মাটির খেলনার গল্প: অনুপ্রেরণামূলক এক যাত্রা

🎧 Listen in Audio
0:00

মাটির খেলনার গল্প, বিখ্যাত অমূল্য গল্প subkuz.com-এ!

উপস্থাপিত, বিখ্যাত এবং প্রেরণাদায়ক গল্প, মাটির খেলনা

অনেক দিন আগে চুই গ্রামে এক কুমোর থাকত। সে প্রতিদিন মাটির হাঁড়ি ও খেলনা তৈরি করে শহরে বিক্রি করতে যেত। এভাবেই তার জীবন কোনোমতে চলছিল। প্রতিদিনের অভাব-অনটনে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন তার স্ত্রী তাকে বলল, মাটির পাত্র তৈরি করে বিক্রি করা বন্ধ করো। এবার সরাসরি শহরে যাও এবং কোনো চাকরির সন্ধান করো, যাতে আমরা কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারি। কুমোরেরও স্ত্রীর কথা সঠিক মনে হলো। সে নিজেও নিজের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিল। সে শহরে গেল এবং সেখানে গিয়ে চাকরি করতে লাগল। যদিও সে চাকরি করত, কিন্তু তার মন মাটির খেলনা ও পাত্র তৈরির দিকে পড়ে থাকত। তবুও সে মনমরা হয়ে চুপচাপ নিজের কাজ করে যেতে লাগল।

এভাবেই চাকরি করতে করতে অনেক দিন কেটে গেল। সে যেখানে কাজ করত, তার মালিক একদিন তাকে তার ছেলের জন্মদিনে ডাকলেন। জন্মদিনের উপহার হিসেবে সবাই দামি দামি উপহার কিনে এনেছিল। কুমোর ভাবল, আমরা গরিবদের উপহার কে আর দেখবে, তাই আমি মালিকের ছেলেকে একটা মাটির খেলনা বানিয়ে দিই। এই ভেবে সে মালিকের ছেলের জন্য একটি মাটির খেলনা বানালো এবং উপহার হিসেবে দিয়ে দিল। যখন জন্মদিনের ভোজ শেষ হলো, তখন মালিকের ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা অন্য বাচ্চাদের মাটির খেলনাটি খুব পছন্দ হলো। সেখানে উপস্থিত সব বাচ্চাই একইরকম মাটির খেলনা নেওয়ার জন্য জেদ করতে লাগল।

বাচ্চাদের জেদ দেখে ব্যবসায়ীর ভোজে উপস্থিত সবাই সেই মাটির খেলনা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। সবার মুখে একই প্রশ্ন ছিল যে, এই চমৎকার খেলনাটি কে নিয়ে এসেছে? তখন সেখানে উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন বলল যে, তাদের চাকর এই খেলনাটি নিয়ে এসেছে। এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। তারপর তারা সবাই কুমোরকে সেই খেলনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে লাগল। সবাই একসুরে বলল, তুমি এত দামি এবং সুন্দর খেলনা কোথা থেকে এবং কীভাবে কিনেছ? আমাদেরও বলো, এখন আমাদের বাচ্চারাও এই খেলনাটি পাওয়ার জন্য জেদ করছে। কুমোর তাদের বলল, এটা কোনো দামি খেলনা নয়, বরং এটি আমি নিজেই নিজের হাতে তৈরি করেছি। আমি আমার গ্রামে আগে এটাই বানিয়ে বিক্রি করতাম। এই কাজে আয় খুব কম হতো, তাই আমাকে এই কাজ ছেড়ে শহরে আসতে হয়েছে এবং এখন এই চাকরি করছি।

কুমোরের মালিক এই সব শুনে খুব অবাক হলেন। তিনি কুমোরকে বললেন, ‘তুমি কি এখানে উপস্থিত প্রতিটি বাচ্চার জন্য একইরকম খেলনা বানাতে পারবে?’ কুমোর খুশি হয়ে বলল, ‘হ্যাঁ মালিক, এটা তো আমার কাজ। আমার মাটির খেলনা বানাতে খুব ভালো লাগে। আমি এই বাচ্চাদের এখনই খেলনা বানিয়ে দিতে পারি।’ এই কথা বলার পর কুমোর মাটি জোগাড় করল এবং খেলনা বানাতে লেগে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই রংবেরঙের অনেকগুলো মাটির খেলনা তৈরি হয়ে গেল। কুমোরের এই কারুকার্য দেখে তার মালিক অবাক হওয়ার সাথে সাথে বেশ খুশিও হলেন। তিনি মনে মনে মাটির খেলনার ব্যবসা করার কথা ভাবতে লাগলেন। তার মনে হলো যে, তিনি কুমোরকে দিয়ে মাটির খেলনা বানাবেন এবং তারপর নিজে সেগুলি বিক্রি করবেন। তিনি এটাই ভেবে কুমোরকে মাটির খেলনা বানানোর কাজ দিলেন।

কুমোরের মালিক তার মাটির খেলনা বানানোর দক্ষতায় খুশি ছিলেন, তাই সেই ব্যবসায়ী কুমোরকে থাকার জন্য ভালো ঘর এবং মোটা বেতন দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিলেন। কুমোর তার মালিকের এই প্রস্তাবে খুব খুশি হয়েছিল। সে তৎক্ষণাৎ তার গ্রামে গেল এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকার জন্য নিয়ে এল। খাবার অভাব এবং অর্থের কষ্টে জর্জরিত কুমোরের পরিবার আরামে ব্যবসায়ীর দেওয়া বাড়িতে থাকতে লাগল। কুমোর কর্তৃক তৈরি খেলনা থেকে সেই ব্যবসায়ীর অনেক লাভও হয়েছিল। এভাবে সবাই আনন্দ ও খুশির সাথে জীবন কাটাতে লাগল।

এই গল্প থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে – দক্ষতা কখনো মানুষের সঙ্গ ছাড়ে না। যদি কেউ কোনো কাজে পারদর্শী হয়, তবে তার সেই দক্ষতা তাকে কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে পারে।

বন্ধুরা, subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত এবং বিশ্ব থেকে সম্পর্কিত সব ধরনের গল্প এবং তথ্য সরবরাহ করি। আমাদের প্রচেষ্টা হলো, এভাবেই আকর্ষণীয় এবং প্রেরণামূলক গল্পগুলি আপনাদের কাছে সহজ ভাষায় পৌঁছে দেওয়া। এইরকমই প্রেরণাদায়ক গল্প-কাহিনিগুলির জন্য পড়তে থাকুন subkuz.com

Leave a comment