সন্ত গাডগে মহারাজের পুণ্যতিথি ২০শে ডিসেম্বর পালিত হয়। তিনি ছিলেন একজন মহান সমাজ সংস্কারক এবং সন্ত, যিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কল্যাণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। তাঁর অবদান বিশেষ করে ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারে ছিল এবং তিনি তাঁর সাধনা, ভক্তি ও সমাজ সেবার জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত ছিলেন।
সন্ত গাডগে মহারাজের পুরো নাম ছিল দেবুজী জিংরাজি জানোরকর। মহারাষ্ট্রের পবিত্র ভূমিতে জন্ম নেওয়া গাডগে মহারাজ তাঁর পুরো জীবন সমাজ সংস্কার, পরিচ্ছন্নতা এবং শিক্ষার প্রচারে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর চিন্তা ও কাজ আজও সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
সাধারণ পরিবার থেকে সমাজ সংস্কারক পর্যন্ত যাত্রা
গাডগে মহারাজের জন্ম একটি সাধারণ কৃষক পরিবারে। তাঁর পিতার নাম ছিল জিংরাজি রানোজী জানোরকর এবং মায়ের নাম সখুবাই জিংরাজি জানোরকর। শৈশব থেকেই তিনি সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার, অশুচিতা এবং জাতিগত বৈষম্য খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। এই সমস্যাগুলি তাঁর হৃদয়কে এতটাই প্রভাবিত করেছিল যে তিনি তাঁর পুরো জীবন এইগুলি নির্মূল করার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।
সমাজ সংস্কার ও কীর্তনের মাধ্যম
গাডগে মহারাজ সমাজ সংস্কারের জন্য কীর্তন কে মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর কীর্তন কেবল ধর্মীয় গান ছিল না, বরং এটি ছিল মানুষকে তাদের অজ্ঞতা ও ত্রুটি সম্পর্কে জানানোর একটি মাধ্যম। তিনি বলতেন:
"চুরি করো না।"
"মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিও না।"
"বদ অভ্যাসে লিপ্ত হইও না।"
"ভগবান পাথরের মধ্যে নেই, মানুষের মধ্যে আছে।"
তাঁর বাণী সহজ, সরল এবং গ্রামীণ ভাষায় হত, যার কারণে সব শ্রেণির মানুষ সহজেই তাঁকে বুঝতে পারত।
পরিচ্ছন্নতা ও শিক্ষার বার্তা
গাডগে বাবা সবসময় একটি ঝাঁটা ও একটি ঘটি সঙ্গে রাখতেন। তিনি যে গ্রামেই যেতেন, সেখানকার রাস্তাঘাট ও সর্বজনীন স্থান পরিষ্কার করতেন। তিনি বলতেন পরিচ্ছন্নতা এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা সমাজকে সচেতন করা যেতে পারে। তিনি গরিব ও দলিত শিশুদের জন্য স্কুল, অনাথ আশ্রম ও ধর্মশালা স্থাপন করেন।
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন
গাডগে মহারাজ কুসংস্কার, মূর্তিপূজা ও অবাঞ্ছিত প্রথার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি বলতেন:
"মন্দিরে যেও না।"
"মূর্তিপূজা করো না।"
"মহাজনদের চক্করে পড়ো না।"
"পোথি-পুরাণ, মন্ত্র-তন্ত্রে বিশ্বাস করো না।"
তিনি মনে করতেন, মানুষের সেবাতেই ঈশ্বরের প্রকৃত পূজা।
গরিব ও দলিতদের মসিহা
গাডগে বাবা তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গরিব, দলিত, অনাথ ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই মানুষরাই প্রকৃত দেবতা। তিনি বলেছেন:
"দুঃখী, দরিদ্র ও অসহায়রাই আমার ভগবান।"
অনুপ্রেরণামূলক জীবনযাপন
গাডগে মহারাজের সরলতা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। তিনি ছেঁড়া-পুরোনো কাপড় পরতেন, এক কানে একটি মাথার খুলি ও অন্য কানে একটি কাঁচের চুড়ি পরতেন। তিনি সবসময় বলতেন:
"আমি কারও গুরু নই, আমার কোনো শিষ্য নেই।"
সমাজের জন্য অমূল্য অবদান
গাডগে বাবা:
অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।
ধর্মশালা নির্মাণ করেন।
গরিব শিশুদের জন্য স্কুল খোলেন।
পরিচ্ছন্নতা ও শিক্ষার গুরুত্ব মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।
সন্ত তুকারাম মহারাজের অনুসারী
গাডগে বাবা সন্ত তুকারাম মহারাজকে তাঁর গুরু মানতেন। তাঁর কীর্তনে তুকারাম মহারাজের অভঙ্গগুলির উল্লেখ থাকত। তিনি মানুষকে বোঝাতে সফল হয়েছিলেন যে ধর্মের আসল অর্থ মানব সেবা।
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রেরণাদায়ক বার্তা
গাডগে বাবা সবসময় বলতেন যে জাতিগত বৈষম্য ও অস্পৃশ্যতার অবসান হওয়া উচিত। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে দেখিয়েছেন যে সমাজে প্রতিটি মানুষ সমান।
আজও প্রাসঙ্গিক চিন্তা
গাডগে মহারাজের জীবন এবং তাঁর চিন্তা আজও প্রাসঙ্গিক। তাঁর দেওয়া পরিচ্ছন্নতা, শিক্ষা ও মানবতার বার্তা অনুসরণ করে আমরা একটি উন্নত সমাজ গঠন করতে পারি।
```