্বস্তি দেবে তাই নয়, বরং আইনি মামলার বোঝা হ্রাস করবে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে
সরকারের দাবি, এই নতুন ব্যবস্থা জিএসটি প্রশাসনে স্বচ্ছতা বাড়াবে। এখন করদাতারা জানতে পারবেন তাদের মামলা কোন পর্যায়ে আছে এবং কোন অফিসারের কাছে আছে। সেই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করা হবে যে মামলাটি কত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, এখন আপিল অফিসার এবং রিভিউ অথরিটিকে (Review Authority) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করতে হবে। এই নিয়ম সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও প্রযোজ্য হবে।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের দিকে পদক্ষেপ
অর্থ মন্ত্রকের এই পদক্ষেপকে শিল্প জগৎ স্বাগত জানিয়েছে। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলির মতে, এর ফলে জিএসটি ব্যবস্থা আরও বেশি ব্যবহারিক এবং ব্যবসার অনুকূল হবে।
সরকারের এই উদ্যোগ স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে তারা এখন ট্যাক্স আদায়ের চেয়ে করদাতাদের সঙ্গে সহযোগিতা সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিতে চায়। এই দিকে, সরকার আগেও বেশ কয়েকবার কমপ্লায়েন্স সহজ করার জন্য পরিবর্তন এনেছে, যেমন কম্পোজিশন স্কিমের পরিধি বাড়ানো, জিএসটি রিটার্নের সংখ্যা কমানো এবং ছোট করদাতাদের জন্য ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার (Facilitation Centers) শুরু করা।