১২ জুন তারিখে সংঘটিত ভয়াবহ এয়ার ইন্ডিয়া বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে এবার বড় অগ্রগতি হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি বিমানের ব্ল্যাক বক্স, অর্থাৎ ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর) খুঁজে পেয়েছে এবং সেগুলির ডেটা সফলভাবে ডাউনলোড করা হয়েছে। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে, দুর্ঘটনার আসল কারণগুলি জানার আশা আরও বেড়েছে।
সরকার বৃহস্পতিবার জানিয়েছে যে ব্ল্যাক বক্সগুলি আহমেদাবাদ থেকে দিল্লিতে আনা হয়েছিল এবং ২৪ জুন সেগুলির ডেটা সফলভাবে উদ্ধার করা হয়েছে। বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (এএআইবি) এটি নিশ্চিত করেছে এবং জানিয়েছে যে তদন্ত এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে।
দুর্ঘটনার পর প্রথমবার মিলল সুস্পষ্ট কারিগরি তথ্য
এয়ার ইন্ডিয়ার এই ফ্লাইটটি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডন যাচ্ছিল। ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানটি একটি ছাত্রাবাসের (হোস্টেল) সঙ্গে ধাক্কা খায়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ২৭০ জন নিহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় কেবল একজন যাত্রী জীবিত ছিলেন।
দুর্ঘটনার পরপরই ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার খোঁজা শুরু হয়েছিল। ১৩ জুন ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়, যেটি একটি ভবনের ছাদে পড়ে ছিল। অন্য রেকর্ডারটি ধ্বংসস্তূপের নিচে পাওয়া গিয়েছিল। উভয় ডিভাইস নিরাপদে বের করার পরে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে সেগুলি দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল।
ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে মিলবে দুর্ঘটনার আসল কারণ
বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক জানিয়েছে যে ২৫ জুন এই দুটি রেকর্ডারের মেমরি মডিউল থেকে ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ককপিটের কথোপকথন, ইঞ্জিনের অবস্থা, উচ্চতা, গতি, রাডার নির্দেশ এবং অন্যান্য কারিগরি তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সমস্ত ডেটা দুর্ঘটনার আগের ঘটনার শৃঙ্খলা বুঝতে অত্যন্ত সহায়ক হবে।
মন্ত্রক আরও স্পষ্ট করেছে যে তদন্ত ভারতেই চলছে এবং ব্ল্যাক বক্স বিদেশে পাঠানোর যে গুজব উঠেছিল, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী কে রামমোহন নায়ডু বলেছেন, এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) কাছে ব্ল্যাক বক্স সুরক্ষিত আছে এবং ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে তদন্ত চলছে।
এএআইবি-র দল গভীর তদন্ত করছে
এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার তদন্তকারী এএআইবি-র বিশেষজ্ঞ দল ব্ল্যাক বক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্যের গভীর বিশ্লেষণ শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে উড়ানের প্রথম মুহূর্তেই কোনও গুরুতর কারিগরি সমস্যা দেখা দিয়েছিল, যার কারণে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা যাবে পাইলট ও কো-পাইলটের মধ্যে কী ধরনের কথোপকথন হয়েছিল এবং তাঁরা কী ধরনের কারিগরি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন। অন্যদিকে, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে বিমানের গতি, উচ্চতা, পিচ, ইয়ো, রোল-এর মতো তথ্য পাওয়া যাবে, যা দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে সহায়ক হবে।
দুর্ঘটনাটি বেশ কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে
এই দুর্ঘটনা দেশের বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বেশ কয়েকটি গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। বিমানের ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই ধরনের ঘটনা ঘটা, কারিগরি ত্রুটি থেকে শুরু করে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল এবং রানওয়ে ব্যবস্থাপনার মতো সব দিক গভীর ভাবে পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
ঘটনার সময় উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন যে বিমানটি হঠাৎ নিচের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং একটি ছাত্রাবাসের (হোস্টেল) সঙ্গে ধাক্কা খায়। ধাক্কা এতটাই শক্তিশালী ছিল যে চার তলা ভবনটি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং আশেপাশের রাস্তাগুলিতেও ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
দুর্গত পরিবারগুলির জন্য ত্রাণ প্যাকেজ
সরকার দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এয়ার ইন্ডিয়াও জানিয়েছে যে তারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির পাশে সর্বাত্মক সহায়তার জন্য প্রস্তুত। যদিও, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এখন ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছে এবং দুর্ঘটনার আসল কারণগুলি প্রকাশ্যে আনার আবেদন জানাচ্ছে।
ব্ল্যাক বক্স কীভাবে কাজ করে
ব্ল্যাক বক্স মূলত দুটি অংশে গঠিত, একটি হল ককপিট ভয়েস রেকর্ডার এবং অন্যটি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার। এই ডিভাইসটি বিমানের পেছনের অংশে স্থাপন করা হয়, যেখানে দুর্ঘটনার সময় এর সুরক্ষিত থাকার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি উড্ডয়নের সময় প্রতি সেকেন্ডের কার্যকলাপ রেকর্ড করে।
এতে হাজারো প্যারামিটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যেমন ইঞ্জিনের গতি, উচ্চতা, দিক, পাইলটের নির্দেশ এবং ককপিটে বিদ্যমান সমস্ত শব্দ। ব্ল্যাক বক্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকেই জানা যায় যে দুর্ঘটনার সময় পাইলট কী করছিলেন এবং বিমানে কী কারিগরি অবস্থা ছিল।