২০২৫ সালের এসসিও সম্মেলনে ভারতের পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

২০২৫ সালের এসসিও সম্মেলনে ভারতের পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি
সর্বশেষ আপডেট: 12 ঘণ্টা আগে

২০২৫ সালের SCO সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনেন এবং চীনের চক্রান্তের জবাব দেন। ভারত যৌথ নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে পাকিস্তান-চীনকে ধাক্কা দেয়।

SCO Summit 2025: শ্যাঙ্ঘাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO)-এর বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে পাকিস্তানকে একহাত নেন এবং ভারতের অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেন। এই সময় তিনি পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ, পহেলগাঁও-এর জঙ্গি হামলা এবং অপারেশন সিন্ধুর কথা উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানের মুখোশ উন্মোচন করেন। এছাড়াও, চীন ও পাকিস্তানের চক্রান্ত নজরে রেখে তিনি SCO-এর যৌথ নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন।

SCO মঞ্চ থেকে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা

রাজনাথ সিং SCO-এর বৈঠকে বলেন, সন্ত্রাসবাদ এখনও বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের এবং তাদের সমর্থনকারীদের জবাবদিহি করা সময়ের দাবি। তিনি দ্বৈত নীতির সমালোচনা করে বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব দেশকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং এতে কোনো প্রকার নমনীয়তা বা রাজনৈতিক স্বার্থ থাকা উচিত নয়।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই ইস্যু উত্থাপন

বৈঠকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফও উপস্থিত ছিলেন। রাজনাথ সিং, পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করে, পহেলগাঁও হামলা এবং অপারেশন সিন্ধুর কথা উল্লেখ করেন, যেখানে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গিদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছিল। তিনি পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে উন্মোচন করে বলেন, যারা সন্ত্রাসকে সমর্থন করে, তাদের আন্তর্জাতিক সমাজে স্থান দেওয়া উচিত নয়।

SCO-এর যৌথ নথিতে ভারতের আপত্তি

ভারত SCO-এর যৌথ নথিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করে। এর কারণ ছিল চীন ও পাকিস্তান এই নথির মাধ্যমে ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছিল। ভারতের মতে, কোনো বহুপাক্ষিক মঞ্চকে দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। রাজনাথ সিং-এর এই পদক্ষেপ ভারতের বৈদেশিক নীতিতে আত্মবিশ্বাস এবং কৌশলগত স্বচ্ছতা প্রতিফলিত করে।

শ্যাঙ্ঘাই সহযোগিতা সংস্থা (SCO) কী?

শ্যাঙ্ঘাই সহযোগিতা সংস্থা অর্থাৎ SCO একটি ইউরেশীয় রাজনৈতিক, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সংগঠন। এটি ২০০১ সালে চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান দ্বারা গঠিত হয়। শুরুতে এর নাম ছিল 'শ্যাঙ্ঘাই ফাইভ', যা ১৯৯৬ সালে আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। পরে এই সংগঠনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে SCO নাম দেওয়া হয়।

SCO-এর প্রধান উদ্দেশ্য

SCO-এর প্রধান উদ্দেশ্য হল আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। সংগঠনটি তার প্রাথমিক বছরগুলোতে জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু পরে এর মনোযোগ সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং চরমপন্থার মতো হুমকির মোকাবিলায় কেন্দ্রীভূত হয়। যদিও SCO-এর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার কৌশলগুলি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ভারত কীভাবে সদস্য হলো?

ভারত ২০০৫ সাল থেকে SCO-এর পর্যবেক্ষক (Observer) হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়া হয়। ভারতের জন্য এটি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ ছিল, যা তাকে মধ্য এশিয়া এবং ইউরেশীয় দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সুযোগ করে দেয়। ভারত সবসময় SCO মঞ্চকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে ব্যবহার করেছে।

ভারতের ভূমিকা ও অগ্রাধিকার

ভারত SCO-তে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অংশীদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেয়। ভারত এই মঞ্চ ব্যবহার করে কেবল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করে না, বরং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি, বাণিজ্য, সংযোগ এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানকে উৎসাহিত করতেও আগ্রহী।

SCO-এর নতুন সদস্য

SCO ক্রমাগত সম্প্রসারণের দিকে এগিয়ে চলেছে। ইরান ২০২৩ সালে সংগঠনে যোগ দেয়, যেখানে বেলারুশ ২০২৪ সালে এর সদস্য হয়। এটি স্পষ্ট যে SCO এখন কেবল নিরাপত্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংগঠনে পরিণত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

Leave a comment