বিখ্যাত অনুপ্রেরণামূলক গল্প: শহরের ইঁদুর ও গ্রামের ইঁদুর

🎧 Listen in Audio
0:00

উপস্থাপিত করা হচ্ছে বিখ্যাত এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প, শহরের ইঁদুর এবং গ্রামের ইঁদুর

এক ছিল দুই বন্ধু ইঁদুর। একটি শহরে থাকত এবং অন্যটি গ্রামে, তবে তারা একে অপরের খবর আনা-যাওয়া করা ইঁদুরের মাধ্যমে নিত। একদিন শহরের ইঁদুরের তার বন্ধুর সাথে দেখা করার ইচ্ছা হল, তাই সে তার বন্ধুকে গ্রামে আসার কথা জানায়। গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুর আসার খবর শুনে খুব খুশি হয়। সে তার বন্ধুকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তারপর সেই দিনটি আসে যখন শহরের ইঁদুর তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গ্রামে পৌঁছায়। গ্রামের ইঁদুর খুব আনন্দের সাথে তার বন্ধুকে স্বাগত জানায়। দুজনে অনেক গল্প করে। গল্পের মাঝে গ্রামের ইঁদুর বলে ‘শহরে তো অনেক দূষণ থাকে, তাই না? কিন্তু এখানে গ্রামের পরিবেশ বেশ শুদ্ধ।’

এইসব কথা বলার পর দুজনেরই খিদে পায়। গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে খুব আদর করে ফল, রুটি এবং ডাল-ভাত খেতে দেয়। দুজনে একসাথে বসে খুব আনন্দের সাথে খাবার উপভোগ করে। খাওয়ার পর দুজনে গ্রাম ঘুরতে বের হয়। তারা গ্রামের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করে। গ্রামের সবুজ গাছপালা দেখানোর সময় গ্রামের ইঁদুর শহরের ইঁদুরকে জিজ্ঞাসা করে, ‘শহরেও কি এরকম সবুজ দৃশ্য আছে?’ শহরের ইঁদুর এর কোনো উত্তর দেয় না, কিন্তু তার বন্ধুকে শহরে আসার আমন্ত্রণ জানায়। সারাদিন ঘোরার পর দুই ইঁদুর রাতে খাবার খেতে বসে। গ্রামের ইঁদুর আবার তার বন্ধুকে ফল এবং শস্য খেতে দেয়। দুজনে খেয়ে ঘুমোতে যায়।

পরের দিন সকালে গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে নাস্তায় আবার সেই ফল এবং শস্য দেয়। এটা দেখে শহরের ইঁদুর বিরক্ত হয়ে যায়। সে বিরক্ত হয়ে গ্রামের ইঁদুরকে বলে, ‘তোমাদের এখানে কি রোজ সব সময় একই খাবার খাওয়া হয়? এছাড়া আর কিছু খাবার নেই?’ শহরের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলে ‘চল এখনই শহরে যাই। সেখানে দেখবি কত আরামের জীবন আর কত রকমের খাবার আছে।’ গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুর সাথে যেতে রাজি হয়ে যায়। দুজনেই শহরের দিকে রওনা দেয়। শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। শহরের ইঁদুর একটি বড় বাড়ির গর্তে থাকত। এত বড় বাড়ি দেখে গ্রামের ইঁদুর অবাক হয়ে যায়। তারপর সে দেখে টেবিলে নানা ধরনের খাবার রাখা আছে। দুই ইঁদুর খেতে বসে যায়।

গ্রামের ইঁদুর পনিরের টুকরো চেখে দেখে। তার পনির খুব ভালো লাগে এবং সে সঙ্গে সঙ্গে তা খেয়ে ফেলে। তারা সবে খাচ্ছিল, এমন সময় তারা একটি বিড়ালের ডাক শুনতে পায়। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে তাড়াতাড়ি গর্তে লুকোতে বলে। সে বলে, ‘বন্ধু তাড়াতাড়ি গর্তে লুকো, না হলে বিড়াল আমাদের শিকার করে নেবে।’ তারা দৌড়ে গর্তে লুকিয়ে যায়। গ্রামের ইঁদুর খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর বিড়ালটি সেখান থেকে চলে যায় এবং তারা দুজনে বাইরে আসে। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে সাহস দিয়ে বলে ‘আর কোনো ভয় নেই বন্ধু, বিড়াল চলে গেছে। এসব তো জীবনের অংশ, সাধারণ ব্যাপার।’ এর পর তারা আবার খাওয়া শুরু করে। গ্রামের ইঁদুর সবে রুটি খাওয়া শুরু করেছে, এমন সময় দরজায় আওয়াজ হয় এবং একটি ছেলে একটি বড় কুকুর নিয়ে ভিতরে আসে।

গ্রামের ইঁদুরের ভয় আরও বেড়ে যায় এবং সে শহরের ইঁদুরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে প্রথমে গর্তে লুকোতে বলে। তারপর গর্তে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রামের ইঁদুরকে জানায় যে, কুকুরটি বাড়ির মালিকের, যে সবসময় এখানে থাকে। কুকুরটি চলে যাওয়ার পর দুই ইঁদুর গর্ত থেকে বাইরে আসে। এবার গ্রামের ইঁদুর আগের চেয়েও বেশি ভয় পেয়েছিল। শহরের ইঁদুর গ্রামের ইঁদুরকে কিছু বলার আগেই গ্রামের ইঁদুর যাওয়ার অনুমতি চায়। গ্রামের ইঁদুর তার বন্ধুকে বলে, ‘তোমার এই সুস্বাদু খাবারের জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ, কিন্তু আমি এখানে রোজ নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে থাকতে পারব না বন্ধু। সুস্বাদু খাবার নিজের জায়গায়, আর মূল্যবান জীবন নিজের জায়গায়।’ এই কথা বলে গ্রামের ইঁদুর শহর ছেড়ে গ্রামের দিকে চলে যায়। তারপর যখন সে গ্রামে পৌঁছায়, তখন সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

এই গল্প থেকে এটাই শিক্ষা পাওয়া যায় যে - বিপদে ভরা আরামের জীবনে কখনো সুখ-শান্তি পাওয়া যায় না। সাধারণ, কিন্তু নিরাপদ জীবনই সুখী জীবন।

আমাদের প্রচেষ্টা হল, এভাবেই আমরা আপনাদের সকলের জন্য ভারতের অমূল্য রত্ন, যা সাহিত্য, শিল্পকলা ও গল্পে বিদ্যমান, তা সরল ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। এই ধরনের প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনীর জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

 

Leave a comment